জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : পঞ্চম পর্ব

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫১ এএম, ০৯ নভেম্বর ২০১৭

আখ অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম। আখ থেকে চিনি, গুড় এবং রস পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মোট আবাদকৃত জমির ২.০৫% আখের আবাদ হয় যার পরিমাণ ১.৭০ লাখ হেক্টর। মিলজোনে ০.৮৬ লাখ হেক্টর এবং ননমিলজোনে ০.৮৪ লাখ হেক্টর। আসুন আখ চাষের পদ্ধতি জেনে নেই-

ক্ষতির ধরন

আখের পাতা বা কাণ্ডের ভেতর সাকিং মুখ প্রবেশ করে আখের রস শুষে খায়। ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পরবর্তীতে পাতার সাকিং ছিদ্র পথে আখের রস বের হয়ে আসে এবং রসে চিনি থাকায় পাতার উপর ছড়ানো রসে ছত্রাক জমে কালো হয়ে যায়। ফলে পাতার খাদ্য প্রস্তুত ক্ষমতা কমে যায়। আখ গাছ শুকিয়ে যায়, পরে মারা যায়।

দমন ব্যবস্থা

আখ কাটার পর পাতা, আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। বীজ নির্বাচনের সময় সতর্ক হতে হবে এবং রোপণের আগেই বীজআখ শোধন করতে হবে। মুড়ি আখের চাষ করতে হলে তা সঠিক পদ্ধতিতে করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে যেকোনো সিসটেমিক কীটনাশক ০.৫% দ্রবণ স্প্রে করা যেতে পারে।

in-(1)

মাটিতে বসবাসকারী পোকা

উঁইপোকা

উঁইপোকা সাধারণত মাটিতে ঢিবি করে বাস করে এবং রানি একটি বিশেষ প্রকোষ্ঠে অবস্থান করে। রানি উঁই লক্ষাধিক ডিম পাড়ে। বাচ্চাগুলো পূর্ণবয়স্ক উঁইয়ের মতো দেখতে এবং ছোট। এরা বীজখণ্ডের চোখ এবং ভেতরের অংশ খেয়ে ফেলে। ফলে আখের চারা গজায় না বা গজালেও মারা যায়। বড় আখের গোড়া খেয়ে ফেলে এবং আখ শুকিয়ে মারা যায় এবং জমিতে ফাঁকা জায়গা দেখা যায়।

দমন ব্যবস্থা

রানি উঁই খুঁজে মারতে হবে। উঁইয়ের ঢিবি ধ্বংস করে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আখ রোপণের আগে নালায় বীজখণ্ড রেখে তার ওপর বাজারে প্রচলিত কীটনাশকের যেকোনো একটি সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হবে। গভীর চাষ ও গভীর নালায় আখ রোপণ, আঁকাবাঁকা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

সাদা গ্রাব

বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে বেলে ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে এর উপদ্রব বেশি হয়। এর ক্ষতি মারাত্মক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০% ভাগ আখঝাড়ই আক্রান্ত হতে পারে। এদের জীবনচক্র ১ বছর। পূর্ণাঙ্গ বিটল রাতের বেলায় ক্ষেতের আশেপাশের আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা ইত্যাদি গাছে আশ্রয় নেয় এবং গাছের পাতা খায়। দিনের বেলায় আখের ঝাড়ের গোড়ায় মাটির নিচে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ৩-৭ মাস পর্যন্ত আখের শেকড় খায়। আখের গাছ মরা লক্ষণ দেখা যায়। প্রজাতি ভেদে বিটলগুলো হালকা বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি বা লালচে বাদামি এবং আকারে ছোট বড় হয়।

দমন ব্যবস্থা

মুড়ি আখচাষ এড়িয়ে চলতে হবে। বিটল ধরে ধ্বংস করতে হবে। আখের ক্ষেতের পাশের আম, কাঁঠাল, লিচু গাছে স্প্রে করে বিটল মারতে হবে। অনুমোদিত কীটনাশক ২-৩ বার প্রয়োগ করতে হবে।

in-(1)

আখের পোকা দমন

আখের পোকা দমনের জন্য কৃষিতাত্ত্বিক, যান্ত্রিক ও জৈবিক পদ্ধতি প্রয়োগের পর সর্বশেষ পদ্ধতি হিসেবে বিশেষ সতর্কতার সাথে রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পোকা দমনে উপযুক্ত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

