বানরের জন্য নেই ত্রাণ, ওদের কান্না থামাবে কে?

শিহাব খান
শিহাব খান শিহাব খান , উপজেলা প্রতিনিধি শ্রীপুর (গাজীপুর)
প্রকাশিত: ০৩:৩৮ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২০

গাজীপুরে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অন্যতম প্রসিদ্ধ এলাকা শ্রীপুরের বরমী। কথিত আছে, শীতলক্ষ্যার তীরবর্তী এ বাজারে নিয়মিত অবাধ বিচরণ ছিল বার্মার ব্যবসায়ীদের। তাদের মাধ্যমে প্রায় দুই শতাব্দি আগে এ বাজারে মানুষের সাথে সাথে আস্তানা গড়ে তোলে বন্যপ্রাণি বানর। দীর্ঘদিন ধরে বাজারের দোকান থেকে তাদের খাবারের সংস্থান হয়ে আসছে।

সম্প্রতি করোনাভাইরাস রোধে লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকায় চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে প্রায় সহস্রাধিক বানর। খাবারের অভাবে অভুক্ত বানরের কান্না যেন বাড়ছেই। করোনাভাইরাস আতঙ্কে শূন্য বাজারে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখলেই খাবারের আশায় ক্ষুধার্ত বানরগুলো নির্বাক চোখে তাকিয়ে থাকে।

banor-cover

স্থানীয়রা জানান, বাজার এলাকায় বানর দলবেঁধে চলাচল করে। কখনো নদীর ধারে, আবার কখনো দোকানের টিনের ছাদে এদের দেখা মেলে। বন্যপ্রাণি হলেও বন না থাকায় সামাজিক ভাবে এরা বাজারের বিভিন্ন মানুষের বাসা-বাড়ি বা দোকানের পরিত্যক্ত স্থান বা গাছে আস্তানা গড়ে তুলেছে। বুদ্ধিমান হিসেবে বানর খুব পরিচিত। এরা নিরামিষভোজী হলেও বাসস্থান বা খাবারে বেশ বৈচিত্র আছে।

একসময় বিভিন্ন দোকান থেকে তাদের চাহিদামত খাবারের ব্যবস্থা করতে হতো। অন্যথায় তাদের অত্যাচার বেড়ে যেত। নানা দিক বিবেচনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বানরের খাবারের জোগান দিয়ে আসছে বছরের পর বছর। এবার করোনাভাইরাস রোধে ঘোষিত লকডাউনে বাজারের দোকানপাট বন্ধ থাকায় তাদের চাহিদামত খাবারের ব্যবস্থা হচ্ছে না।

banor-cover

বাজারের ব্যবসায়ী রিপন সাহা জানান, বাজারের ব্যবসা প্রায় মাসখানেক ধরে বন্ধ। বাসা থেকে বানরের কান্না শুনতে পান তিনি। অভুক্ত এ প্রাণিগুলো দেখে মায়া হয়। তিনি দুই দিন কিছু কলা-রুটি দিয়েছেন। এলাকায় মানুষ ও বানর একসাথে বসবাস করলেও এখন অসহায় হয়ে পড়ছে বানরগুলো।

তারেক ভূইয়া জানান, পরিবেশের ভারসাম্য হারানোর কারণে প্রকৃতি থেকে খাবার গ্রহণের কোনো ধরনের সুযোগ বানরের নেই। এখন যদি তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাবারের ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে একদিকে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে; অপরদিকে বিপন্ন হয়ে যাবে এলাকার বানরগুলো।

banor-cover

ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল হক বাদল সরকার জানান, নিয়মিত খাবার দেওয়া না হলে এরা বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে অত্যাচার শুরু করে। বানরের জন্য করা তহবিল শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুনভাবে আর বরাদ্দ আসে না। ফলে এখন খাবার দেওয়া যাচ্ছে না। করোনার কারণে বাজার লকডাউনে থাকায় কোনো খাবারই ওদের ভাগ্যে জুটছে না।

banor-cover

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা কাজল তালুকদার বলেন, ‘এ মুহূর্তে বানরের খাবার সহায়তা দেওয়ার মত কোনো বরাদ্দ আমাদের নেই। তবুও করোনার প্রভাবে অভুক্ত থাকায় মানবিক দিক বিবেচনায় বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।