জ্যৈষ্ঠ মাসে কোন ফসলের কী যত্ন

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৪৬ এএম, ১৬ মে ২০২৩
ফাইল ছবি

বোরো ধান

জমির ধান শতকরা ৮০ শতাংশ পেকে গেলে রিপার বা কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে কম খরচে ও স্বল্প সময়ে ধান সংগ্রহ করুন। হারভেস্টার দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৪ বিঘা জমির ধান কাটা ও মাড়াই করা যায়। হাত বা রিপার দিয়ে সংগৃহীত ধান পাওয়ার থ্রেসার দিয়ে মাড়াই করুন। এতে সময় ও খরচ বাঁচবে।

আউশ ধান

চারার বয়স ১২ থেকে ১৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের প্রথম কিস্তি হিসেবে একর প্রতি ১৮ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করুন। এর ১৫ দিন পর একই মাত্রায় দ্বিতীয় কিস্তি উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা বাড়াতে জমিতে সার প্রয়োগের সময় ছিপছিপে পানি রাখাসহ জমি আগাছা মুক্ত রাখুন।

আমন ধান

এ মাসের মধ্যেই রোপা আমনের জন্য বীজতলা তৈরি করুন এবং বন্যাকালীন সময়ে চারা নষ্ট হয় বিধায় অধিক পরিমাণ চারা উৎপাদন করুন। লবণাক্ত এলাকার জন্য ব্রি ধান ৫৩, ব্রি ধান ৫৪, ব্রি ধান ৭৩; অলবণাক্ত জোয়ারভাটা এলাকার জন্য ব্রি ধান ৭৬, ব্রি ধান ৭৭, ব্রি ধান ৭৮; জলমগ্ন এলাকার জন্য ব্রি ধান ৫১, ব্রি ধান ৫২, ব্রি ধান ৭৯; খরা প্রবণ এলাকার জন্য ব্রি ধান ৫৬, ব্রি ধান ৭১; স্বল্পমেয়াদি হিসেবে ব্রি ধান ৫৭, ব্রি ধান ৭৫, ব্রি ধান৮৭, ব্রি ধান ৯০, ব্রি ধান ৯১, ব্রি ধান ৯৩, ব্রি ধান ৯৪, ব্রি ধান ১৫, ব্রি ধান ১০৩; জিংক সমৃদ্ধ ধানের জন্য ব্রি ধান ৬২, ব্রি ধান ৭২,্র বিনা ধান ১৭, বিনা ধান ২২ রোপণ করুন।

এছাড়া অধিক ফলনের জন্য ব্রি হাইব্রিড ধান ৪, বি হাইব্রিড ধান ৬ আবাদ করুন। খরাপ্রবণ এলাকায় রোপা আমন ধানক্ষেতে মিনি পুকুর খনন করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিন। জ্যৈষ্ঠ মাসে আউশ ও বোনা আমনের জমিতে পামরী পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে হাতজাল, গামছা, লুঙ্গি, মশারি দিয়ে পামরী পোকা ধরে মেরে ফেলুন। তাছাড়া আক্রান্ত গাছের গোড়া থেকে ৫ সেন্টিমিটার (২ ইঞ্চি) রেখে বাকি অংশ কেটে দিন। আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করুন।

ভুট্টা (খরিফ)

খরিফ ভুট্টার বয়স ২০-২৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে রসের ঘাটতি থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে। জমিতে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং একই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।

পাট

পাটের জমিতে আগাছা পরিষ্কার, ঘন ও দুর্বল চারা তুলে পাতলা করা, সেচ এসব কাজগুলো যথাযথভাবে করুন। ফাল্গুনি তোষা জাতের জন্য একর প্রতি ৪০ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করুন। মাটিতে রস না থাকলে বা দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে হালকা সেচ দিন এবং বৃষ্টির কারণে পানি জমে থাকলে তা বের করার ব্যবস্থা নিন। এ মাসে পাটের বিছা পোকা এবং ঘোড়া পোকা জমিতে আক্রমণ করে থাকে। এদের আক্রমণ রোধ করতে পোকার ডিমের গাদা, পাতার নিচ থেকে পোকা সংগ্রহ করে মেরে বা পুরিয়ে ফেলুন। আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিকভাবে, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করুন।

জ্যৈষ্ঠ মাসে কোন ফসলের কী যত্ন

শাকসবজি

লতানো সবজির দৈহিক বৃদ্ধি যত বেশি হবে, তার ফুল-ফল ধারণ ক্ষমতা তত কমে যায়। সেজন্য বেশি বৃদ্ধি সমৃদ্ধ লতার ১৫-২০ শতাংশের কেটে দিন। এতে তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল ধরবে। কুমড়া জাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন অধিক ফলনে দারুণভাবে সহায়তা করবে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন হাত পরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে। এ মাসে কুমড়া জাতীয় ফসলে মাছি পোকা দারুণভাবে ক্ষতি করে থাকে। এক্ষেত্রে জমিতে খুঁটি বসিয়ে খুঁটির মাথায় বিষটোপ ফাঁদ দিলে বেশ উপকার হয়। এছাড়া সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করেও এ পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়।

গাছপালা

আগামী মাসে চারা লাগানোর জন্য জায়গা নির্বাচন, গর্ত তৈরি ও গর্ত প্রস্তুতি, সারের প্রাথমিক প্রয়োগ, চারা নির্বাচন এ কাজগুলো এ মাসেই শেষ করতে হবে। নারিকেল, সুপারির উপযুক্ত মাতৃগাছ থেকে ভালো বীজ সংগ্রহ করে বীজতলায় এখন লাগাতে পারেন।

অন্যান্য

বাড়ির কাছাকাছি উঁচু এমনকি আধা ছায়াযুক্ত জায়গায় আদা হলুদের চাষ করুন। বসতবাড়ির আশেপাশে মাত্র ৫ মি. ও ২মি. (১০ হাত ও ৪ হাত) পরিমাণ জায়গা থাকলে এ মাসে বরি পেঁয়াজ-৫ এর চারা রোপণ করে ১৫-২০ কেজি ফলন পাওয়া যায়। মাঠের মিষ্টি আলু, চিনাবাদাম বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই তুলে ফেলুন। গ্রীষ্মকালীন মুগডালের চাষও এ মাসে করতে পারেন। পতিত বা আধা ছায়াযুক্ত স্থানে অনায়াসে লতিরাজ বা পানি কচু বা অন্যান্য উপযোগী কচুর চাষ করুন। সবুজ সার করার জন্য ধইঞ্চা বা অন্য গাছের বয়স ৩৫-৪৫ দিন হলে চাষ ও মই দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন। সবুজ সার মাটিতে মেশানোর ৭/১০ দিন পরই ধান বা অন্যান্য চারা রোপণ করতে পারবেন।

এনএইচ/এমএইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।