অনাবাদি ও পতিত জমি
পাবনায় সরিষা চাষ বেড়েছে ৭০ হাজার বিঘা
পাবনার চলনবিল অধ্যুষিত তিনটি উপজেলায় শস্যক্রম পরিবর্তন করায় পতিত জমিতে সরিষা চাষ হচ্ছে। কম সময়ে বাড়তি ফসল পেয়ে চাষিরা লাভবান হয়েছেন। এছাড়া মধু ও ভোজ্যতেলের উৎপাদনও বাড়ছে। কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
জানা গেছে, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর চলনবিল অধ্যুষিত তিনটি উপজেলা। এসব এলাকার বিলপাড়ের ও রাস্তার পাশের জমি দুটি ফসল চাষের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে থাকতো। এ বছর অনাবাদি বা পতিত জমিতে সরিষা চাষ করে চমক দেখিয়েছেন স্থানীয়রা। জমিতে কম সময়ের ফসল হিসেবে সরিষার উন্নত জাত চাষ করার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর পাবনার ৯টি উপজেলায় মোট ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এক বছরে সরিষা চাষ বেড়েছে ১০ হাজার হেক্টর বা ৭০ হাজার বিঘা। সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে অনেক প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে। কৃষকদের বিভিন্ন উপকরণ সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
• লবণাক্ত জমিতে সরিষা চাষে সফল হারুন গাজী
• মিরসরাইয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ সরিষা চাষ
স্থানীয়রা জানান, বিল এলাকার অধিকাংশ নিচু জমিতে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর বোরো ধান রোপণ করা হয়। এর আগে প্রায় দুই-তিন মাস জমি অনাবাদি বা পতিত থাকে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা পরামর্শ দেন জমি পতিত না রেখে কম সময়ে ঘরে তোলা যায় এমন ফসল চাষ করতে। এ ক্ষেত্রে চাষিদের উন্নত জাতের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। চাষিরা আমনের লোকসান পুষিয়ে নিতে ও বাড়তি ফসল হিসেবে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪, ১৮ এবং বিনা-৯ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। এ বছর ফরিদপুর উপজেলার এরশাদনগর থেকে ভাঙ্গুড়া উপজেলার কৈডাঙ্গা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় সরিষা চাষ হয়েছে।
চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া গ্রামের চাষি জাহাঙ্গীর আলম জানান, তারা আগে প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতেন। কৃষিকর্মীরা পরামর্শ দেন চাষাবাদ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে। বর্ষার পানি যাওয়ার পর বোরো ধান লাগানোর মধ্যবর্তী সময়ে অল্প দিনে ঘরে তোলা যায় এমন জাতের সরিষা চাষ করার কথা বলা হয়। এ পদ্ধতি অনুসরণ করায় তারা বেশ লাভবান হলেন।
ফরিদপুর উপজেলার সোনাহারা গ্রামের মোফাজ্জ্বল হোসেন জানান, সরিষা বপনের মাত্র ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যাচ্ছে। লাভবান হওয়ায় সরিষা চাষে বিপ্লব ঘটে গেছে।
আরও পড়ুন
• রাজবাড়ীতে বেড়েছে সরিষা চাষ, বাম্পার ফলনের আশা
• সরিষা ক্ষেতে মৌবক্স, আহরণ হবে দেড়শ টন মধু
ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন জাহান জানান, সরিষা চাষে বিলের প্রকৃতিতে এক নতুন রূপ যোগ হয়েছে। চলনবিল এলাকায় শস্যক্রম পরিবর্তন করে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ চলছে। ভালো উৎপাদনের আশা করছেন তারা।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. জামাল উদ্দীন জানান, কৃষি মন্ত্রণালয় সরিষা চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে। সেটি বাস্তবায়নে পাবনা জেলার কৃষি বিভাগের চেষ্টায় রোপা আমন ধান কাটার পর বিস্তীর্ণ বিলের জমিতে ও রাস্তার ধারের পতিত জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। ভালো ফলন ও দাম পেলে চাষিরা আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে।
আমিন ইসলাম জুয়েল/এসইউ/জেআইএম