বছরে ৯ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেন তংসং ম্রো

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বান্দরবান
প্রকাশিত: ০৯:০৬ এএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২২

বরই চাষে ভাগ্য বদলেছে বান্দরবানের চিম্বুক এলাকার দেওয়াই হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা তংসং ম্রোর। তিনটি বরই গাছ দিয়ে শুরু করে এখন ৫ একর পাহাড়ি জমিতে ১২০০ বরই গাছ তার। এর ফল বিক্রি করে বছরে প্রায় ৮-৯ লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। যা দিয়ে ৪ ছেলের পড়াশোনা ও সংসারের খরচের পাশাপাশি আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে সংসারে।

সরেজমিনে জানা যায়, সড়ক থেকে প্রায় ২ হাজার ফুট নিচে পাহাড়ের খাদে গাছে ঝুলছে সবুজ-হলুদ ও লালচে বলসুন্দরী-আপেল কুল। নয়নাভিরাম এ দৃশ্য যে কারো মন প্রফুল্ল করবে।

বরই চাষি তংসং ম্রো জানান, সরকার সদর উপজেলার সুয়ালক এলাকার ভূমি অধিগ্রহণ করে। তারপর পরিবার নিয়ে পুনর্বাসিত হন চিম্বুক এলাকায়। ২০০৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিট থেকে ১০টি বরইয়ের চারা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। সেই চারা এনে রোপণ করেন। তেমন পরিচর্যা না করায় ১০টি থেকে ৭টি চারা মারা যায়। দীর্ঘদিন ওই গাছের দিকে আর যাওয়া হয়নি।

বছরে ৯ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেন তংসং ম্রো

একদিন জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখেন, গাছে পাকা পাকা বরই ঝুলছে, যা খুবই মিষ্টি। পরে এর প্রজাতি সম্পর্কে জানতে স্থানীয় কৃষি অফিসে যান। সেখান থেকে ধারণা নিয়ে প্রথম ৭০০ চারা নিয়ে বাগান করেন। ২ বছর পর থেকে গাছে বরই ধরা শুরু হয়। ওই বছর কেজি ১৫০-২০০ টাকা দরে প্রায় ৩ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেন।

বর্তমানে ১ হাজার ২শ’র বেশি বলসুন্দরী ও আপেল কুলের গাছ আছে। সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে পাকতে শুরু করে উচ্চ ফলনশীল বরই। এই বরই আকারে বড় ও স্বাদে সুমিষ্ট হওয়ায় পাইকাররা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন জেলায়।

২০২১ সালে এ বাগান বিক্রি করে সাড়ে ৯ লাখ টাকা পেয়েছিলেন। এবার বিক্রি করে সাড়ে ৭ লাখ টাকা আয় হয়েছে। গাছ পরিচর্যা বাবদ বছরে লাখ খানেক টাকা খরচ হলেও প্রতি বছর ৭-৮ লাখ টাকা লাভ হয় এ বরই চাষির।

বছরে ৯ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেন তংসং ম্রো

বান্দরবান কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ফলের আবাদ হয়। তার মধ্যে বিশেষ জায়গা দখল করছে উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন প্রজাতির বরই। গত অর্থবছরে জেলায় ১,৪৭৭ হেক্টর জমিতে বরইয়ের আবাদ হয়েছিল। এ থেকে উৎপাদন হয় ১১,৭২৭ মেট্রিকটন বরই। এ অর্থবছরে ২,৫৫০ হেক্টর জমিতে বরইয়ের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০,৪০০ মেট্রিকটন।

বান্দরবানের কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘তুলনামূলক কম খরচ ও পরিচর্যায় বেশি ফলন পাওয়ায় বরই চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় চাষিদের। ভবিষ্যতে দেশের ফলের চাহিদা পূরণে এ জেলার উৎপাদিত ফল অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।’

নয়ন চক্রবর্তী/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।