বেড়েছে তরমুজ চাষ, ভালো বিক্রির আশা কৃষকের
চলতি মৌসুমে ফেনীর সোনাগাজী উপকূলীয় চরাঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ ৫৭০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। এতে কৃষকের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। এ তথ্য জানিয়েছেন সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার। তিনি জানান, গত মৌসুমে ২৬ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি করা হয়েছিল। এবার ৫০ কোটির বেশি বিক্রি হবে বলে কৃষি বিভাগ আশা করছে।
সোনাগাজীতে তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। গত বছরগুলোয় তরমুজে ব্যাপক লাভ হওয়ায় এবার আবাদ আরও বেড়েছে। কৃষকরা জানান, এ বছর সেচের ব্যবস্থা থাকায় অনাবাদি জমিতেও তরমুজ চাষে নেমেছেন অনেকে। মাঠে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নভেম্বরের শেষ থেকে তরমুজ চাষের মৌসুম শুরু হয়। তবে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ায় জমির ইজারা মূল্যও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
উপজেলার নবাবপুর, চর চান্দিয়া, চর দরবেশ, সোনাগাজী সদর ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এখন তরমুজ আবাদের মহাযজ্ঞ চলছে। চাষিদের ব্যস্ততায় ক্ষেত ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য। অনেক মাঠেই বীজ রোপণ হয়ে গেছে। বেশিরভাগ জায়গায় জমি প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। নবাবপুর ইউনিয়নে চারা বাড়তে শুরু করেছে। সার, পানি ছিটানো আর বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আগাম তরমুজ চাষে সফল ভৈরবের ৪ কৃষক
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫৭০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর চাষাবাদ হয়েছে ৩৪৫ হেক্টর জমিতে। ২০২১ সালে ১১৭ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। ক্রমান্বয়ে চাষাবাদের পরিমাণ বাড়ছে।
দক্ষিণ চর দরবেশের কৃষক মাইন উদ্দিন জানান, গত বছর ৯ একর জমির তরমুজ বিক্রি করে ১১ লাখ টাকা পেয়েছেন। এ বছর আবাদের পরিমাণ বাড়িয়ে ১৫ একর জমিতে ঠেকেছে। তিনি বলেন, ‘দাম থাকলে তরমুজে ব্যাপক লাভ। এবার মানুষ তরমুজের পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। কোথাও কোনো জমি ফাঁকা থাকছে না। লাখোপতি হওয়ার আশায় সবাই নেমেছেন।’
কৃষকরা জানান, আমন ধানের বীজ বোনা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তুলতে ৬ মাস সময় লাগে। প্রতি বিঘা আমন উৎপাদনে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমির ধান বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকায়। সে ক্ষেত্রে প্রতি বিঘায় আমন আবাদে লাভ হয় সর্বোচ্চ ৮-৯ হাজার টাকা। অন্যদিকে তরমুজে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত সময় লাগে সর্বোচ্চ আড়াই মাস। প্রতি বিঘায় খরচ হয় ১৪-১৫ হাজার টাকা। এতে তরমুজ বিক্রি হয় ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায। যদিও এবার খরচ কিছুটা বাড়বে।
এদিকে সোনাগাজী অঞ্চলের তরমুজ যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। তরমুজ চাষী মো. সেলিম ও জহির উদ্দিন জানান, এখান থেকে তরমুজ সরাসরি ফেনী শহর, চট্টগ্রামের ফলমন্ডি, ফিরিঙ্গী বাজার, চকরিয়া, পটিয়া, সাতকানিয়া যায়। সেখানকার আড়তদাররা তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সরবরাহ করেন। তারা বলেন, ‘আমরা নোয়াখালীর সুবর্ণচরের বাসিন্দা। এ এলাকায় দীর্ঘ ৩-৪ বছর ধরে তরমুজ আবাদ করে আসছি।’
আরও পড়ুন: পোরশায় ড্রাগন চাষে বছরে আয় কোটি টাকা
আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. শামীম বলেন, ‘এই মৌসুমে আমরা ১৪ জন মিলে দেড়শ একর জমিতে তরমুজ চাষ শুরু করেছি। জমির মালিকদের কাছ থেকে ৩ মাসের জন্য শতক প্রতি ১০০ টাকা করে লিজ নিই। পুরো জমিই এক ক্ষেত। ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আমরা এ চাষাবাদ শুরু করেছি।’
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘১ বিঘা জমি প্রদর্শনীর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কোনো সুবিধা আমাদের না থাকায় দেওয়া সম্ভব হয়নি।’
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এসইউ/জেআইএম