বছরের ৬ মাস পানির নিচে যে এলাকা
বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলা বিল অঞ্চল বছরের ৬ মাসই পানির নিচে থাকে। ফলে এই এলাকার বাসিন্দাদের প্রধান বাহন নৌকা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে চলতে নৌকাই তাদের ভরসা।
উপজেলার ধামুরা, সাতলা, বাগদা, কারফা ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। উপকূলীয় এই জনপদে ছোট-বড় একাধিক বিল রয়েছে, যেখানে পানির মাঝে দ্বীপের মত জেগে আছে একেকটি বসতঘর। অথই পানিতে বছরের ৬ মাস এই বসতবাড়িগুলো বন্দী থাকে। এই জনপদে শতাধিক পরিবার বাস করে, যাদের ঘর থেকেই পা ফেলতে হয় নৌকায়। আবার ফিরে এসে নৌকা থেকে পা রাখতে হয় নিজের ঘরে।
> আরও পড়ুন- ডাকাতিয়ার কেন এই মরণদশা
এখানে সব কাজেই নারী-পুরুষকে হাতে নিতে হয় নৌকার লগি বা বৈঠা। পরিবারের শিশুটিও দক্ষ হয়ে ওঠে নৌকা চালনায়। কারণ উপকূলীয় ২১টি জেলায় নদ-নদী, খাল-বিল থাকায় নৌকাই তাদের অতি প্রয়োজনীয় বাহন। বিলে বসবাসরত মানুষগুলো নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, ক্যাবল, নিরাপদ পানি থেকেও তারা বঞ্চিত।
এই জনপদের কন্যাশিশু শিপ্রা। সে জানায়, ছোটবেলা থেকেই নৌকা তার প্রয়োজনের সাথী। বাড়ি থেকে বান্ধবীর বাড়িও যেতে হয় নৌকায়। তার বাড়ি আর বান্ধবীর বাড়ির মাঝে একটি খাল। এই খালে তারা প্রতিদিন নৌকা ভাসায়। নৌকায় তাদের কখনোই ভয় লাগে না বরং নৌকাই তাদের ভরসার জায়গা।
> আরও পড়ুন- বজ্রপাত প্রতিরোধ করবে তালগাছ
এছাড়া নৌকায় ভেসে ভেসে স্কুলে যেতে যেতে শত গল্পও সৃষ্টি হয় স্কুলপড়ুয়া শিশুদের মাঝে। স্কুলে যাওয়ার পথে একাধিক বন্ধুর বাড়িতে নৌকা থামিয়ে তুলে নেওয়া হয় তাদের। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাসেল, আমিনুল, আবির ও তন্ময় মিত্র জানায়, তাদের জীবনে কোন পার্ক বা নামিদামি ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে ঘুরতে যাওয়া হয়নি। তারা বিলাসবহুল সুইমিং পুল কখনো দেখেনি। তবে তাদের আছে এমন প্রাকৃতিক সুইমিং পুল আর ওয়াটার ওয়ার্ল্ড।
বরিশাল সদর থেকে এই জনপদ প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে। প্রত্যন্ত এ গ্রাম শত অভাব-অনটন আর সুবিধাবঞ্চিত হলেও মানুষগুলো অনেক সুখি। তারা জানান, তাদের সুন্দর একটি প্রকৃতি আছে। সকালে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে। সাতলা বিলে শাপলা ফোটে, যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে আসে। প্রতিদিন ভ্রমণপিপাসুরা গ্রাম আর শাপলার বিল দেখতে আসে। নৌকার ছলছল শব্দ তাদের বেঁচে থাকার গতি আনে।
এসইউ/জেআইএম