সুস্বাদু ফল আমড়া চাষ করবেন যেভাবে
আমড়া একটি সুস্বাদু ফল। দেশের বরিশাল অঞ্চল আমড়ার জন্য বিখ্যাত। তবে সব অঞ্চলেই আমড়া চাষ করা যায়। আসুন জেনে নেই আমড়া চাষের পদ্ধতি।
বংশ বিস্তারবীজ বা কলমের মাধ্যমে আমড়ার বংশ বিস্তার করা যায়। পরিপক্ক আমড়া বীজ থেকে শাঁস ছাড়িয়ে নিয়ে বালিতে রোপণ করতে হয়। চারা গজানোর পর ছোট অবস্থায় চারাগুলো তুলে কম্পোস্ট ও ভিটিবালি মিশ্রিত অন্য টবে স্থানান্তর করতে হয় এবং চারাগুলো আস্তে আস্তে বড় হয়। একটি বীজ থেকে এক বা একাধিক চারা হতে পারে। আমড়ার বীজে ৩-৪ অংশ থাকে যেখান থেকে এই চারার অঙ্কুরোদগম হয়। কম্পোস্ট ও ভিটিবালি মিশ্রিত টবে একবারে বীজ লাগিয়েও এ চারা উৎপাদন করা যায়। তবে এক্ষেত্রে চারার অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কমে যায়। বীজের চারাতেও বংশগত গুণাগুণ ঠিক থাকে। কলমের মাধ্যমেও আমড়ার বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে দেশি আমড়ার বীজ রুটস্টক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্লেফট পদ্ধতিতে আমড়ার কলম করা হয়।
আরও পড়ুন- সুস্বাদু সফেদা চাষের নিয়ম
জমি নির্বাচন গভীর, সুনিষ্কাশিত, উর্বর দো-আঁশ মাটি আমড়া চাষের জন্য উপযোগী। আমড়া চাষে উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুতে আমড়া ভালো হয়। বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু আমড়া চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
জমি তৈরিভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল ও আগাছামুক্ত করে নিতে হবে। চারা রোপণের জন্য সমতল ভূমিতে বর্গাকার, আয়তাকার বা কুইনকান্স এবং পাহাড়ি জমিতে কন্টুর বা ম্যাথ পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। আমড়া চারা রোপণের জন্য ৬০*৬০*৬০ সেন্টিমিটার গর্ত করে ২০ কেজি জৈব সার, ২শ’ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে। বৃষ্টির মৌসুমের প্রারাম্ভে অর্থাৎ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস (এপ্রিল-মে) চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে অন্য সময়ও এর চারা লাগানো যায়। এ জাতের আমড়া বামন আকৃতি হওয়ায় ৪-৫ মিটার দূরত্বে লাগানো উত্তম। গর্ত তৈরির ১৫-৩০ দিন পর চারার গোড়ার বলসহ গর্তের মাঝখানে সোজাভাবে লাগাতে হবে। চারা রোপণের পর হালকা সেচ, খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সার প্রয়োগ আমড়া গাছে বছরে দুবার সার প্রয়োগ করা উচিত। প্রথম কিস্তি বর্ষার প্রারম্ভে (এপ্রিল-মে) এবং পরবর্তী কিস্তি বর্ষার শেষে মধ্য শ্রাবণ থেকে মধ্য-ভাদ্রে (আগস্ট-সেপ্টেম্বর)। মাটিতে জো অবস্থায় সার প্রয়োগ করতে হয়। গাছের বৃদ্ধির সঙ্গে সারের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হয়। সেজন্যচারা লাগানোর পর ব্যবহৃত জৈব ও রাসায়নিক সারের পরিমাণ জেনে নেওয়া ভালো।
আরও পড়ুন- ফল গাছের জন্য মাটির গুণাবলি
সেচ প্রয়োগগাছের বৃদ্ধির জন্য শুকনা মৌসুমে সেচ প্রয়োগ করা উত্তম। ফলন্ত গাছের বেলায় আমড়ার ফুল ফোটার শেষপর্যায়ে এবং মটরদানার সময়ে একবার, স্প্রিংকলার বা বেসিন পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগ করতে হবে। গাছে সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ প্রয়োগ করা হলে সুফল পাওয়া যায়।
ফুল ও ফল ছাটাই১-২ বছর পর্যন্ত গাছে কোনো ফল না রাখাই উত্তম। তাই এ সময় ফুল ধারণ করলে ও ফুল ফেলে দেওয়া হলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। ২ বছর পর গাছে প্রচুর পরিমাণ ফল হয়। গাছে ফলের আধিক্য থাকে বলে ২০-৩০% ফল ছাটাই করে ফেলা উচিত। এতে গাছের অন্যান্য ফলের বৃদ্ধি বেশি হয় এবং ফলের গুণগত মানও উন্নত হয়।
রোগ-বালাই চারা তৈরিকালে অঙ্কুরোদগমের সময় ‘ডেস্পিংঅফ’ রোগ দেখা দিতে পারে। এ জাতের আমড়ায় বড় গাছে রোগের প্রাদুর্ভাব কম। মধ্য-আষাঢ় থেকে মধ্য-শ্রাবণ (জুলাই-আগস্ট) মাসে আমড়া গাছে বিটল পোকার উপদ্রব দেখা দিতে পারে। উক্ত বিটল পোকা গাছের পাতা খেয়ে গাছের ও ফলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।
প্রতিকার‘ডেস্পিংঅফ’ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বালিতে অঙ্কুরোদগম করিয়ে নিতে হয়। আর বিটল পোকার আক্রমণ দেখা দিলে ম্যালাথিয়ন অথবা নগস প্রতিলিটার পানিতে ২ মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করলে সহজেই দমন করা যায়। তাছাড়া আক্রান্ত গাছের পোকা সংগ্রহ করে মেরে ফেলেও এ পোকা দমন করা যায়।
ফল সংগ্রহখাওয়ার জন্য গাছ থেকে পুষ্ট ফল সংগ্রহ করা হয়। ফল পুষ্ট হলে আমড়ার সবুজ রং হালকা হয় এবং গায়ে হালকা বাদামি প্যাঁচ সৃষ্টি হয়। চারা তৈরির জন্য পুষ্ট ফলের বীজ থেকেও চারা তৈরি করা যায়।
এসইউ/জেআইএম