পড়াশোনার পাশাপাশি মাশরুম চাষে সফল মোমিন

সাজেদুর আবেদীন শান্ত
সাজেদুর আবেদীন শান্ত সাজেদুর আবেদীন শান্ত , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১২:৪২ পিএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

প্রত্যন্ত গ্রামের স্নাতক পড়ুয়া আব্দুল মোমিন (২৩)। অভাবের সংসারে হাল ধরতে এবং নিজে কিছু করার জন্য মাশরুম চাষকে বেছে নেন। চাকরির পেছনে না ছোটা এ তরুণ বছর ঘুরতেই সফলতার দেখা পান। তবে খুব সহজে এ সফলতা আসেনি। এজন্য করতে হয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। বর্তমানে তিনি মাশরুম বিক্রি করে মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা আয় করেন।

তরুণ এ উদ্যোক্তার বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ ব্যাপারীর ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে আব্দুল মোমিনই বড়। তিনি সোনাতলা সরকারি নাজির আখতার কলেজে বাংলা বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। আব্দুল মোমিন বলেন, ‘পড়াশোনা করে চাকরি করবো এ অপেক্ষায় না থেকে নিজে কিছু একটা করার চেষ্টা করি। প্রথমে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত মাথায় নিই কিন্তু কোনো কিছুতেই স্থির হতে পারছিলাম না। পরে সিদ্ধান্ত নিই মাশরুম চাষ করবো।’

মাগুরা মাশরুম সেন্টারে চারদিনের একটি প্রশিক্ষণ নেন মোমিন। পরে দেশের প্রায় ২২টি মাশরুম সেন্টার ভিজিট করেন। তারপর সেখান থেকে সাভারে চলে আসেন। সাভার থেকে নিজের টিউশনি করে জমানো ১০ হাজার টাকা এবং পরিবারের ২০ হাজার টাকা দিয়ে মাশরুম চাষের সরঞ্জাম কিনে গ্রামে ফেরেন।

আরও পড়ুন: পাহাড়ে পরীক্ষামূলক রাম্বুটান চাষে সফল নাজমুল

পরিবার প্রথমদিকে মোমিনের এ কাজে সাড়া না দিলেও পরে বুঝতে পারেন। মামা আতোয়ার হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে পারিবারিক বাঁশ ঝাড়ের নিচে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাশরুম চাষের জন্য ঘর তোলেন। মাশরুমের স্পন তৈরিসহ তার প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। তিনি আশা করছেন, এ মৌসুমেই প্রায় ২ লাখ টাকার মাশরুম বিক্রি করতে পারবেন।

আব্দুল মোমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটি পলিব্যাগে কাঠের বা ধানের গুঁড়া, গমের ভুষি, ধানের খড়, পানি, পিপি, ডেক, তুলা ও মাশরুমের মাথা দিতে হয়। বীজগুলো ট্রান্সফার করার ২০-৩০ দিনের মাথায় এটি রান হয়ে যায়। প্যাকেট কেটে ৫ থেকে ১০ দিন রাখতে হয়। এর মধ্যেই ফলন শুরু হয়। একটি স্পন থেকে ৩ মাসের মধ্যে চারবার ফলন পাওয়া যায়। ব্যাগগুলো ফেলে না দিয়ে জমিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।’

মোমিনের গড়ে তোলা ‘শালিখা এগ্রো অ্যান্ড মাশরুম সেন্টারে’ অবসর সময়ে কাজ করেন এলাকার কয়েকজন নারী। ফলে তারাও স্বাবলম্বী হতে পেরেছেন। বর্তমানে মাশরুম সেন্টারে ঋষি ও ওয়েস্টার ধরনের মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিদিন তিনি ১২-১৫ কেজির মতো মাশরুম তোলেন। তা ২২০-২৫০ টাকা কেজি দরে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন।

আরও পড়ুন: পড়াশোনার পাশাপাশি ড্রাগন চাষে সফল তানভীর

সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘মোমিন একদিন অফিসে এসে উদ্যোগের কথা জানান এবং সহযোগিতা চান। তরুণদের এ ধরনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তাই মাশরুম সেন্টার দেখতে আসি। উপজেলা কৃষি অফিস তার সার্বিক খোঁজ-খবর রাখছে এবং নানা ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।’

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।