ইউটিউব দেখে বরই চাষে কাইয়ুমের ভাগ্য বদল

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
প্রকাশিত: ০৫:০২ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

পরিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে মো. কাইয়ুম শেখ পড়ালেখা বেশি দূর করতে পারেননি। অল্প বয়সেই সংসারের কাজে নামতে হয়েছে তাকে। শৈশবেই কাইয়ুম শেখ তার বাবার সঙ্গে কৃষি কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে সংসারের হাল ধরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এতে ব্যর্থ হন তিনি। তবে থেমে না গিয়ে একের পর এক বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার চেষ্টা শুরু করেন। তাতে সফল হতে পারেননি তিনি।

এদিকে জীবনে বড় কিছু করার স্বপ্ন তাড়া করে ফেরে কাইয়ুমকে। অবশেষে বরই চাষ করে সফলতার দেখা পান কাইয়ুম শেখ। এখন নিজের সফলতায় তিনি তৃপ্ত। তাকে দেখে আশপাশের মানুষও বেশ উৎসাহিত হচ্ছেন। কাইয়ুম শেখ এখন যুবকদের জন্য অনন্য অনুপ্রেরণার ব্যক্তিত্ব।

ইউটিউব দেখে বরই চাষে কাইয়ুমের ভাগ্য বদল

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের পৈলানপুর গ্রামের বাসিন্দা কাইয়ুমের কাছে বয়স যেন একটি সংখ্যা মাত্র। এই বয়সে তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে চলছেন। আর তার এই পরিশ্রম স্বপ্ন পূরণের একমাত্র হাতিয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না থাকলেও তার কর্মদক্ষতা অনেক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকেও যেন হার মানাবে।

কাইয়ুম শেখ জানান, ছোটবেলা থেকেই সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করেছেন। কৃষিকাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করেছেন। কিন্তু সব সময়ই চাইতেন ব্যতিক্রমী কিছু করার। সেই লক্ষ্যে প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিছানায় শুয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবে বিভিন্ন চ্যানেল দেখে সফল মানুষদের গল্প দেখতেন। আর মনে মনে ভাবতেন তিনি সফলদের মতো কিভাবে হওয়া যায়।

ইউটিউব দেখে বরই চাষে কাইয়ুমের ভাগ্য বদল

কাইয়ুম শেখ এভাবে একদিন ইউটিউবের একটি চ্যানেলে দেখতে পান বরই চাষে সফলদের গল্প। আর এই বিষয়টি তাকে খুবই উৎসাহিত করে। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেন তিনিও বরই চাষ করবেন। পরে ইউটিউব চ্যানেলের স্ক্রীনে দেওয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেন দেশের বিভিন্ন এলাকার বরই চাষিদের সঙ্গে। নিজের প্রয়োজনে তিনি কয়েকটি জেলায় বরই চাষিদের সঙ্গে দেখা করতে চলে যান। তাদের সঙ্গে কয়েকদিন ঘুরে ফিরে আসেন বাড়ি। আর সিদ্ধান্ত নেন তিনিও বরই চাষ করবেন।

তিনি আরো জানান, সিদ্ধান্ত স্থির করার পর বরই চাষে তার বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় জমি। নিজের পর্যাপ্ত জমি না থাকায় অন্যের কাছ থেকে ৪ বিঘা জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নেন। আর তাতে ২ বিঘা জমিতে পেয়ারা, লেবু ও টমেটো চাষ করেন। আর বাকি ২ বিঘা জমিতে তিনি শুরু করেন তার স্বপ্নের বরই চাষ। মেহেরপুর ও ফরিদপুরের বরই চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন অস্ট্রেলিয়ান বলসুন্দরী জাতের চারা গাছ। প্রথম অবস্থায় ৪৫০টি চারা নিয়ে আসেন তিনি। ২ বিঘা জমিতে সেই চারা লাগিয়ে পরিচর্যা করতে থাকেন।

ইউটিউব দেখে বরই চাষে কাইয়ুমের ভাগ্য বদল

বিভিন্ন সময় স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ কাইয়ুম। কৃষি অফিসও তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। প্রায় ৯ মাস পরে আসে কাইয়ুমের সফলতা। প্রতিটি গাছে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কেজি করে বরইয়ে ফলন হয়। যা স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলার বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করেন।

পাশাপাশি কাইয়ুম এখন এই জাতের বরইয়ের চারা উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করছেন। তিনি মনে করেন তার উৎপাদিত চারা গাছে স্থানীয় বেকার যুবকরা বরই চাষ করে তাদের বেকারত্ব দূর করতে পারবেন। বরই চাষ করে সফল হওয়ার পর কাইয়ুম এখন মনে করছেন এই কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি কোনো ভুল করেননি।

ইউটিউব দেখে বরই চাষে কাইয়ুমের ভাগ্য বদল

পৈলানপুর গ্রামের যুবক কাজী ফয়সাল বলেন, অনেকদিন ধরেই শুনছি এ এলাকাতে বরইয়ের চাষ হচ্ছে। ফলনও নাকি খুব ভালো হয়েছে। যে গাছগুলোতে ফল ধরেছে সেই গাছগুলো নাকি অনেক ছোট। তাই আগ্রহ থেকে দেখতে চলে আসলাম। তবে আসার পর আমি অবাক হয়েছি। বরই গাছ অনেক ছোট, কিন্তু বরইয়ের ভারে গাছের ডালা মাটিতে নুয়ে পড়েছে। বরইগুলোও হয়েছে বেশ বড় বড়। এর আগে এমন গাছ দেখিনি। তাছাড়া বরইগুলো খেতেও খুব সুস্বাদু।

একই গ্রামের বাসিন্দা বজলুর রহমান বলেন, কাইয়ুম শৈশব থেকেই খুবই কর্মঠ। চাষাবাদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করতেন। যতদূর জানি তিনি ইউটিউব দেখে বরইয়ের বাগান করেছেন। আমার বাড়ির খুব কাছে, তাই এই বাগানের পাশ দিয়ে আমাকে যাতায়াত করতে হয়। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে তার বাগান দেখতে। বরইয়ের জাত ও ফলন ভালো হওয়ায় আশা করা যায় তিনি বেশ লাভবান হবেন।

ইউটিউব দেখে বরই চাষে কাইয়ুমের ভাগ্য বদল

পার্শ্ববর্তী বক্তারপুর গ্রামের আরেক যুবক নূর হোসেন মেরাজ জানান, অনেকের মুখে শুনে তিনিও এসেছেন বরইয়ের বাগান দেখতে। এসে নিজে হাতে গাছ থেকে বরই ছিঁড়ে খেয়েছেন। পাশাপাশি আগামী বছর নিজের জায়গায় এমন বাগান করবেন বলে ১০০ চারা গাছ ক্রয়ের প্রক্রিয়া করছেন। তবে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বরইয়ের বাগান করলে তাতে তিনিও লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, কাইয়ুম একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরামর্শের জন্য কৃষি অফিসে এসেছেন। উপজেলা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অনেকেই তার বরইয়ের বাগান পরিদর্শন করেছেন। তিনি প্রয়োজন মনে করলে স্থানীয় কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

আব্দুর রহমান আরমান/এমএমএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।