২ লাখ টাকায়ও বনসাই বিক্রি করেননি সেলিনা

রিপন দে
রিপন দে রিপন দে মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০৪:৩৯ পিএম, ১৫ আগস্ট ২০১৮

এক ফুট থেকে দুই ফুট উচ্চতার একেকটি গাছের দাম ২ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা। শখের বসে শুরু করলেও এখন এর অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে নিজেই অবাক। নীরবে এক বিপ্লব ঘটিয়েছেন সেলিনা পারভিন। সেলিনা পারভিন একজন বনসাইপ্রেমী। শখের বসে শুরু করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে ভালোই আয় হচ্ছে তার বনসাই বাগান থেকে। ইতোমধ্যে হয়েছেন দেশের সেরা। পরিচিতি পেয়েছেন দেশ-বিদেশে।

সেলিনা পারভিন কুষ্টিয়ার মেয়ে। বিবাহ করেছেন একই জেলার কাজল মাহমুদকে। কাজল মাহমুদ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার গাজীপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক। স্বামীর কর্মস্থল হওয়ায় ১৯৯৬ সাল থেকেই বসবাস করছেন মৌলভীবাজারে। চা বাগানের বাংলোতে গড়ে তুলেছেন বনসাই রাজ্য।

bonsai-in

চেনা-অচেনা বা বিলুপ্তপ্রায় গাছসহ আছে প্রায় ২০০ প্রজাতির গাছ। তার মধ্যে বিভিন্ন জাতের বট, নারিকেল গাছ, পাকুড়, হিজল, তমাল, জাম, আমলকি, শ্যাওড়া, জারুল, ডুমুর, ডালিম, কদম, নিম, জামরুল, বাবলা, কৃষ্ণচূড়া, কামরাঙা, বকুল, অশোক, কুল, পাইন, বাঁশ, তেঁতুল, আম, কাঁঠাল, জলপাই, সফেদা ও বিভিন্ন প্রকার ফুলসহ অনেক প্রজাতির গাছ রয়েছে। এক ছাদের নিচে এত গাছের জায়গা দেওয়া সম্ভব হয়েছে এই বনসাই শিল্পের কারণে।

সেলিনা জানান, স্কুল জীবন থেকে ম্যাগাজিনে পরিবেশ বা গাছ নিয়ে কোন আর্টিকেল চোখে পড়লে, তা মনযোগ দিয়ে পড়ার সাথে সাথে কেটে ফাইলে রেখে দিতেন। এভাবেই আগ্রহ জন্মে বনসাইয়ের প্রতি। একটু একটু করে শুরু করেন। দিনে দিনে এ শিল্প রপ্ত করে ফেলেন। প্রথমে বাণিজ্যিক কোন চিন্তা ছিল না। নিজের ভালো লাগা থেকেই কাজটি শুরু করেছিলেন। এখন বুঝতে পেরেছেন এর বাজার মূল্য অনেক। গত সপ্তাহে একটি বনসাইয়ের দাম ২ লাখ টাকা বলাতেও তিনি বিক্রি করেননি। তার ধারণা এ গাছের বাজার মূল্য এখন ৩ লাখ টাকা।

bonsai-in

তিনি জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে গাছ সংগ্রহ করে সে গাছ টবে লাগানো হয়। এর জন্য দরকার অনেক সময় ও পরিচর্যা। দিতে হয় নিয়মিত সেচ ও সার। সামান্য হেলাফেলার সুযোগ নেই। স্বামী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার সংসারে বনসাইগুলোও সমান যত্ন পায়। এ কাজের মাধ্যমে নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি।

bonsai-in

একবার বিদেশ থেকে একদল পর্যটক এসে বনসাই বাগান দেখে জানতে চান, এগুলো তৈরি করা নাকি কিনে আনা হয়েছে? সেলিনা পারভিন নিজের কাজের বর্ণনা দিলেন। সেদিন স্বামী কাজল মাহমুদের সামনেই পর্যটকরা এর বাজার মূল্যের কথা জানালেন। বনসাইয়ের এত দাম জেনে অবাক হলেন সেলিনা পারভিন। তবে মনে মনে খুশি হলেন, শখের বসে এত দামি কিছু করতে পেরেছেন বলে। তারপর স্বামীর উৎসাহের মাত্রা বেড়ে গেল। এছাড়া বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটি তাকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তিনি বনসাই সোসাইটির একাধিক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। প্রদর্শিত বনসাই পেয়েছে প্রথম পুরস্কার।

সেলিনা পারভিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ চর্চার মাধ্যমে গাছের প্রসার হচ্ছে। অনেক বিলুপ্ত গাছ রক্ষা পাচ্ছে। শহরের শিশুরা গাছ চিনতে পারছে। বনসাই প্রদর্শনীতে এসে অনেকে প্রকৃতিপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।’

bonsai-in

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি অধিদফতরের উপপরিচালক মো. শাহাজান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সেলিনা পারভিনের বনসাই জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়েছে, তা অবশ্যই গর্বের। তাই যে কোন ধরনের সাহায্য চাইলে তা করতে প্রস্তুত জেলা কৃষি অফিস।

রিপন দে/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।