পরীক্ষামূলক বারি পেঁয়াজ চাষে সফলতা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ভোলা
প্রকাশিত: ০২:২২ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২২

ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে প্রথমবারের মতো বারি জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন কৃষকরা। প্রথমবারেই চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তারা। কৃষকদের দাবি দেশি জাতের পেঁয়াজের চেয়ে কম খরচে অল্পদিনে বিক্রির উযুক্ত হওয়া বড় আকারের পেঁয়াজ ঘরে তুলতে পেরেছেন তারা। এছাড়াও বাজারে বারি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি হওয়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে প্রতিবছরের মতো এবছরও পেঁয়াজ চাষ করেছেন কৃষকরা। তবে এবছর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন বিভাগ ভোলার সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ভোলা সদর, দৌলতখান ও চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে দুই একর জমিতে বারি পেঁয়াজ-৪ ও বারি পেঁয়াজ-৬ চাষ করেছেন ১০ জন কৃষক।

অন্যদিকে কম খরচে মাত্র ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ক্ষেতের পেঁয়াজ বড় হয়ে বিক্রি উপযোগী হওয়ায় ব্যাপক খুশি কৃষকরা। তাদের দাবি দেশি পেঁয়াজের চেয়ে বারি পেঁয়াজ খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়। এবং আকার বড় হওয়ায় বাজারের এর চাহিদা বেশি এবং দামও বেশ ভালো।

ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর এলাকার কৃষক মো. সাহাবুদ্দিন জানান, তিনি প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর ধরে দেশি জাতের পেঁয়াজ চাষ করে আসছেন। ওই পেঁয়াজের বীজ বাজার থেকে বেশি দামে ক্রয় করতে হয়।

পরীক্ষামূলক বারি পেঁয়াজ চাষে সফলতা

এছাড়াও দেশি পেঁয়াজের আকার ছোট হওয়ায় তেমন লাভবান হতেন না। তবে এবছর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন বিভাগ ভোলা অফিস থেকে তাকে বিনা মূল্যে বারি পেঁয়াজ-৪ এর বীজ, সার ও কীটনাশক দেওয়ায় তিনি ৩৩ শতাংশ জমিতে চাষ করেছি।

তিনি আরও জানান, ক্ষেতে পেঁয়াজের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বাজার ভালো থাকলে আশা করছি প্রায় ১ লাখ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারব।

রাজাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক মো. ইউসুফ পাটওয়ারি জানান, তিনি প্রায় ৫ বছর ধরে দেশি জাতের পেঁয়াজের চাষ করেন। কিন্তু এবছর প্রথমবারের মতো বারি পেঁয়াজ-৬ চাষ করেছেন। মাত্র ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ক্ষেতের পেঁয়াজের আকার অনেক বড় হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষেতে ব্যাপক ফলন হয়েছে। এতে আমি অনেক খুশি। আমি আশা করছি এই পেঁয়াজ চাষ করে ভালো লাভবান হবো।

পরীক্ষামূলক বারি পেঁয়াজ চাষে সফলতা

একই ইউনিয়নের চর মনষা গ্রামের কৃষক মো. মফিজ ফরাজী জানান, প্রথমবারের মতো তিনিও ৩৩ শতাংশ জমিতে বারি পেঁয়াজ-৪ ও বারি পেঁয়াজ-৬ চাষ করেছেন। ক্ষেতে ভালো ফলন হয়েছে। বর্তমানে বাজার মূল্য কম। এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। মোট ৫০ হাজার টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করার আশা আছে তার।

তিনি আরও জানান, দেশি পেঁয়াজের চেয়ে বারি পেঁয়াজ-৪ ও বারি পেঁয়াজ-৬ এর সাইজ বড় হওয়ায় বাজারের চাহিদা বেশি। তাই পাইকারি ও খুচরা বাজারের দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও দেশি পেঁয়াজের চেয়ে বারি পেঁয়াজ চাষে খরচ কম বলে দাবিও করেন তিনি।

মাঝের চরের কৃষক মো. রুবেল জানান, আমাদের মাঝের চরে দুইজন কৃষক বারি জাতের পেঁয়াজের চাষ করেছেন। দেশি জাতের পেঁয়াজের চেয়ে বারি পেঁয়াজের ক্ষেতে অনেক ভালো ফলন হয়েছে। অল্পদিনে পেঁয়াজের আকারও বড় হয়। আমি তাদের পেঁয়াজের ক্ষেত দেখেছি এবং তাদের কাছে এই পেঁয়াজ সম্পর্কে জেনেছি এটি লাভজনক। তাই আগামী বছর আমিও বারি জাতের পেঁয়াজের চাষ করবো।

পরীক্ষামূলক বারি পেঁয়াজ চাষে সফলতা

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন গবেষণা বিভাগ ভোলার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গাজী নাজমুল হাসান জানান, এবছর আমরা ভোলার তিনটি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে দুই একর জমিতে ১০ জন কৃষক দিয়ে বারি পেঁয়াজ-৪ ও বারি পেঁয়াজ-৬ চাষ করিয়েছে। ওই কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ, সার, কীটনাশনসহ বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা দিয়েছি। কৃষকের ক্ষেতে ব্যাপক ফলন হয়েছে। আমরা পরীক্ষামূলভাবেই সফল হয়েছি।

তিনি আরও জানান, ওইসব কৃষকদের সফলতা দেখে অনেক কৃষক বারি পেঁয়াজ চাষ করতে আগ্রহী হয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা আশা করছি আগামীতে আরও বেশি কৃষকদের সহযোগিতা করে বেশি জমিতে বারি পেঁয়াজ চাষ করাবো।

উল্লেখ্য, ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে এবছর ভোলা জেলায় ৩৪২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরণের পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বারি পেঁয়াজ-৪ ও বারি পেঁয়াজ-৬ চাষ হয়েছে ২ একর জমিতে।

জুয়েল সাহা বিকাশ/এমএমএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।