ফলন ভালো হওয়ায় চাষ বেড়েছে ড্রাগনের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৫:২০ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

অডিও শুনুন

২০০৭ সালের দিকে দেশে সর্বপ্রথম থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে ড্রাগন ফলের বিভিন্ন জাত আমদানি করা হয়। এটি মূলত আমেরিকার একটি জনপ্রিয় ফল। বর্তমানে বাংলাদেশেও এর বেশ জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা গেছে। তাই দেশের অন্যান্য জায়গার মতো বরেন্দ্রভূমি খ্যাত রাজশাহী অঞ্চলেও আগের তুলনায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ড্রাগন ফলের চাষ।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, ড্রাগন এক ধরনের ক্যাকটাসজাতীয় বৃক্ষ। এই গাছের কোনো পাতা নেই। তবে ফুল ধরে। এই ফুল বিভিন্ন কীট-পতঙ্গ অথবা হাতের দ্বারা পরাগায়নের মাধ্যমে ফল আসে। ড্রাগন ফলের গাছ সাধারণত দেড় থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। একটি ফলের ওজন কমপক্ষে ১৫০ থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। এর বীজগুলো খুবই ছোট, কালো ও নরম।

ড্রাগন ফলের খোসার রং সাধারণত লাল হয়। তবে এর ভেতরের মাংসল অংশটি গাঢ় গোলাপি, হলুদ ও সাদা বর্ণের। এটি বেশ নরম, রসালো ও সুস্বাদু। ড্রাগন ফল সাধারণত গরমের সময় বেশি ফলে। আমেরিকা ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর চাহিদা ও বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) কর্তৃক উদ্ভাবিত ড্রাগন ফলের নতুন জাতটি হচ্ছে বারি ড্রাগন-১।

ফলন ভালো হওয়ায় চাষ বেড়েছে ড্রাগনের

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর (২০২০-২১ অর্থবছর) ২৭.০৮ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী সদরে ০.১৫ হেক্টর, পবা উপজেলায় ০.৫০ হেক্টর, তানোরে ০.৮০ হেক্টর, মোহনপুরে ০.১৩ হেক্টর, দুর্গাপুরে ০.৫০ হেক্টর, পুঠিয়ায় ৪ হেক্টর, গোদাগাড়ীতে ২০ হেক্টর ও চারঘাটে এক হেক্টর জমিতে ড্রাগনের আবাদ হয়েছে।

তবে বাগমারা ও বাঘায় ড্রাগনের কোনো আবাদের তথ্য মেলেনি। এসময় রাজশাহী অঞ্চলে হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে ১১.৯৯ মেট্রিক টন। মোট উৎপাদন হয়েছে ৩২৪.৭৮ মেট্রিক টন ড্রাগন ফল।

বর্তমানে (২০২১-২২ অর্থ বছর) ড্রাগন ফলের চাষ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬.৭১ হেক্টর যা পূর্বের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এর মধ্যে রাজশাহী সদরে ০.১৫ হেক্টর, পবা উপজেলায় ০.৫০ হেক্টর, তানোরে ০.৮০ হেক্টর, মোহনপুরে ০.১৩ হেক্টর, বাগমারায় এক হেক্টর, দুর্গাপুরে ০.১৩ হেক্টর, পুঠিয়ায় ৩ হেক্টর, গোদাগাড়ীতে ৫০ হেক্টর ও বাঘায় এক হেক্টর জমিতে ড্রাগনের আবাদ হয়েছে। তবে এবছর চারঘাটে ড্রাগন চাষের কোনো তথ্য মেলেনি বলে জানিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর।

ফলন ভালো হওয়ায় চাষ বেড়েছে ড্রাগনের

রাজশাহীর গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, গোদাগাড়ীকে বলা হয় পোড়ামাটির অঞ্চল। এ অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির ধরন ড্রাগন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এছাড়াও এটি একটি মেডিসিনাল প্লান্ট। স্বল্প খরচ, অধিক উৎপাদনশীলতা, পর্যাপ্ত বাজার চাহিদা, পুষ্টিগুণ এবং ভালো দাম পাওয়ায় গোদাগাড়ীতে ড্রাগন চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা।

একবার এই বাগান তৈরির পর সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে প্রায় ১৫-২০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এর চারা তৈরির কাজও খুব সহজ। ডাল কেটে মাটিতে বপন করলেই এটি সুন্দর বেড়ে উঠে।

