১০ হাজার টাকা খরচে মাল্টা চাষে ৫ লাখ টাকা লাভের আশা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: ১১:৩৪ এএম, ২২ অক্টোবর ২০২০

কয়েক বছর আগেও লাভজনক মাল্টার আবাদ নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন ঝিনাইদহের কৃষকরা। এখন সে শঙ্কা কাটিয়ে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন তারা। কম জায়গায় এবং অল্প পুঁজিতে লাভ বেশি হওয়ায় মাল্টার বাণিজ্যিক আবাদের দিকে ঝুঁকছে বেকার যুবকরা।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় এ বছর ৬৩ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে। আগামীতে মাল্টা চাষের পরিধি বাড়াতে তারা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

Malta-(1)

সদর উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক সেলিম উদ্দিন ও জাকির হোসেন নামে দুই যুবক দুই বছর আগে দুই বিঘা জমিতে শুরু করেছিলেন মাল্টার আবাদ।

এ বছর প্রথম ফল এসেছে তাদের গাছে। এ বাগানের বিক্রির উপযোগী ফলের মান ভালো রাখতে নিচ্ছেন বাড়তি পরিচর্যা। এখন পর্যন্ত বাগানে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। ফল বিক্রিতে লাভের আশা করছেন কয়েকগুণ। ইতিমধ্যে তারা এ বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকার চারা বিক্রিও করেছেন। এসব বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় অনেক কৃষক পেয়ারার সাথে মিশ্র পদ্ধতিতে মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

Malta-(2)

বাগান দেখতে আসা সাহেব আলী নামের এক ব্যক্তি জানান, গ্রামে বিদেশি ফল মালটার আবাদ করেছে দুই যুবক- এটা জানতে পেরে আমি বাগানটি দেখতে এসেছি। এসে দেখি খুবই সুন্দর ফল ধরেছে। একটি ফল খেয়ে দেখেছি বাজারে যে ফল পাওয়া যায় তার থেকে অনেক বেশি সুস্বাদু।

Malta-(3)

মাল্টা চাষি জাকির হোসেন জানান, মাল্টা একটা বিদেশি ফল। আমাদের দেশের ফলের মার্কেট ভালো এবং মাল্টা চাষ অনেক লাভবান। আমার বাগানে প্রথম ফল এসেছে, ফল ইতিমধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়েছে। অনেক পাইকার ফল কেনার জন্য যোগাযোগ করছেন। ৮০ থেকে ৯০ টাকা করে তারা বলছেন। কিন্তু আমি চাচ্ছি আরেকটু বেশি।

Malta-(4)

মাল্টা চাষি সেলিম উদ্দিন জানান, আমরা দুজন মিলে দুই বছর আগে মাল্টা বাগান করেছি। এ বছর প্রথম ফল এসেছে। ফলের মান অনেক ভালো। এখন বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত। কিছুদিন পরই এগুলো বিক্রি করার উপযুক্ত হবে। তিনি জানান, অন্যান্য ফলের তুলনায় একটা মাল্টা বাগানের খরচ খুবই কম। যেমন আপনি এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা খরচ করেন সেখানে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লাভের আশা করতে পারেন।

Malta-(6)

এসব বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় অনেক চাষিই মিশ্র পদ্ধতিতে এ চাষ শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে মসলেম হোসেন জানান, গ্রামের পাশের দুটি ছেলে মাল্টা বাগান করেছে। পাশাপাশি তারা চারা বিক্রির জন্য নার্সারি গড়ে তুলেছে। আমি তাদের কাছ থেকে কিছু চারা কিনে আমার পেয়ারা বাগানের সাথে মিশ্র চাষ শুরু করেছি।

আরেক মাল্টা চাষি রেজুয়ান বলেন, আমি ডিগ্রি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। চাকরি না পেয়ে গ্রামের জাকির ও সেলিম ভাইয়ের কাছ থেকে ৫০ টাকা দরে মাল্টার চারা কিনে ৮ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেছি।

Malta-(6)

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, বেলে দো-আঁশ মাটিসমৃদ্ধ এলাকায় বারি মাল্টা-১ চাষ সম্প্রসারণে চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এটি অত্যন্ত লাভজনক। প্রতি বিঘা জমিতে ১০০ থেকে ১২০টি মাল্টা চারা রোপণ করে একটানা ২০ বছর ফল সংগ্রহ করা যায়।

প্রতিটা গাছ থেকে প্রথম বছর ১০ থেকে ২০ কেজি হারে ফল পাওয়া যায় এবং দ্বিতীয় বছর থেকে গড়ে এক মণের বেশি ফল সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত চারা রোপণের দুই বছর পর গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়।

এমএমএফ/এসইউ/এএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।