শ্রাবণ মাসের কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি
এসময় পাকে আউশ ধান। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে পাকা আউশ ধান কেটে মাড়াই-ঝাড়াই করে শুকিয়ে বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হয়। বীজ ধানের জন্য লাগসই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে ভালো বীজ পাওয়া যাবে।
আমন ধান
শ্রাবণ মাস আমন ধানের চারা রোপণের ভরা মৌসুম। চারার বয়স ৩০-৪০ দিন হলে জমিতে রোপণ করতে হবে। রোপা আমনের অনুকূল পরিবেশ উপযোগী উন্নত জাত, যেমন- বিআর১০, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৩২, ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৩৯, ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭২, ব্রি ধান৭৫, ব্রি ধান৭৯, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮৭, ব্রি ধান৯০ ব্রি ধান৯১, ব্রি ধান৩, ব্রি ধান৪, ব্রি ধান৯৫, ব্রি ধান ১০৩, ব্রি হাইব্রিড ধান৪, ব্রি হাইব্রিড ধান৬, বিনা ধান৭, বিনা ধান১১, বিনা ধান১৬, বিনা ধান ১৭, বিনা ধান ২২, বিনা ধান২৩ প্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী উন্নত জাত চাষ করতে পারেন।
আরও পড়ুন: ফলন কম হলেও দাম পেয়ে লাভবান চাষিরা
খরাপ্রবণ এলাকাতে নাবি রোপার পরিবর্তে যথাসম্ভব আগাম রোপা আমনের (ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৯, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬৬, ব্রি ধান৭১ এসব), লবণাক্ত ও লবণাক্ত জোয়ারভাটা অঞ্চলে ব্রি ধান৭৩, ব্রি ধান৭৮, অলবণাক্ত জোয়ারভাটা অঞ্চলে ব্রি ধান৭৬, ব্রি ধান৭৭ এবং জলাবদ্ধতা সহনশীল জাত ব্রি ধান৭৯ চাষ করা যেতে পারে।
চারা রোপণের ১২-১৫ দিন পর প্রথমবার ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এর ১৫-২০ দিন পর দ্বিতীয়বার এবং তার ১৫-২০ দিন পর তৃতীয়বার ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ধানের ক্ষেতে বাঁশের কঞ্চি বা ডাল পুঁতে দিতে হবে যাতে পাখি বসতে পারে এবং পাখি পোকা ধরে খেতে পারে।
পাট
অর্ধেকের বেশি পাট গাছে ফুল এলে পাট কাটতে হবে। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং ফলনও ভালো পাওয়া যায়। পাট পচানোর জন্য আঁটি বেঁধে পাতা ঝরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং জাগ দিতে হবে। ইতোমধ্যে পাট পড়ে গেলে আঁশ ছাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাটের আঁশ ছাড়িয়ে ভালো করে ধোয়ার পর ৪০ লিটার পানিতে এক কেজি তেঁতুল গুলে তাতে আঁশ ৫-১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে, এতে উজ্জ্বল বর্ণের পাট পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: কৃষি উদ্যোক্তা জেসমিনের মাসে আয় ৫০ হাজার
যেখানে জাগ দেয়ার পানির অভাব সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানো যায়। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং পচন সময় কমে যায়। বন্যার কারণে অনেক সময় সরাসরি পাট গাছ থেকে বীজ উৎপাদন সম্ভব হয় না। তাই পাটের ডগা বা কাণ্ড কেটে উঁচু জায়গায় লাগিয়ে তা থেকে খুব সহজেই বীজ উৎপাদন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাটের ভালো বীজ পেতে হলে দেশী পাট বীজ এ মাসে বপন করতে হবে। সারিতে বপন করলে প্রতি শতাংশ জমিতে ১৬ গ্রাম তোষা এবং ২০ গ্রাম দেশি বীজ বপন করতে হবে। আর ছিটিয়ে বপন করলে শতাংশে ২০ গ্রাম তোষ এবং ২৪ গ্রাম দেশি পাটের বীজ বপন করতে হবে।
শাক-সবজি
বর্ষাকালে শুকনো জায়গার অভাব হলে টব, মাটির চাড়ি, কাঠের বাক্স এমনকি পলিথিন ব্যাগে সবজির চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ মাসে সবজি বাগানে করণীয় কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে মাদায় মাটি দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার, গাছের গোঁড়ায় পানি জমতে না দেওয়া, মরা বা হলুদ পাতা কেটে ফেলা, প্রয়োজনে সারের উপরিপ্রয়োগ করা।
আরও পড়ুন: বেকারত্ব ঘুচিয়ে আব্দুল মান্নান এখন সফল খামারি
লতাজাতীয় গাছের বৃদ্ধি বেশি হলে ১৫-২০ শতাংশ পাতা ও লতা কেটে দিলে তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল ধরবে। কুমড়া জাতীয় সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন করলে অধিক ফলনে দারুণভাবে সহায়তা করবে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোরে হাত পরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে। গত মাসে শিম ও লাউয়ের চারা রোপণের ব্যবস্থা না নিয়ে থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। শিম ও লাউয়ের বীজ পচা কচুরিপানার স্তূপে বপন করে মূল মাদায় স্থানান্তর করতে পারেন। মাদার দূরত্ব হবে ৩ ফুট ১ ফুট চওড়া ও ১ ফুট গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে।
সবজি ক্ষেতে বালাই আক্রমণ দেখা দিলে জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা যেমন- ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। পাতায় লাগপড়া রোগ দেখা দিলে অনুমোদিত মাত্রায় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। বর্ষার সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতকালীন শাক-সবজি চাষের প্রস্তুতি নিতে হবে। গ্রীষ্মকালীন টমেটো মাঠে থাকলে গাছ বেঁধে দিতে হবে। এ মাসে নারী পাট বীজ ফসলের মঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে সবজি চাষ করা যেতে পারে।
গাছপালা
এখন সারাদেশে গাছ রোপণের কাজ চলছে। ফলদ, বনজ এবং ওষুধি বৃক্ষজাতীয় গাছের চারা বা কলম রোপণের ব্যবস্থা নিতে হবে। উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে একহাত চওড়া এবং একহাত গভীর গর্ত করে অর্ধেক মাটি এবং অর্ধেক জৈবসারের সঙ্গে ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ১০০ গ্রাম এমওপি ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। সার ও মাটির এ মিশ্রণ গর্ত ভরাট করে রেখে দিতে হবে। ১০ দিন পর গর্তে চারা বা কলম রোপণ করতে হবে। ভালো জাতের মানসম্পন্ন চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পর গোঁড়ার মাটি তুলে দিতে হবে এবং খুঁটির সঙ্গে সোজা করে বেঁধে দিতে হবে। গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষার জন্য রোপণ করা চারার চারপাশে বেড়া দিতে হবে।
এনএইচ/জেডএইচ/জেআইএম