পটুয়াখালীতে খরচ কমেছে মুগডাল চাষের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ০১:০৫ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২

পটুয়াখালীর কৃষকরা এখন মুগডাল চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে এবার কিছু কিছু এলাকায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত আধুনিক বীজ বপন যন্ত্র (পাওয়ার ট্রিলার অপারেটর সিডার) ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে কৃষকের মুগডাল বপন যেমন সহজ হচ্ছে পাশাপাশি উৎপাদন খরচও কমছে। অন্যদিকে ফলনও বেশি হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

কৃষক পর্যায়ে এই যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মাঠ দিবসের আয়োজন করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে জমিতে চাষ দেয়া, বীজ বপন এবং জমি সমান করার কাজ করছে ‘পাওয়ার ট্রিলার অপারেটর সিডার মেশিন’। ফলে কম সময়ে এবং কম শ্রমিক ব্যবহার করেই মুগডাল বপন করা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যন্ত্র ব্যবহার করে চাষাবাদ করলে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বীজ কম লাগে। পাশাপাশি জমির আগাছা পরিষ্কার করা এবং ফসল সংগ্রহ প্রক্রিয়াও সহজ হচ্ছে। এসব কারণে আধুনিক এই যন্ত্র কৃষক পর্যায়ে ব্যবহার উপযোগী করতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগ।

সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন এলাকায় এই যন্ত্রের ব্যবহার বিষয়ে মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়েছে। এতে স্থানীয় কৃষকদের হাতে কলমে এই যন্ত্র সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘এই বীজ বপন যন্ত্রটি পাওয়ার ট্রিলারের সঙ্গে যুক্ত করলে একই সঙ্গে জমি চাষ দেয়া, বীজ বপন করা এবং জমি লেভেল করা সম্ভব হচ্ছে। এতে বীজের পরিমাণ কম লাগে, নির্দিষ্ট দূরত্বে বীজ বপন করা যায়। কম শ্রমিক দরকার হয়, অল্প সময়ে চাষাবাদ সম্ভব হয়। মানুষ দিয়ে কাজ করালে সময় বেশি লাগে, ফলে অনেক সময় জমির জো কমে যায় এবং চাষাবাদ ব্যাহত হয়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে এই যন্ত্র ব্যবহার করলে ফলন ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত যেমন বেশি হয় তেমনি বীজ বপনের ক্ষেত্রেও ২৫ শতাংশ বীজ কম লাগে।

পটুয়াখালীতে খরচ কমেছে মুগডাল চাষের

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পটুয়াখালী সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শহিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘কৃষকরা চাইলে ব্যক্তিতভাবে কিংবা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এই মেশিন কিনতে পারবেন। কারণ সরকার এ ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতির জন্য ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছে।

এটি একটি সময় উপযোগী যন্ত্র। সময় বাঁচানো এবং লেবার বাঁচানোর জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। রবি মৌসুমে সময় যেহেতু কম থাকে সে কারণে দ্রুত চাষাবাদ শেষ করার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যায়।

সারাদেশে যে পরিমাণ মুগডাল উৎপাদন হয় তার বড় একটি অংশ পটুয়াখালী জেলায় উৎপাদিত হয়। আধুনিক এসব যন্ত্র ব্যবহার করে যাতে কৃষক আরও বেশি ফলন পেতে পারেন সে জন্য ‘পাওয়ার ট্রিলার অপারেটর সিডার মেশিন দিয়ে এবার বারি মুগ-৬ জাতের ডাল বীজ বপন করা হচ্ছে। কৃষকরা যাতে আধুনিক এসব কৃষি যন্ত্রপাতি এবং আধুনিক চাষাবাদের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে সে জন্য এ কৃষকদের সহায়তা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, এই অঞ্চলে মুগডালের ফলন ভালো হয় বিধায় এবারও সরকার বারি মুগ-৬ জাতটি চাষ করতে কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ সরবরাহ করছে। এর ফলে মুগডালের উৎপাদন আগামীতে আরও বাড়বে।’

পটুয়াখালীতে খরচ কমেছে মুগডাল চাষের

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক জানান, পটুয়াখালী জেলায় প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে মুগডাল চাষ হয়, এর মধ্যে বারি উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাত রয়েছে, তবে বারি মুগ-৬ বেশি চাষ হয়।

হিসেব করে দেখা যায় ‘পাওয়ার ট্রিলার অপারেটর সিডার যন্ত্র’ ব্যবহার করলে একদিনে আট কর্ম ঘণ্টায় সাড়ে তিন থেকে চার বিঘা জমিতে চাষ এবং বীজ বপন সম্ভব। আর যদি আগের পদ্ধতিতে কৃষক ট্রাক্টর মেশিন দিয়ে চাষাবাদ করে বীজ বপন করতো তবে কৃষকের বিঘা প্রতি অন্তত এক হাজার টাকা খরচ হত। তবে এই যন্ত্রে খরচ হবে মাত্র ৩০০ টাকা।’

আধুনিক এই যন্ত্র ব্যবহার লাভজনক হওয়ায় কৃষকরাও এটি ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আর মুগডালের পাশাপাশি এই যন্ত্র ব্যবহার করে সূর্যমুখী, ভুট্টাসহ অনান্য ডাল জাতীয় ফসলও বপন করা যায়।

আব্দুস সালাম আরিফ/এমএমএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।