আলুর ফলন ভালো হলেও হতাশায় কৃষকরা
আলু উৎপাদনে দেশের শীর্ষ স্থানীয় জেলা মুন্সীগঞ্জে শুরু হয়েছে জমি থেকে আলু উত্তোলন। চলতি মাসজুড়ে জেলার ৬ উপজলায় চলবে এ কর্মযজ্ঞ। কৃষিস্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ৩৭ হাজার ৭৮০হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে আলু। এতে গতবছরের চেয়ে কিছুটা বেশি আবাদ হলেও এবছরের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
এরমধ্যে শুক্রবার (১২মার্চ) পর্যন্ত জেলার ৭ হাজার হেক্টর জমি থেকে আলু উত্তোলন করেছেন কৃষকরা। এদিকে এ বছর আলুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে উৎপাদন ব্যয় অনুযায়ী বাজারে আশানুরূপ দাম না পেয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মাঝে।
শুক্রবার দিনব্যাপী সরেজমিনে সদর ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার ঘুরে দেখাযায়, বিস্তীর্ণ জমিতে আলু উত্তোলনের কাজ করেছে কৃষকরা। জমির আইলে লাঙলের টানে বেরিয়ে আসছে সাদা-লাল সারি সারি আলু। কৃষকরা এসব আলু জমি থেকে তুলে গোলা (স্তূপ) করছে। কোনো কোনো জমি থেকে আবার বস্তায় ভরে নেয়া হচ্ছে কোল্ড স্টোরেজে। তবে অন্যান্য বছর জমিতেই ক্রেতার উপস্থিতিতে থাকলেও এ বছর খুব একটা নেই।
কৃষকরা জানায়, এ বছর আলু উৎপাদনে কেজি প্রতি ১১টাকার বেশি খরচ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাজারে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ১১-১২টাকায়। বাজার ভালো না হলে লোকসান গুণতে হবে এবার। সদর উপজেলার টর্কি এলাকার কৃষক জয়নাল বেপারী জানান, বীজ আলু রোপণের পর ৩মাস পর আলু উঠানোর সময় আসে।
এ বছর বন্যার কারণে আমাদের প্রায় জমিতে দেরিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। তবে ফলন ভালো হয়েছে। ফলন ভালো হলে কি হবে দাম তো নাই।
আরেক কৃষক আব্দুল আওয়াল জানান, আলুর দাম বাড়লে সরকার মানুষের কথা চিন্তা কইরা দাম ঠিক (নির্ধারণ) কইরা দেয়। কৃষকরা এখন দাম পাইতাছে না। এখন কৃষকদের কথা চিন্তা কইরা আমাগো যেন কিছুটা লাভ হয় এমন দাম ঠিক কইরা দেক।
কৃষক মনির হোসেন বলেন, লাভের আশায় ১৫বিঘা জমিতে আলু চাষ করছি। এখন আলুর দাম নাই, বিক্রি-চালানে সমান সমান। আবার কেউ লসও করতাছে। পরে দেখা যায় দাম বাড়বে তখনতো কৃষকদের হাতে আলু থাকবে না।
এ বিষয়ে জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শাহ-আলম বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব আলু উত্তোলন করা হয়েছে সেখানে বিঘা প্রতি ১৪০মণ অর্থাৎ হেক্টর প্রতি ৩৭ মেট্রিক টন ফলন হয়েছে। জাতীয় হিসাবে হেক্টর প্রতি আলু হয় ১৮-২২মেট্রিক টন। তাই বুঝাই যাচ্ছে এ জেলায় কতটা ভালো ফলন হয়েছে।
মাঝে আলুর দাম বৃদ্ধি পেলেও এখন দর পরে যাওয়ায় দাম কিছুটা কম। তবে আমাদের প্রত্যাশা সরকার ধান-চাল ক্রয় করে সংরক্ষণ করে তেমনি আলু ক্রয় করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সে আলু বাজারজাত করা হয় সেক্ষেত্রে কৃষকদের লোকসান এড়ানো যাবে। এছাড়া আলুকে কেন্দ্র করে যেসব কারখানা করা যেতে পারে সেগুলো করা হলে বহুমুখী ব্যবহারে আলুর চাহিদা সবসময় থাকবে।
তিনি আরো বলেন, কৃষকদের আলু উৎপাদনে কেজি প্রতি ১১টাকার বেশি খরচ হয়েছে , তারা যদি ১৫টাকা কিংবা ২০টাকা ধরে বিক্রি করতে পারে তবে ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারবে।
আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি:
এবছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭২০হেক্টর কম জমিতে আবাদ হয়েছে আলু। জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার ৬ উপজেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩৮ হাজার ৫হেক্টর জমিতে । তবে আবাদ হয়েছে জমিতে ৩৭হাজার ৭৮০হেক্টর।
এ বিষয়ে জেলা কৃষিস্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, আবাদ মৌসুমে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে জমি থেকে দেড়িতে পানি নামে। এছাড়া অনেক স্থানে আবারে র্দীঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কারনে সেসব জমিতেই আবাদ সম্ভব হয়নি।
তাই এ বছর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। যেসব জমিতে আলুর আবাদ করা যায়নি সেখানে পরবর্তীতে কৃষকদের অন্য ফসলের আবাদ করার পরামর্শ ও প্রণোদনা দেয়া হয়েছিলো। তবে ফলন ভালো হয়েছে আশা করা যাচ্ছে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জন হবে।
আরফাত রায়হান সাকিব/এমএমএফ/এমএস