আখের প্রধান রোগ

লাল পচা রোগ

আখের কাণ্ড পচে যায়। পাতাও রোগাক্রান্ত হতে পারে। পাতার মধ্যশিরায় লালদাগ এবং পত্রফলকে ছোপছোপ লাল দাগ দেখা যায়। পাতা হলদে হয়ে শুকিয়ে যায়। আখের কাণ্ড শুকিয়ে মাঝখানে ফাপা হয় এবং আখ মারা যায়। আক্রান্ত আখ চিড়লে ভেতরের কোষ পচে লাল হয়ে যায়। লাল রঙের ভেতর আড়াআড়ি সাদা ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত আখ থেকে মদ বা তাড়ির মতো দুর্গন্ধ বের হয়। কচি কুশি হলে কুশির মড়ক দেখা যায়।

উইল্ট রোগ

আক্রান্ত আখের বাহ্যিক লক্ষণ লাল পচা রোগের মতো। আক্রান্ত গাছের পাতাগুলো আস্তে আস্তে হলুদ হয়ে শেষ পর্যন্ত শুকিয়ে মারা যায়। আক্রান্ত আখ চিড়লে ভেতরে ইটের মতো গাঢ় লাল রঙ দেখা যায় কিন্তু কোনো সাদা দাগ থাকে না। ভেতরের মজ্জার কোষ শুকিয়ে ফাঁকা খোলের মতো হয়। এ রোগ বয়স্ক আখ গাছেই হয়ে থাকে।

in-(1)

কালোশীষ

কালোশীষ রোগে আক্রান্ত ঝাড়ের বৃদ্ধি কমে যায়। আক্রান্ত কুশিগুলো লম্বা লিকলিকে হয়, পাতাগুলো খাটো ও খাড়াভাবে থাকে, কুশির গিরা লম্বা হয়। অনেক বেশি কুশি বের হয়। কুশিগুলোকে ঘাসের মতো মনে হয়। পত্রগুচ্ছে মধ্য থেকে চাবুকের মতো একটা করে শীষ বের হয়। যার অগ্রভাগ বাকানো হয়। এ শীষটি প্রথমদিকে পাতলা রুপালি ঝিল্লি বা পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে। পর্দার মধ্যে কালো ঝুল কালির মতো বস্তুগুলো এ রোগের জীবাণু। সাধারণত মুড়ি আখে এ রোগ বেশি হয়।

পোড়া ক্ষত

পাতার মধ্যশিরা বরাবর বা তার আশপাশে খুব চিকন ঝলসানো দাগ পত্রফলকের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। পাতার আগা থেকে গোড়ার দিকে পোড়া ক্ষতের সৃষ্টি হয়। বয়স্ক আখের চোখগুলো ফুটে পার্শ্বকুশি বের হয় এবং কুশিতেও ওই লক্ষণ দেখা যায়। আক্রান্ত গাছ আড়াআড়িভাবে কাটলে তাতে লালচে বা খয়েরি রঙের ছোট ছোট দাগ দেখা যায়। অনেক সময় বাহ্যিক লক্ষণ প্রকাশ না করেও আক্রান্ত আখ হঠাৎ শুকিয়ে মারা যায়।

সাদা পাতা

রোগাক্রান্ত বীজখণ্ডের অঙ্কুরিত চারার সব পাতাই সাদা হয়ে যায়। শিরা বরাবর এক বা একাধিক লম্বা সাদা দাগ দেখা যায়। কোনো কোনো ক্ষেতে হলুদ ও ফ্যাকাসে সবুজ রং দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং গোড়া থেকে অসংখ্য কুশি বের হয়।

আগা পচা

পাতার শিরা বরাবর লম্বালম্বিভাবে লাল লাল দাগ দেখা যায়। পাশাপাশি লাল দাগ একত্র হয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে। বর্ষার শুরুতে আগা পচা শুরু হয়। রোগের আক্রমণে আখের টপ বা মাথা মারা যায়। মরা আখের পাতা ধরে টান দিলে ডগা থেকে খুলে আসে ও উৎকট গন্ধ বের হয়।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।