কৃষিকাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন চরাঞ্চলের নারীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৮:১৮ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০২১

অডিও শুনুন

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের বসতবাড়ির আশপাশে নারীরা শাক-সবজি চাষ ও গবাদিপশু পালন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। জেলার চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ সংলগ্ন প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর ফসল প্রতি বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাদ যায়নি চলতি বছরও।

এবছরের বন্যায়ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তাদের। এতে সেখানকার অনেক পরিবার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের নারীরা বসতবাড়ি ও এর আশপাশে শাক-সবজি চাষ করে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া ভেড়া, হাঁস-মুরগি পালন করে ভাগ্য বদলেরও স্বপ্ন দেখছেন চরাঞ্চলের এসব দরিদ্র নারীরা।

Kurigram4

নারীদের এ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন অনেকেই। বন্যায় তাদের ধানের বীজতলা, মাঠের ফসল, বাড়ির আশপাশের শাক-সবজি ও হাঁস মুরগির ব্যাপক ক্ষতি হয়। বন্যায় নষ্ট হয়ে যায় ঘর-বাড়ি, গরুর খাবার ও খড়ের গাদা।

এ ক্ষতি কমাতে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ। সংস্থার ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রকল্পের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের নারীরা শুরু করে বসতভিটায় সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি ও ভেড়া পালন। এতেই পাল্টে যেতে থাকে তাদের জীবনমান।

Kurigram4

সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পেয়ে তা কাজে লাগায় তারা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সরদারপাড়া থেকে ইউনিয়ন পরিষদ, বাজার, হাসপাতাল এবং স্কুল-কলেজে যাওয়ার রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় এলাকার মানুষের যাতায়াতের জন্য সীমাহীন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। সমষ্টিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে বন্যায় ভেঙে যাওয়া গ্রামের রাস্তা মেরামত করেন।

চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের নাইয়ারচর এফডিএমসির সদস্য মোছা. বুলবুলি বেগম। তিনি ফ্রেন্ডশিপের ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রকল্প থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের একটি ভেড়া পেয়েছেন। সেই ভেড়া থেকে এখন তার চারটি ভেড়া হয়েছে। ভেড়াগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য ১৬ হাজার টাকা।

বুলবুলি বেগম বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমার বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদন করে এবছর ৫ হাজার ১০০ টাকার সবজি বিক্রি করেছি, যা আমার সংসারের ব্যয়ভার বহনে খরচ হচ্ছে এবং আমি সবজি বিক্রির ৮ হাজার টাকায় একটি ছাগল কিনেছি।

Kurigram4

একই গ্রামের আইয়ুব আলী, সুমারী বেগম, বেহুলা খাতুন ও কছিরন বেগম বলেন, আগে হাট থেকে সার কিনে আনতাম, এখন আমরা কম্পোস্ট সার তৈরি করে ব্যবহার করি, ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে পোকা মারছি, সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করছি এবং গ্রামে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

‘ফ্রেন্ডশিপ’র ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষিবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গের সহায়তায় সদস্যদের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সম্পদ বৃদ্ধি এবং সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে।

অন্যদিকে বাল্যবিয়ে রোধ, পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ, জাতীয় সংসদ ও সংবিধান সম্পর্কে ধারণা, জিডি করার কৌশল শিক্ষামূলক আলোচনাসহ দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি, জনগোষ্ঠীর ভৌগোলিক দুর্দশাগ্রস্ততা হ্রাসকরণ এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলার মোট ২৪টি চরে ৭২১ জন সদস্যকে এ প্রকল্প সহায়তা প্রদান করে আসছে।

Kurigram4

চিলমারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশিদুল হক জানান, চিলমারী উপজেলায় ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশন ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে ২১১টি পরিবারকে ভেড়া দেয়া হয়েছে এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ফলে পরিবারগুলোর ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটি ভেড়াকে টিকা এবং কৃমিনাশক বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত স্থান। ভেড়া পালনের মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষ স্বাবলম্বী হবে বলে তিনি আশাবাদী।

মো. মাসুদ রানা/এমএমএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।