গাছ যেভাবে মানুষের উপকার করে
গাছ মানুষের বন্ধু। গাছ নানাভাবে আমাদের উপকার করে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, অক্সিজেন, ওষুধ ইত্যাদি আমরা গাছ থেকে পাই। গাছের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। প্রাণী জগতের অস্তিত্ব রক্ষায় উদ্ভিদের বিকল্প নেই। গাছ আছে বলেই পৃথিবী আজও বসবাসের যোগ্য।
কিন্তু দিনের পর দিন গাছ কেটে পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছি আমরা। গৃহস্থবাড়ি নির্মাণ, কর্পোরেট ভবন তৈরি, রাস্তা নির্মাণ ইত্যাদি কাজে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া গাছের পাতা ছিড়ে, ডাল-পালা ভেঙে, পেরেক মেরে গাছের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। পেরেক লাগানোর কারণে গাছের ছিদ্র দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব প্রবেশ করে। এতে গাছে দ্রুত পচন ধরে। ফলে তার খাদ্য ও পানি শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ বছর বেঁচে থাকা একটি গাছ; বায়ুদূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষায় ১০ লাখ টাকা, জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন দেয় ৫ লাখ টাকা, বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বর শক্তি বৃদ্ধি করে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, বৃক্ষে বসবাসকারী প্রাণীদের খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, আসবাবপত্র, জ্বালানি কাঠ ও ফল সরবরাহ করে ৫ লাখ টাকা, বিভিন্ন জীব-জন্তুর খাদ্য জোগান দিয়ে বাঁচায় আরও ৪০ হাজার টাকা। একটি বৃক্ষের আর্থিক সুবিধার মূল্য তাহলে দাঁড়ায় ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: জাতীয় পাখি দোয়েল কি বিলুপ্তির পথে?
যেসব এলাকায় গাছের পরিমাণ বেশি, সেখানে বন্যা ও ঝড়ে ক্ষতির পরিমাণ কম। গাছপালা মানুষকে সন্তানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। যদি বাসাবাড়ির ছাদগুলোকে একটুখানি সবুজ করা যায়, তাহলে শহরের তাপমাত্রা তুলনামূলক কমবে। ছাদের বাগান ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখে।
একটা সবজির গাছ তিন মাসের জন্য তিনজনের অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। শহরে ফাঁকা জায়গার অভাব। তাই বাড়ির অন্তত ২৫ শতাংশজুড়ে ছাদ বাগান করা উচিত। শুধু পরিবেশগত দিকই নয়, ছাদ বাগান করে আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়া যায়। শখের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে ছাদ বাগান করে সফল হয়েছেন অনেকে। আড়াই কাঠার বাড়ির ছাদে সবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বছরে ৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
একটি দেশের মোট ভূখণ্ডের কমপক্ষে ২৫ ভাগ বনভূমি প্রয়োজন। বাংলাদেশে সেই তুলনায় অনেক কম। পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকায় প্রতিনিয়ত বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। মরুভূমিতে রূপান্তর হচ্ছে দেশ। কাবর্ন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ প্রাণী জগতে বেড়েছে। ক্ষতিকর ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ অনেক গুণ বেড়েছে। ওজন স্তরে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে। অ্যাসিড বৃষ্টি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এন্টার্কটিকার বরফ গলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষকের বাড়ি
গাছ কমায় আবহাওয়ার আচরণও বদলেছে। গরমের সময় অতিরিক্ত গরম, ঠান্ডার সময় কখনো অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম। এছাড়া পেয়েছে কৃষি উৎপাদন হ্রাস। পরিবেশ-প্রকৃতি বাঁচাতে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গাছ লাগাতে উৎসাহী হওয়া উচিত। বৃক্ষমেলার পাশাপাশি বৃক্ষ রোপণেরও উৎসব হতে পারে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ উৎসবের আয়োজনে ভূমিকা রাখতে পারে।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা ও জনসংখ্যার চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই। সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে সকলের উচিত বৃক্ষ রোপণে এগিয়ে আসা। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে গাছের বিকল্প নেই।
এসইউ/এএসএম