আমন ধানে পাতা পোড়া রোগে হতাশায় কৃষক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০২:২৫ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০২২

মৌলভীবাজারে পটাশ সালফারের অভাবে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া রোগ ছড়াচ্ছে আমন ধান গাছে। কৃষকরা জানিয়েছেন স্বাভাবিক পরিচর্যায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। তারা আক্রান্ত ক্ষেতের জমিতে কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করেও ফল পাচ্ছে না। এতে তারা হতাশায় রয়েছেন।

কৃষি বিভাগ বলছে, এটা কোনো বড় ধরনের রোগ নয়। প্রয়োজনীয় বৃষ্টি ও ধান গাছের পুষ্টির অভাবে পাতা লালচে হচ্ছে। কৃষকদের ভুল পরিচর্যার কারণে পাতা সবুজ হতে একটু সময় লাগবে। জেলার ৭টি উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল লাল হয়েছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর। গতবছর জেলায় আমন আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার হেক্টর জমিতে।

মৌলভীবাজারের শস্য উৎপাদনের দিক থেকে প্রথম স্থানে আমন ধান। ধানি জমিতে যখন সবুজের হাতছানি ঠিক তখনই দেখা দিয়েছে কীটপতঙ্গের আক্রমণ। এছাড়া জমিতে লাগানো চারায় হলুদ বর্ণ ধারণ করতেও দেখা গেছে। জেলার রাজনগর, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও সদরসহ ৭টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ধান গাছ হলুদ বর্ণ ধারণের ফলে কৃষকরা চিন্তায় পড়েছেন।

কৃষকরা জানিয়েছেন ধানের সবুজ পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে পুড়ে যাওয়ার কারণে ধান গাছ ধীরগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক জমিতে ধানের চারা বিবর্ণ রূপ ধারণ করছে। কীটনাশক ও সার প্রয়োগে কোনো লাভ হচ্ছে না। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বি আর-১১ ও ব্রি ধান-৪৯ জাতের ধান।

বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) রাজনগর উপজেলার পাঠানটুলা, খারপাড়া কাউয়াদীঘি হাওর পারের জালালপুর ও ভূমিউড়া গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সবুজ দিগন্তজোড়া ক্ষেতের জমিতে ধানের পাতা পোড়া রোগে আক্রান্ত জমি চিহ্নত হয়ে আছে। এ সময় কথা হয় জেলার কাওয়াদীঘি হাওর পাড়ের জালালপুর গ্রামের অনেকের সঙ্গে। কৃষক কুটি মিয়া বলেন, ৬ বিঘা জমির ধান হলুদ হয়ে আগা পুড়ে গেছে। কীটনাশক প্রয়োগ করে কোনো লাভ হয়নি।

রাজনগর উপজেলার বাজুয়া গ্রামের ইয়াবর মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ধান গাছের নিচে এক ধরনের ছোট বাদামী গাছ ফড়িং আক্রমণ করে। এরপর থেকে ধান গাছে পচঁন শুরু হয়। আমার ৫ বিঘা জমির ধান একেবারে নষ্ট গছে।

পাঠানটুলা এলাকার হোসেন বকস ও ইমানি মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ১৫ দিন ধরে ধানের পাতা মরা রোগ দেখা দিয়েছে সার কীটনাশক দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

কুলাউড়া উপজেলার হিঙ্গাজিয়া গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, হঠাৎ ধানের পাতা লাল হওয়া রোগের আক্রমণে হতাশায় পড়েছি। কীটনাশক ও সার প্রয়োগে লাভ হচ্ছে না।

কমলগঞ্জের মুন্সিটিলা গ্রামের কৃষক আব্দুল আহাদ বলেন, আমরা মাঝরা পোকার আক্রমণ মনে করে স্থানীয় বাজার থেকে কীটনাশক ক্রয় করে প্রয়োগ করি। ২০ দিন ধরে ধানের লালচে রং যাচ্ছে না।

মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, এটা কোনো বড় সমস্যা নয়। কৃষকরা আতঙ্কিত না হয়ে জমিতে পরিমাণ মতো কীটনাশক ও সার প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

কৃষকদের ভুল পরিচর্যার কারণে পাতা সবুজ হতে একটু সময় লাগবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা তাদের ক্ষেতে ভুল পরিচর্যা করছেন। এতে ধানের পাতা সবুজ হতে দেরি হবে। উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ধান গাছে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। পটাসিয়াম ও সালফারের অভাব পূরণ হলেই ধান গাছ সবুজ হয়ে যাবে।

এমএমএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।