শাপলা ও পদ্মফুল চাষে মাসে আয় ৫০ হাজার টাকা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মেহেরপুর
প্রকাশিত: ০৮:১৮ এএম, ১০ জুন ২০২৩

মেহেরপুরের শৌখিন খামারি সাইফুজ্জামান রিজন পড়াশোনার পাশাপাশি ফুল চাষ করে মাসে আয় করছেন ৫০ হাজার টাকা। তার সংগ্রহশালায় ৫০ রকমের শাপলা আর ৪০ রকমের পদ্মফুল আছে। সদর উপজেলার শোলমারি গ্রামের এ তরুণ বাণিজ্যিকভাবে বিক্রিতেও সাড়া পাচ্ছেন। তিনি বাড়িতে লাল, সাদা, হলুদ, বেগুনি, গোলাপি প্রভৃতি রঙের শাপলা ও পদ্মফুল চাষ করছেন।

মেহেরপুর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে স্কুলশিক্ষক আবুল হাশেমের ছেলে সাইফুজ্জামান রিজন। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়িতে ফুলের চাষ করছেন। কয়েক বছর আগে শখের বশে জলাশয় ও খাল-বিল থেকে কয়েক জাতের শাপলা ও পদ্মফুল নিয়ে বাড়ির ছাদে সংরক্ষণ করেন। সেখানে ফুল ফুটলে সৌন্দর্য বেড়ে যায়। তখন থেকেই শুরু হয় শাপলা ও পদ্মফুলের চারা সংগ্রহের কাজ। এ পর্যন্ত ৯০ প্রজাতির শাপলা ও পদ্মফুলের টব সাজিয়েছেন। টবের পানিতে একই সঙ্গে চাষ করছেন মার্কারি বাহারি প্রজাতির শৌখিন মাছ।

সাইফুজ্জামান রিজন বলেন, ‘শুরুটা ছিল শখের বশে মাত্র ২৫০ টাকা দিয়ে। একটি-দুটি করে বিভিন্ন রঙের শাপলা সংগ্রহ করতে থাকি। এখন আমার সংগ্রহশালায় শাপলা-পদ্মফুলের সমাহার। প্রতিটি ফুলের আলাদা আলাদা নাম। বিভিন্ন দেশ থেকে আনা ফুলগুলোর এরই মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু হয়েছে। শাপলা আর পদ্মের গাছ বিক্রি করে মাসে আয় হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। বিভিন্ন রঙের শাপলা আর পদ্ম উদ্ভাবনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

আরও পড়ুন: সবুজ মাঠে সূর্যমুখীর হলুদ হাসি

রিজনের বোন সাখিয়া তাসনিম বলেন, ‘বাড়িতে সংগ্রহশালা করায় আলাদা কোনো সময় দিতে হয় না রিজনকে। অবসরে হালকা পরিচর্যা করলেই হয়। বিকেলে ফুলের পরিচর্যা করতে আমার ভালো লাগে। ফুলগুলো যখন ফোটে; তখন খুবই ভালো লাগে। শাপলা আর পদ্মের এই সমারোহ দেখতে অনেকেই আসেন আমাদের বাড়িতে।’

স্কুলছাত্র রাকিবুজ্জামান বলেন, ‘রিজনের বাগানে নান প্রজাতির শাপলা দেখে মুগ্ধ হই। তিনি এগুলো সংগ্রহ না করলে হয়তো জানতেই পারতাম না, আমাদের দেশে এত সুন্দর ও বাহারি শাপলা ও পদ্মফুল জন্মে।’

শোলমারি গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রিজন শুধু তার বাড়ির উঠান আর ছাদেরই সৌন্দর্য বাড়ায়নি বরং আয়ের উৎস খুঁজে পেয়েছে। গ্রামটিকেই ফুলে ফুলে সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। রিজনের ছাদ বাগানের টবে পানি দেওয়া, গাছের পরিচর্যাসহ নানা ধরনের সহযোগিতা করেন তার মা ও স্কুলপড়ুয়া ছোটবোন।’

আরও পড়ুন: ভোলায় রেকর্ড পরিমাণ সূর্যমুখী চাষ

গাংনী ডিগ্রি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের সাবেক শিক্ষক এনামুল আজীম বলেন, ‘একসময় দেশের স্থির জলাশয়ে বিভিন্ন রকম শাপলা আর পদ্মের দেখা মিলতো। বর্তমান প্রজন্ম দেখেনি সেসব ফুল। ছাদ বাগানে এমন জলজ উদ্ভিদের সংগ্রহ নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে। রিজনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’

মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সাইফুজ্জামান রিজন তার মেধা আর বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন। তার ছাদ বাগানে ৫০ প্রজাতির শাপলা আর ৪০ প্রজাতির পদ্মফুল আছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কয়েকবার গিয়েছি। আমাদের পরামর্শ, সাহায্য ও সহযোগিতা তার জন্য অব্যাহত থাকবে।’

আসিফ ইকবাল/এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।