শীতের রাতে খেজুর রসের সন্ধানে

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০৭ পিএম, ০৭ জানুয়ারি ২০২৩

মামুনূর রহমান হৃদয়

প্রকৃতিতে লেগেছে শীতের ছোঁয়া। দিনে খুব একটা অনুভব না হলেও সূর্য ডুবতেই আর শেষ রাতে ছড়িয়ে পড়ে শীতল হাওয়া। বর্ষপঞ্জিতে পৌষ ও মাঘ শীতকাল। তবে তারও আগে প্রকৃতিতে নিজের রূপ প্রকাশ করে এই ঋতু। শীতের পরশ বুলিয়ে কুয়াশার চাদরে আগলে নেয় চারদিক। শীতের মনোমুগ্ধকর এমন রূপ অনেকের কাছেই প্রিয়, আর প্রিয় খেজুরের রস।

বিজ্ঞাপন

টাটকা রসের স্বাদ পেতে প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোরবেলা ছুটে যান দূর-দূরান্তে। গ্রামীণ পরিবেশে দুই পাশে সারি সারি খেজুর গাছ যেন রসের জন্য আর্তনাদ বাড়িয়ে দেয়। খেজুর গাছের চারপাশ পরিণত হয় রসপিপাসুদের কেন্দ্রস্থলে। কখন গাছ থেকে হাঁড়িগুলো নামাবেন গাছিরা, কখন খাবে এই শীতের মধু। খেজুরের রস খাওয়ার পাশাপাশি খেজুর গাছ এবং খেজুরের রস নিয়ে ছবিও তোলেন অনেকে। তেমনই একটি ঘটনার বর্ণনা দিলেন এক ভ্রমণপিপাসু।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

শীতের রাত। ঠান্ডা প্রকৃতি উপভোগ করতে বের হলাম বাইরে। ফেসবুকে ঘাটাঘাটি করে খেজুর গাছ আর রস খাওয়ার ছবি দেখে আমারও ইচ্ছে হলো রস খাওয়ার; কোথায় পাওয়া যাবে? সঙ্গে ছিল ক্যাম্পাস জীবনের এক ছোটভাই। তার কাছেই জানতে চাইলাম প্রথম। শান্ত ও খোশ মেজাজের ছেলেটি সঠিক বলতে পারল না।

এরপর ফোন দিলাম গাজীপুরে বসবাসরত আরেক স্নেহের ছোটভাইকে। জিজ্ঞেস করলাম, খেজুরের রস কোথায় পাওয়া যাবে? সে বলল, খেজুর গাছের সন্ধান তার কাছেই আছে। কাল খুব ভোরে গাজীপুরের গাছবাড়িতে চলে আসতে। ভোর ছাড়া নাকি রসের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় না।

ভোরে সঠিক সময়ে পৌঁছানোর জন্য আমি আমার সাথের জনকে মোটরসাইকেলে নিয়ে মাঝরাতেই ঢাকা ছেড়ে রওনা দিলাম গাছবাড়ির উদ্দেশ্যে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

গাছবাড়ি পৌঁছানোর পর তিনজন মিলে শুরু হলো চাঁদের আলোয় অন্ধকারে পথচলা। গ্রামে সুনসান নীরবতা। কনকনে ঠান্ডা আবহাওয়া। কাঁচা রাস্তা ধরে আমরা পৌঁছলাম এক গ্রামে। সেখানকার এক খেজুরগাছির সঙ্গে আলাপ হলো। এরই মাঝে ভোর হয়ে এসেছে। শেষরাতের আবছা আলোয় কোমরে দড়ি বেঁধে গাছি ভাই নিজের গাছে উঠলেন। নামালেন টাটকা খেজুর রস। গাছ থেকে নামানো মাটির হাঁড়ি দেখে মন ভরে উঠল। বহুদিন পর খেজুরের রস খেয়ে তৃপ্তি পেলাম। ফিরে গেলাম শৈশবে।

আমার বিশ্বাস, এ দেশের বহু শিশু-কিশোরের সঙ্গে শীতকালের খেজুর রসের স্মৃতি আছে, আছে মাঝরাতে গাছে উঠে রস খাওয়ার আনন্দ। শহরের জীবন আমাদের এমন অনেক শৈশবকে বানিয়ে দিয়েছে শুধুই স্মৃতি। তবে সেই স্মৃতি বড়ই মধুময়। মাঝেমধ্যে চাঁদনী রাতে সেই স্মৃতি ফিরে পেলে মন্দ হয় না।

বিজ্ঞাপন

একটা সময় ছিল যখন খেজুর গাছ ছিল গ্রামীণ মানুষের জীবিকার মাধ্যম। এই পেশার সাথে জড়িত ছিল গ্রামীণ নারীরাও। কোমর বেঁধে তারা গুড় তৈরির কাজে নেমে পড়তেন। শীত এলে গাছিরা ধারালো দা, কোমরে দড়ি বেঁধে গাছে উঠে হাঁড়ি বসাতেন। সকাল বেলা হাঁড়িভর্তি রস নামাতেন। ওই রস ও তৈরি গুড় বিক্রি করে চালাতেন সংসার। তবে কালের পরিক্রমায় হারাচ্ছে খেজুর গাছ, কমেছে গাছি।

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।