১২ কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ
১ একর ৬০ শতক জমির টমেটো নষ্ট হলো
চলতি মৌসুমে কৃষক নাজিম উদ্দিন ৪০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেন। ফলন ভালো হলেও গত সপ্তাহে তার টমেটো ক্ষেতের কয়েকটি গাছের কাণ্ডে কালো ও লালচে রং দেখা যায়। এখন তার উৎপাদিত সব টমেটো ও টমেটো গাছ ঝলসে গেছে। এ কারণে আর্থিকভাবে চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি। শুধু নাজিম উদ্দিন নন, সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী ইউনিয়নের ইমামনগর গ্রামে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন আরও ১১ জন কৃষক। যাদের প্রত্যেকের বিক্রির উপযোগী টমেটো নষ্ট হয়ে গেছে।
ইমামনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, উপকূলের বিশাল জমিতে নানা রকম সবজির চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। তবে ওই গ্রামে টমেটোর চাষই হয়েছে বেশি। প্রায় টমেটো ক্ষেতের গাছগুলো মরে গেছে। গাছের পাতাগুলো কালচে আকার ধারণ করে ঝলসে গেছে, কাণ্ডগুলো নুইয়ে পড়েছে। বড় বড় টমেটো ঝরে ঝরে পড়ছে। টমেটোতেও দেখা গেছে কালচে রং। অধিকাংশ টমেটো পচে গেছে।
ইমামনগর গ্রামের কৃষক মো. সোহেল ২৮ শতক জমিতে করেছেন টমেটো চাষ। তার ক্ষেতেও একই রোগ দেখা দিয়েছে। পুরো টমেটো ক্ষেত ঝলসে গিয়ে পচে গেছে। বিক্রি দূরে থাক নিজেও খেতে পারেননি কষ্টে ফলানো ফসল। একই দশা মোস্তাকিম, রুবেল, নূর মিয়া এবং সুমনের।
ইমামনগর এলাকার সমুদ্রতীরে ১৬০ শতক জমিতে টমেটো চাষ করেছেন ১২ জন কৃষক। এছাড়া আরও অনেকে ছোট আকারে টমেটো চাষ করেছেন। এদের কারোরই টমেটো বিক্রি করা কিংবা খাওয়ার উপযোগী নেই। কালচে রঙের রোগ সব নষ্ট করে দিয়েছে। এতে চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।
আরও পড়ুন
• মিরসরাইয়ে ‘তাল বেগুন’ চাষে ভাগ্য বদল কৃষকদের
• পড়াশোনার পাশাপশি স্কোয়াস চাষে সফল মনজুরুল
কৃষক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার মোট খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ১ টাকারও টমেটো বিক্রি করতে পারছি না। কখনোই কৃষি বিভাগের লোকজনের পা পড়েনি এ এলাকায়। তারা আমাদের খোঁজ-খবরও নেননি।’
মো. রুবেল বলেন, ‘আমরা যদি পরামর্শ পেতাম তাহলেও বাঁচা সম্ভব হতো। কিন্তু সেই পরামর্শটুকুও দেননি। এই রোগ সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। এইবারই প্রথম এ রোগ আমাদের এলাকায় কৃষি ক্ষেতে দেখা দিয়েছে।’
কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলার ভাটিয়ারী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মাহবুব আলম এলাকায় কখনো যাননি। তিনি ন্যূনতম কোনো পরামর্শ দেননি কৃষকদের। এমনকি তাদের বিশাল অংশের সঙ্গে তার পরিচয়ও নেই। ঠিক কী কারণে টমেটোতে এ রোগ দেখা দিয়েছে, তা জানেন না কৃষকেরা। তবে কেউ বলছেন, কীটনাশকে কাজ হয়নি। আবার কেউ বলছেন, জাহাজ ভাঙা শিল্পের রাসায়নিকের প্রভাব।
ভাটিয়ারি ইউনিয়ন ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার দাবি, তিনি ইমামনগর এলাকায় রীতিমতো যাতায়াত করেন। তবে কোনো কৃষকের নাম বলতে পারেননি তিনি। দুয়েকজনের নাম বললেও সেটি সম্পূর্ণ ধারণাবশত।
আরও পড়ুন
• সীতাকুণ্ডে ১২ হাজার রঙিন ফুলকপি চাষ
• মিরসরাইয়ে স্কোয়াস চাষে সফল কৃষক মুসলিম
মাহবুব আলম বলেন, ‘অতিরিক্ত কুয়াশার কারণেই টমেটোতে রোগটি এসেছে। এ রোগের জন্য আমরা কৃষকদের একটি কীটনাশক সাজেস্ট করেছি। কিন্তু ইমামনগর গ্রামের কৃষকেরা যে কীটনাশক ব্যবহার করেছেন; সেগুলো নন ব্র্যান্ডের এবং তাদের ইচ্ছেমতো। তাই কীটনাশকে কাজ হয়নি।’
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘টমেটো গাছে ধরা পড়া রোগটির নাম নাবি ধসা রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে কয়েকদিনের মধ্যে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। যে ফসলের গাছে এ রোগ দেখা দেবে, সাথে সাথে তা কেটে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। অন্যথায় এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। চাষিদের ব্যবহৃত ওষুধটি এ রোগের নয়।’
কৃষি কর্মকর্তাদের ইমামনগরে পরিদর্শনে না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হয়তো সব কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। আমাদের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সব সময় আন্তরিকভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।’
এম মাঈন উদ্দিন/এসইউ/এমএস