দিনাজপুরে মুখরোচক হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে তুঁত ফল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুর
প্রকাশিত: ১১:৩৩ এএম, ০৩ এপ্রিল ২০২৪

উপকারী হলেও শস্যের তালিকায় না থাকা তুঁত ফল দিনাজপুরে মুখরোচক খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পুষ্টিগুণসম্পন্ন এ ফল দিনাজপুরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা কেজি দরে। আবার অনেকে তুঁত ফল বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।

সরেজমিনে জানা যায়, তুঁত বাগানে শিশু, নারী ও পুরুষ ফল সংগ্রহ করছেন। বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ফলের দোকানে এই ফল বিক্রি হচ্ছে। সদর উপজেলার পাশেই মাহুত পাড়ায় বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড দিনাজপুর অঞ্চলের রেশম বীজাগারের অধীনে ১২০ বিঘা জমিতে তুঁত বাগান আছে। এ জমিতে রেশম পোকার খাবারের জন্য তুঁত গাছের পাতা উৎপাদন হয়ে থাকে। কোনো নির্দেশনা না থাকায় তুঁত ফল সংগ্রহ করা হয় না। তবে গাছে যে তুঁত ফল হয়, সেগুলো পাকলে পাখিতে খায়। স্থানীয় ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও খায়।

কর্মকর্তারা বলছেন, বোর্ড থেকে এই তুঁত ফল সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা এলে অবশ্যই আমরা তা পালন করবো।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ফল নেই খাদ্যশস্যের তালিকায়। শহরের সবচেয়ে বড় বাজার বাহাদুর বাজারে বিভিন্ন ফলের দোকানে এটি বিক্রি হতে দেখা যায়। তুঁত ফল সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা কেজি কিনে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে।

দিনাজপুরে মুখরোচক হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে তুঁত ফল

তুঁত ফল সংগ্রহ করতে আসা শিশু আব্দুস সালাম মিরাজ জানায়, তুঁত ফল আগে তারা গাছ থেকে তুলে নিয়ে খেতো। এবার চাহিদা তৈরি হয়েছে। বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফল ব্যবসায়ীরা এই ফল ২০০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে বিক্রি করছেন।

জবাইদুর রহমান বলেন, ‘তুঁত বাগানের পাশেই মাহুত পাড়ায় আমার বাড়ি। প্রতিদিন ৩-৪ কেজি তুঁত ফল সংগ্রহ করি। পরে বাহাদুর বাজারের ফল ব্যবসায়ী লিটনের কাছে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। প্রতিদিন ৬০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি। আবার বাড়িতেও সবাই খায়। তুঁত ফল বিক্রি করেই বর্তমানে সংসার খরচ চলে যায়।’

আরও পড়ুন

বাহাদুর বাজারের দিনাজপুর ফল ভান্ডারের মালিক মো. লিটন হোসেন জানান, অনেকেই তুঁত ফল সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বিক্রি করছেন। আমরা ২০০ টাকা কেজি কিনে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি। বেশ চাহিদা আছে। অনেকে ব্ল্যাকবেরি মনে করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

ফেরি করে ফল বিক্রি করেন শাহিনুর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সকাল ও বিকালে তুঁত ফল সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বিক্রি করছেন অনেকে। আমরা তাদের কাছ থেকে কিনে ৩০-৪০ টাকা শ হিসেবে বিক্রি করছি। শিশুরা এ ফল কিনতে আগ্রহী বেশি।’

দিনাজপুরে মুখরোচক হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে তুঁত ফল

দিনাজপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসাপাতালের সহকারী মেডিকেল অফিসার (ইউনানি) ডা. শাহিন আলম বলেন, ‘এই ফলের আছে নানা গুণ। বাত-ব্যথা, পিত্তনাশক, বলকারক, দৃষ্টি ও শ্রবণ বৃদ্ধিকারক হিসেবে এর ব্যবহার ব্যাপক। পাশাপাশি মুখ ও গলার ঘাঁ, অজীর্ণ, জ্বর ও কৃমিনাশক হিসেবে তুঁত ফল ব্যবহার হয়ে থাকে।’

বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড দিনাজপুর অঞ্চলের রেশম বীজাগারের ফার্ম ম্যানেজার নুরুল হুদা বলেন, ‘আমাদের নার্সারিতে রেশম পোকার খাবারের জন্য তুঁত গাছের পাতা উৎপাদন করে থাকি। তুঁত ফল নিয়ে বোর্ড থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা নেই। একসময় বাংলাদেশেও তুঁত ফল সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের জেলি উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। উৎপাদন খরচ এবং প্রচলন না থাকায় ভোক্তাদের চাহিদা তেমন ছিল না বললেই চলে। পরে সেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে তুঁত গাছ মূলত রেশমের গুটি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়। দিনাজপুরেও একটি বাগান আছে। তুঁত ফল অনেকেই খেয়ে থাকেন। তবে এটি বাংলাদেশের খাদ্যশস্যের তালিকায় নেই।’

এমদাদুল হক মিলন/এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।