তিনি বলেন, সাদা, গোলাপি ও হলুদ রঙের ড্রাগন ফল চাষ হচ্ছে গোদাগাড়ীতে। তবে সাদা ড্রাগন ফলের উৎপাদন বেশি ও চাষাবাদে খরচ কম হওয়ায় এর আবাদ বেশি। তবে বাজারে গোলাপি রঙের ড্রাগনের চাহিদা বেশি। তাই এটির চাষও হচ্ছে অনেক বেশি। তবে হলুদ রঙের ড্রাগনের দাম বেশি হওয়ায় এর আবাদ কম বলেও জানান তিনি।

ফলন ভালো হওয়ায় চাষ বেড়েছে ড্রাগনের

তিনি আরও বলেন, গোদাগাড়ীর বিজয়নগর, ভাটোপাড়া, বিদিরপুর, মাটিকাটা, গ্রোগ্রাম, কাকনহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে ড্রাগনের চাষ। গোগ্রামে প্রায় ৭৫ বিঘা জমিতে চাষ করছেন হেদায়েতুল হেলাল। একই এলাকার বরশিপাড়ায় অন্তু ইসলাম চাষ করছেন ১২ বিঘায়।

অন্যদিকে কাকন হাট এলাকায় প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করছেন আকবর আলী নামের অন্য এক ব্যক্তি। এছাড়াও আরো অনেকেই এ ড্রাগন চাষে এগিয়ে এসেছেন। এতে একদিকে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি অন্যদিকে এলাকায় কিছুটা বেকারত্বও লাঘব হচ্ছে।

গোগ্রামের ড্রাগন চাষি হেদায়েতুল হেলাল বলেন, ‘স্বল্প খরচ, ভালো উৎপাদন ও ব্যতিক্রমধর্মী ধরনের ফল দেখেই এটি চাষে উৎসাহিত হয়েছি। বর্তমানে এর বাজারটাও বেশ ভালো। তাই হয়তো এই এলাকায় এটির চাষ বাড়ছে।’

ফলন ভালো হওয়ায় চাষ বেড়েছে ড্রাগনের

কাকনহাট এলাকার আরেক ড্রাগন চাষি আশরাফুল আলম বলেন, ‘প্রথমদিকে ড্রাগনের পেছনে কিছুটা খরচ হলেও পরবর্তীতে তেমন খরচ করতে হয় না। আবার এটির বাজার চাহিদা অনেক বেশি, লাভও ভালো। একারণে আমিসহ গোদাগাড়ী অঞ্চলের অনেকেই ড্রাগন চাষে ঝুঁকেছেন।’

রাজশাহীতে ড্রাগন চাষের বৃদ্ধি বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজাহার হোসেন বলেন, বরেন্দ্রভূমি রাজশাহীতে ড্রাগন চাষ বেশ লাভজনক। কারণ ড্রাগন হচ্ছে মরুভূমি এলাকার ফল। এদিক থেকে রাজশাহীর কিছু অঞ্চলের মাটি অধিকাংশ সময় খরায় শুষ্ক থাকে।

এসব এলাকায় পেয়ারা ও বরইয়ের চাষ হয়। অন্য ফসল ভালো হয় না। আবার ড্রাগন চাষ সহজসাধ্য ও চাষে খরচও কম হয়। এর ফলে পোকামাকড় কম আক্রমণ করে আবার অতি বৃষ্টিতেও এর ক্ষতি হয় না। একারণে আগের চেয়ে বর্তমানে এর চাষ বেড়েছে। কাজেই এ অঞ্চলে ড্রাগন চাষ লাভজনক।

ফলন ভালো হওয়ায় চাষ বেড়েছে ড্রাগনের

অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়ে তিনি বলেন, ড্রাগনের বাজার দর ৩০০-৪০০ টাকা কেজি। তবে কেউ যদি ঢাকার বাজারগুলোতে এটি পাঠাতে পারেন তবে দাম পাবেন কমপক্ষে ৫০০ টাকা কেজি। এর ‘ফুড ভ্যালু’ বেশ ভালো হওয়ায় অনেকেই ফ্রুটস অ্যাসোসিয়েশন বা নিজ উদ্যোগে বিদেশে রপ্তানি করছেন।

শুধু তাই নয়, শহরাঞ্চলে এটি ছাদ বাগান ও উদ্যানেও চাষ হচ্ছে। আবার কেউ যদি এটিকে তার বারান্দার গ্রিলের পাশে একটি টবে লাগান তবে তাতে সাপোর্ট লাগবে না। এতে ওই বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে এবং বাড়ির মালিক ফলও পাবেন বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।

ফয়সাল আহমেদ/এমএমএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।