সবজি চাষ ও ছাগল-ভেড়া পালনে ভাগ্য ফিরেছে তাদের

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মোংলা (বাগেরহাট)
প্রকাশিত: ০৯:০০ এএম, ১৭ নভেম্বর ২০২৩

মোংলার সোনাইলতলা ইউনিয়নের জয়খাঁ গ্রামের বিধবা রিনা মালাকার (৩৫)। একসময়ে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো তার। কিন্তু একটি ছাগল পেয়ে তার সেই অভাব ঘুঁচেছে। একই গ্রামের মাজেদা বেগমও ছাগল পেয়ে পরিবারের সমস্যাসহ ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ পুষিয়ে নিচ্ছেন। ১২০টি পরিবার ছাগল ও ভেড়া পালন করে তাদের সংসারের অভাব দূর করে যাচ্ছেন। এরমধ্যে সবজি চাষ করেও ভাগ্য বদলেছেন অনেকে। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা তাদের পাশে দাঁড়িয়ে উপকার করে যাচ্ছে।

জয়খাঁ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কেউ ছাগল পালন, কেউ ভেড়া পালন ও কেউ লবণাক্ত জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করছেন। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি ভালো ফলন হওয়ায় ন্যায্য মূল্যও পাচ্ছেন তারা। শিরিনা বেগম বলেন, ‘চারজনের সংসারে স্বামী অসুস্থ হয়ে ঘরে বসে আছেন। ফ্রেন্ডশিপ থেকে বিনা মূল্যে একটি ছাগল দেওয়া হয়। সেই ছাগল থেকে আরও তিনটি বাচ্চা হয়। ছাগলের দুধ বিক্রি ও দুটি ছাগল বিক্রি করে সংসারের অভাব কিছুটা দূর হয়েছে।’

in-(2).jpg

প্রশান্ত মন্ডল বলেন, ‘ফ্রেন্ডশিপ থেকে একটি ভেড়া দেওয়া হয়। সেটি থেকে ১৫টি বাচ্চা হয়। মেয়ের লেখাপড়া শেষে তাকে বিয়ে দিয়েছি।’

আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে আমন ধানের মাঠে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

তন্দ্রা মন্ডল বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বেড়িবাঁধটি অতিরিক্ত জোয়ারে ভেঙে যায়। ফলে এক একর কৃষিজমি নষ্ট হয়। পরে ফ্রেন্ডশিপ থেকে বিনা মূল্যে শীতকালীন সবজির বীজ দেওয়া হয়। সেই বীজ লাগিয়ে ভালো ফলন পেয়েছি। এখন স্বামীর একার আয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে না।’

লিটন মন্ডল বলেন, ‘শুধু সবজির বীজ নয়, আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি উৎপাদন ও কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ পেয়েছি। এরপর বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদন করে ২৪ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। এতে সংসারের ব্যয়ভার বহন করে কিছু টাকা সঞ্চয়ও করেছি।’

in-(2).jpg

সোনাইলতলা ইউপি চেয়ারম্যান নারজিনা বেগম বলেন, ‘উপকূলীয় সুবিধাবঞ্চিত জনপদে পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দীর্ঘদিন সমমর্যদাসহ পূর্ণ জীবনমান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফ্রেন্ডশিপ ট্রানজিশনাল ফান্ড কাজ করে যাচ্ছে। তাদের সহযোগিতায় এলাকার দরিদ্র মানুষেরা ছাগল-ভেড়া পালন ও সবজি চাষে পরিবারের আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন।’

আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে বাগানেই নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার পেঁপে

ফ্রেন্ডশিপ ট্রান্সজিশনাল ফান্ডের প্রজেক্ট ম্যানেজার জুয়েল হাসান বলেন, ‘ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গের সহায়তায় দরিদ্র পরিবারের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন ও স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। জয়খাঁ গ্রামের ১২০টি দরিদ্র পরিবারকে বিনা মূল্যে ছাগল, ভেড়া ও সবজির বীজ বিতরণ করা হয়েছে।’

মোংলা উপজেলার উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. ইউনুস আলী বলেন, ‘ফ্রেন্ডশিপ দরিদ্র পরিবারের মাঝে বিনা মূল্যে যেসব প্রাণী ও শীতকালীন সবজি দিচ্ছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসামূলক কাজ। তারা শুধু এসব দিচ্ছেন না, এসবের প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। ফলে পরিবারগুলোতে কম সময়ে বেশি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ জনপদের মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছে।’

আবু হোসাইন সুমন/এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।