ইউটিউব দেখে চাষ করে ২৫ লাখ টাকার আনার বিক্রির আশা মোকাররমের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: ১২:৩৪ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২১

বাণিজ্যিকভাবে আনার চাষে শতভাগ সাফলতা পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের মোকাররম হোসেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তার আনার বাগানে বিপুল পরিমাণ ফল এসেছে। তার এই সফলতা দেখে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক আগ্রহী হয়েছেন আনার চাষ করতে।

মোকাররম হোসেনের কাছ থেকে আনার চাষের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শও নিচ্ছেন নতুন উদ্যোক্তারা। এ বছর বাগান থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকার আনার ফল বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। অত্যন্ত সুস্বাদু ও ওষুধি গুণসম্পন্ন এ ফল এতোদিন বিদেশি ফল হিসেবেই পরিচিত ছিল। কিন্তু দেশের মাটিতেই প্রথম এ ফলের সফল চাষ হয়েছে উদ্যোগী তরুণ মোকাররম হোসেনের হাত ধরেই।

anar1

ভিটামিন সমৃদ্ধ আমদানিনির্ভর আনার চীন, ভারত, নেপাল, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে শত শত টন আনার বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে আমদানি করা হয়। তবে এবার দেশের মাটিতেই চাষ হচ্ছে আনার। চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা মোকাররম হোসেন তিন বছর আগে পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ করেন এ বিদেশি ফলের। ইতোমধ্যে ফলে ভরিয়ে তুলেছেন গোটা আনার বাগান। এক সপ্তাহ পরেই বাগান থেকে বাণিজ্যিকভাবে ফল বিক্রিও শুরু হবে।

এর আগে মোকাররম হোসেন কয়েক বছর থেকেই বিভিন্ন ফলের চাষ করার চেষ্টা করে আসছেন। কিন্তু বার বার তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। পরবর্তীতে একজনের পরামর্শে বিদেশি ফল আনার চাষ করে সফলতা লাভ করেন তিনি। দেশে এই ফলের চাহিদা মেটানোর জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে তোলেন আনার বাগান।

anar1

কৃষি উদ্যোক্তা ও আনার চাষি মোকাররম হোসেন বলেন, প্রথমে তিনি ইউটিউবে আনার চাষ দেখে এই ফলটি চাষ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ফলটি চাষের জন্য তিনি ভারতের একটি কৃষি খামারের সাথে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে তাদের পরামর্শ নিয়েই এই ফলের বাগান শুরু করেন তিনি। তিন বছর আগে পাঁচ বিঘা জমিতে এসসিটি ভাগুয়া জাতের ৮০০টি গাছ রোপণ করেন।

চারা রোপণের এক মাস পূর্বে তিনি ওই জমিতে ৮ ফুট করে দূরত্বে এবং প্রতি লাইনের মাঝে ১২ ফুট জায়গা ফাঁকা রেখে একটি করে গর্ত করেন। এক ফুট গভিরতার ওই গর্তের ভেতর ৩০ কেজি করে গবর সার (জৈব সার), ৫শ’ গ্রাম চুন এবং ২ কেজি করে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোজ) দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জমি উপযুক্ত করে তোলেন।

anar1

এতে তার প্রথম বছরে চারা কেনা, জমি তৈরি ও পরিচর্চাসহ বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। চারা রোপণের দুই বছর পরই গাছে ফুল আসতে শুরু করে। ফুল থেকে ফল পরিপূর্ণ হতে ৪ মাস সময় লাগে।

তিনি জানান, বছরে ২-৩ বার ফল সংগ্রহ করা যাবে আনার গাছ থেকে। প্রতিটি গাছ থেকে দুই বারে ৫০ কেজি ফল পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে চলতি বছরে বাগানে ৮০০ আনার গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল এসেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি আনার ২শ’ টাকা থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার প্রায় ২৫ লাখ টাকার আনার বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। এর আগে গত বছর তিনি ৫ লাখ টাকার আনার বিক্রি করেছিলেন। আর এক সপ্তাহ পরই ফল বাজারে বিক্রি শুরু হবে।

anar1

বাজারে আনার ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিটি আনার ফলের বাইরের ও ভেতরের রঙ টকটকে লাল। খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি। তার দাবি, এ চাষ দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং প্রতি কেজি আনার ১শ’ টাকার ভেতরে কিনতে পাবে ভোক্তারা।

তিনি আরও জানান, ভারতের কৃষি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সয়েল চার্জার টেকনোলজির সাথে যৌথভাবে এ চাষ করছেন মোকাররম হোসেনের গ্রীনভিসতা সয়েলটেক অ্যান্ড এগ্রো ফার্ম। এ কারণে সয়েল চার্জার টেকনোলজির সিনিয়র কনসালটেন্ট কৃষিবিদ হারসাল মুখেকার সার্বক্ষণিক এ আনার বাগানের দেখভাল করেছেন। তার মতে, বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া আনার চাষের জন্য বেশ কঠিন ছিল। সেই কঠিন কাজটি সহজ করতে অনেকটা বেগ পেতে হয়েছে। এক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রযুক্তিও ব্যবহার করতে হয়েছে।

anar1

রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মোকাররম হোসেনের বাগানের গাছে গাছে শোভা পেয়েছে বিভিন্ন সাইজের আনার। বাগানে আনার থোকায় থোকায় ডালে ঝুলছে। সবুজ পাতার আড়ালে আবার পাতা ঝরা ডালেও ঝুলে আছে মনকাড়া আনারের থোকা। চারিদিকে যেন মনোরম বাগান সবুজের বিশাল সংগ্রহশালা। দেশের প্রথম আনারের বাগান এটি। আনার বাগান দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শতশত মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন বাগানটিতে।

বাগানে কর্মরত মাজেদুর রহমান বলেন, রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামটি মূলত একেবারে ভারত সীমান্তঘেঁষা। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। আনার বাগানটি হওয়াতে অনেকেই এখন বাগানটিতে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। এখান থেকে উপার্জিত অর্থে জীবিকানির্বাহ করছেন তারা।

anar1

চুয়াডাঙ্গার কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলী হাসান জানান, এই ফলটি চাষের ব্যাপারে আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। স্থানীয় ধনী ও মাঝারি কৃষকরা আনার চাষে এগিয়ে আসলে দেশে চাহিদা মিটানোর পরও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। আমাদের এলাকায় এটাই প্রথম আনার চাষ।

মোকাররম হোসেন আনার চাষে সাফল্য পাওয়ায় চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে আনার চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আশা করছি মোকাররম হোসেনের সাফল্য দেখে এলাকার মানুষ আনার চাষে আরও উদ্বুদ্ধ হবে।

ভবিষ্যতে তার এ সাফল্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়া আনার বাগানটির উদ্যোক্তা শতভাগ সফল হলে দেশে ফলের আমদানি নির্ভরতা কমবে। একই সঙ্গে ক্রয়মূল্যও ভোক্তার হাতের নাগালে থাকবে।

সালাউদ্দীন কাজল/এমএমএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।