মেহেরপুরে সজনে ডাটার ফলনে খুশি কৃষকরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মেহেরপুর
প্রকাশিত: ১২:০৮ পিএম, ০৪ এপ্রিল ২০২৩

অনুকূল আবহাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় মেহেরপুরে সজনে ডাটার ফলন ভালো হয়েছে। জেলার প্রতিটি গ্রামে বাড়ির পাশে, পতিত জমিতে, রাস্তার পাশে প্রতিটি সজনে গাছের শাখা-প্রশাখা নুয়ে পড়ছে ডাটার ভারে। তবে জেলায় এ সবজির বাণিজ্যিক চাষ এখনো শুরু হয়নি।

বহুগুণে গুণান্বিত সবজি সজনে ডাটা। বাজার চাহিদা বেশি থাকায় প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সজনে গাছগুলোর প্রতি যত্নশীল হয়েছেন মালিকরা। প্রথম যখন বাজারে ওঠে; তখন এর দাম হয় ৪০০-৫০০ টাকা কেজি। যা সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তবে ডাটা যখন পরিপূর্ণ রূপ নিয়ে বাজারে আসে; তখন দাম কমে যায়। বর্তমান বাজারে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সজনে উৎপাদনে চাষিদের কোনো খরচ হয় না। ফলে যতটুকু সজনে ডাটা উৎপাদন হয়, সবটুকুই চাষির লাভ।

মেহেরপুরে সজনে ডাটার ফলনে খুশি কৃষকরা

জেলায় কত হেক্টর জমিতে সজনে গাছ আছে, তার সঠিক হিসাব কৃষি বিভাগের কাছে নাই। তবে কয়েক বছর আগে জেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে মুজিবনগর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জেলায় ১০ হাজার সজনে চারা বিতরণ করা হয়। পরে সে প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। সেখান থেকে চাষিরা লাভবান হওয়ায় গত বছর সজনে চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে আরও প্রায় ৪০ হাজার সজনে গাছের ডাল ও চারা বিতরণ করা হয়। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চাষিরা নিজ উদ্যোগে সজনে গাছ লাগিয়েছেন। সে হিসেবে কৃষি বিভাগের ধারণা, জেলায় প্রায় লক্ষাধিক সজনে গাছ আছে। গড়ে প্রতিটি গাছে ১৫-২০ কেজি সজনে ডাটা হয়।

আরও পড়ুন: পাঁচবিবিতে গমের ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের চাষি খাইরুল হক বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে কোনো কৃষক জমিতে সজনে চাষ করেন না। বাড়ির চারপাশে সবাই সজনে গাছ লাগান। গাছগুলো লাগাতে কোনো খরচ হয় না। প্রতি মৌসুমে ২ হাজার টাকার ডাটা বিক্রি করা যায়। এবার গাছে যে পরিমাণ ডাটা ধরেছে, তাতে আমি ৫-৭ হাজার টাকার ডাটা বিক্রি করতে পারবো।’

গাংনী উপজেলার বাউট গ্রামের কৃষক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এবছর গাছে থোকায় থোকায় ডাটা ধরেছে। কোনো কোনো গাছে পাতা না থাকলেও ডাটায় পরিপূর্ণ। আমি নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণেই বাড়ির পাশে কয়েকটি গাছ লাগিয়েছি। তবে যে পরিমাণ ডাটা পাওয়া যায়, তা পরিবারের চাহিদা পূরণ করেও বিক্রি করা যায়।’

মেহেরপুরে সজনে ডাটার ফলনে খুশি কৃষকরা

একই গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, ‘সজনে এমন এক ধরনের গাছ, যার ডাল লাগালেই হয়। পরিচর্যা বলতে লাগানোর পর কয়েকদিন কয়েক বালতি পানি দিলেই মাটিতে গাছ লেগে যায়। এর প্রধান শত্রু হচ্ছে ঝড়। তবে ঝড়ে যদি ডাল ভেঙে যায়, তাতে সমস্যা নাই।’

আরও পড়ুন: ফেনীতে লাভের আশায় মরিচের ব্যাপক চাষ

সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের কৃষক আহসানুল হক ও হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর সজনের সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে। প্রতি বাড়িতে কমবেশি গাছ আছে। সজনে পুষ্টিকর সবজি হিসেবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় আমরা এ সবজি বাড়ির আঙিনায় চাষ করে থাকি।’

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, ‘নিরাপদ সবজি হিসেবে দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন এর চাষ বেশি হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে সজনে চাষে উৎসাহ দিতে প্রতি বছর বিনা মূল্যে চারা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত অন্য ফসলের মতো সজনে গাছের জন্য চাষাবাদ কিংবা রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। নিজ বাড়ির পাশে, ক্ষেতের আইলে অথবা রাস্তার দুপাশে সজনে গাছের ডাল লাগিয়ে দিলেই হয়। এটি খাওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।’

আসিফ ইকবাল/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।