কোটি টাকার ফসল
ভারতের জমি চাষ করছেন মেহেরপুরের চাষিরা
ভারতের জমি লিজ নিয়ে বছরে কোটি টাকার সবজি ও ফসল উৎপাদন করছেন মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী চাষিরা। কাঁটাতারের বাংলাদেশ অংশে নোম্যান্সল্যান্ডে রয়ে গেছে ভারতীয় নাগরিকদের শত শত একর জমি। সেই জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন সীমান্তের কৃষকরা। এই চাষাবাদে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি ও বিএসএফ কৃষকদের সহযোগিতা করে আসছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুর। জেলার তিনদিকে ৪৭ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া। ভারতের নদীয়া জেলার শত শত একর জমি বাংলাদেশ অংশে। তাই সীমান্ত পেরিয়ে চাষাবাদ ভারতীয়দের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। এখন ভারতীয়দের এসব জমি বাংলাদেশিরা লিজ নিয়ে চাষ করছে। বাৎসরিক লিজের টাকা নিয়ে ভারতীয়রা এসব জমি বাংলাদেশিদের আবাদ করতে দিচ্ছে।
এতে ভারতীয়রা যেমন তাদের অনাবাদি জমির মূল্য, দখল ও ব্যবহার সুবিধা পাচ্ছে; তেমনি বাংলাদেশিরা কম টাকায় লিজ নিয়ে কোটি টাকার ফসল উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। ওই জমিতে নতুন ফসল উঠলে বাংলাদেশি চাষিরা জমির মালিককে উপহার হিসেবে পাঠান। এসব জমিতে উৎপাদিত সবজি ও ফসল মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হয়। বছর শেষে কোটি টাকার লাভের মুখ দেখেন চাষিরা।
আরও পড়ুন: তরমুজে ঘুরবে বরগুনার অর্থনীতির চাকা
চাষিরা বলছেন, এসব জমি না পেলে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন হতো না। নিরাপদে সীমান্তের এসব জমি চাষাবাদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। কৃষি বিভাগ ও বিজিবির হিসেবে ভারতীয়দের কয়েক হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদ করছেন বাংলাদেশিরা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ইছাখালী গ্রামের কৃষক তুহিন আলী বলেন, ‘সীমান্তবর্তী গ্রামের চাষিদের ভাগ্য পরির্বতন হয়েছে ভারতের জমি লিজ নিয়ে চাষ করে। একদিকে কম টাকায় লিজের জমি; অন্যদিকে সবজি ও ফসল উৎপাদন করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি। এসব জমির সবজি ও ফসল দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হয়। এসব জমি না পেলে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন হতো না।’
একই গ্রামের কৃষক আয়ূব হোসেন বলেন, ‘৩০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আবাদ করছি। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক ভালো। এসব জমিতে সব রকমের ফসল উৎপাদন করা যায়। ফসল উৎপাদন করে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে।’
আরও পড়ুন: টমেটোর নতুন জাত ‘সাউ রেড রুবি’ উদ্ভাবন
ইছাখালী গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে আমরা চাষ করছি। এসব জমিতে সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। এতে সংসার খুব সুন্দর ভাবে চলে। ছয় কাঠা জমিতে ৩৯ হাজার টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। আমরা অনেক ভালো আছি।’
কৃষক সাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতীয়দের এসব জমি আমরা চাষ না করতে পারলে জীবনমান পরিবর্তন হতো না। তাদের জমি লিজ নিয়ে চাষ করে আমরা অনেক সুখে আছি।’
বুুড়িপোতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ জামাল বলেন, ‘ভারতীয় জমি চাষ করে বাংলাদেশি কৃষকরা অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছেন। অনেক চাষি ভাগ্যের পরিবর্তনও করেছেন। দুই পারের মানুষের মাঝে সুসম্পর্ক আছে। এই চাষাবাদে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী সহযোগিতা করে আসছে।’
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে খিরা চাষে কৃষকের মুখে হাসি
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, ‘সীমান্তে ভারতীয় জমি লিজ নিয়ে চাষ করে মেহেরপুরের কৃষকরা ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছেন। এটি আমাদের জেলা ও দেশের জন্য পজিটিভ দিক। এতে অর্থনীতির দিক দিয়ে আমাদের দেশ লাভবান হচ্ছে।’
আসিফ ইকবাল/এসইউ/এমএস