পোষাপ্রাণির সব সেবা মিলবে একই ছাদের নিচে

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ অন্যতম বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে বিভিন্ন প্রাণি পালন করছে। এর মধ্যে কুকুর ও বিড়াল সবচেয়ে বেশি হলেও খরগোশ, গিনিপিগ, হ্যামস্টারসহ বিভিন্ন পাখিও রয়েছে এই তালিকায়। এসব পোষা প্রাণি পালনে যেমন দরকার খাদ্য ও বাসস্থানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, তেমনি অসুস্থ হলে দরকার সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের কাছের এই সঙ্গীদের সব ধরনের সেবা একই ছাদের নিচে পাওয়া অনেকটাই দুষ্কর। এমন প্রেক্ষাপটে একই ছাদের নিচে সেই সমন্বিত সেবা দেয়ার স্বপ্ন দেখেছেন ১১ বার আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে ভূষিত স্বনামধন্য পোষাপ্রাণি চিকিৎসক ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম।

তারই ধারাবাহিকতায় পোষা প্রাণির মানসম্মত চিকিৎসা, সঠিক রোগ নির্ণয় ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সহজলভ্য করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে সম্প্রতি ধানমন্ডির জিগাতলায় ইউরোপা স্কুল লেনের ৬৮/১০ নং বাড়িতে সর্বাধুনিক স্বাস্থ্য সেবার অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ড. কেবিএম সাইফুল’স ভেট অ্যান্ড পেট কেয়ার।

প্রতিদিন সেখানে স্বাস্থ্য সচেতন পোষাপ্রাণি প্রেমী অনেকেই তাদের প্রিয় পোষাপ্রাণিকে নিয়ে হাজির হচ্ছেন। তাদেরই একজন নাজরীন বলেন, বাসায় ছোটবেলা থেকেই বিড়াল রয়েছে। কিছুদিন আগে আমার আদরের বিড়ালটার মারাত্মক অসুখ হয়, পুরো ঢাকা শহর ঘুরে কোথাও এর সুচিকিৎসা পাইনি। তখন ফেসবুকের মাধ্যমে ড. কেবিএম সাইফুল স্যারের কথা জানতে পারলাম। এরপর তার কাছে আমার অসুস্থ বিড়ালটাকে নিয়ে আসি। তার সুচিকিৎসায় আমার বিড়ালটা এখন পুরোপুরি সুস্থ আছে।

তমা হোসেন নামে আরেকজন প্রাণি পালনকারী বলেন, আমি দীর্ঘ ছয় বছর যাবত কুকুর ও বিড়াল পালন করি। ছোটবেলা থেকেই এরা আমাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী, কিন্তু এদের চিকিৎসার জন্য কোনো ভাল জায়গা পাচ্ছিলাম না। পরে এক বন্ধুর কাছ থেকে ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম স্যারের নাম জানতে পারি। ওনার তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে পোষা প্রাণির চিকিৎসার অত্যাধুনিক সুযোগ রয়েছে যা দেখে আমি আনন্দিত। আশা করি উন্নত দেশের মত ভেট অ্যান্ড পেট কেয়ারে পোষা প্রাণিদের চিকিৎসার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সব ধরনের সুযোগ সুবিধাও থাকবে।

ড. কেবিএম সাইফুল’স ভেট অ্যান্ড পেট কেয়ারের অন্যতম উদ্যোক্তা ও পেট ডট কম ডট বিডির কর্ণধার রাবিতা ভূঁইয়া তনয়া ও দেওয়ান রকিব শাহ’র মতে, পোষা প্রাণির খাদ্য ও সৌখিন দ্রব্যাদি বা প্রোডাক্ট নিয়ে আমরা কাজ করছি দীর্ঘদিন। কিন্তু ওদের পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সুপ্ত বাসনা সবসময় মনের মধ্যে ছিল। ড. কেবিএম সাইফুলের মত আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রাণি চিকিৎসকের সঙ্গে একত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়ে নিজেদের অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করছি। আশা করি, সবার সহযোগিতায় পোষাপ্রাণিদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়ান স্টপ সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে পারব।

ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, যে কোনো বড় স্বপ্নের শুরুটা ছোট থেকেই করতে হয়, চারাগাছই একসময় মহীরুহতে পরিণত হয়। স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের পোষা প্রাণির হাসপাতাল গড়ে উঠবে, যেখানে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবার সব আধুনিক সু্যোগ সুবিধা থাকবে। শুরুটা ছোট আঙ্গিকে হলেও আমরা ধীরে ধীরে আমাদের সেবার ক্ষেত্র প্রসারিত করে চলছি। বর্তমানে আমাদের টিমে চার জন রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ান কাজ করছেন। এছাড়া দেশ বিদেশের বিশিষ্ট ভেটেরিনারিয়ানদের সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক যোগাযোগ ও সমঝোতা রয়েছে। ফলে জটিল ও দুরারোগ্য রোগের ক্ষেত্রে মানুষের চিকিৎসার মতো প্রয়োজনে বোর্ড গঠন করে পোষাপ্রাণির রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা দেয়ার সুযোগ আমাদের এখানে থাকবে। আমরা পোষাপ্রাণির চিকিৎসায় বাংলাদেশে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে চাই।

কথাপ্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, কুকুর-বিড়ালের রোগ নির্ণয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির র‌্যাপিড টেস্ট কিট ব্যবহার করা হবে। যেমন, কুকুরের প্রাণঘাতী পারভো ভাইরাস ও ক্যানাইন ডিসটেম্পার এবং বিড়ালের ব্লাড ক্যান্সার ও এইডসের মত দুরারোগ্য রোগ নির্ণয় করা যাবে। এছাড়া কুকুর-বিড়ালের বিভিন্ন শারীরিক অবস্থা যেমন, ডায়াবেটিকস, কিডনি রোগ ইত্যাদিতে প্রয়োজন অনুযায়ী ডায়েট ব্যবস্থাপনা থাকবে। অর্থাৎ এখন থেকে একই ছাদের নিচে পোষাপ্রাণি পালনে সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে।

মো. রাকিব খান/এমএমজেড/এমএস