জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : চতুর্থ পর্ব

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫৫ এএম, ০৬ নভেম্বর ২০১৭

আখ অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম। আখ থেকে চিনি, গুড় এবং রস পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মোট আবাদকৃত জমির ২.০৫% আখের আবাদ হয় যার পরিমাণ ১.৭০ লাখ হেক্টর। মিলজোনে ০.৮৬ লাখ হেক্টর এবং ননমিলজোনে ০.৮৪ লাখ হেক্টর। আসুন আখ চাষের পদ্ধতি জেনে নেই-

সারের উপরি প্রয়োগ

গাছ গজানোর পর জমিতে সার প্রয়োগকে উপরি সার প্রয়োগ বলা হয়। নাইট্রোজেন ও পটাশ জাতীয় সারের ৩ ভাগের ১ ভাগ রোপণের সময় এবং ৩ ভাগের ২ ভাগ ৪ মাস বয়সের মধ্যে উপরি প্রয়োগ করা প্রয়োজন। নামলা আখে সারের উপরি প্রয়োগ ৩ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা উচিত। ইউরিয়া সার ৪ ইঞ্চি মাটির নিচে প্রয়োগ করতে হবে। রোপা আখের বেলায় ঝাড়ের চারপাশে রিং করে সারগুলো মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে।

আখের গোড়ায় মাটি

সচরাচর ২ বার চারার গোড়ায় মাটি দেওয়া হয়। কুশি বের হওয়া শেষ হলে অর্থাৎ আগাম আখের বেলায় ঝাড়প্রতি ৮-১০টি এবং নামলা আখের বেলায় ৫-৬টি কুশি বের হওয়ার পর আর নতুন কুশি হতে না দিয়ে চারার গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। প্রথমবারের প্রায় ১ মাস পরে দ্বিতীয় ও শেষবার মাটি তুলে দিতে হবে। অবশ্যই প্রয়োজনীয় সেচ, পোকামাকড়ের রোগ বালাই দমন ব্যবস্থা নিতে হবে।

শুকনো পাতা পরিষ্কার

গাছের শুকনো পাতা বেশি থাকলে আখ বাতাসে হেলে পড়ার আশঙ্কা থাকে। শুকনো পাতায় ক্ষতিকর পোকা আশ্রয় গ্রহণ করে সুস্থ গাছকে আক্রমণ করে। পাতার খোল এবং পর্বের সংযোগস্থলে বৃষ্টির পানি জমে পর্ব থেকে নতুন কুঁড়ি অঙ্কুরিত হয়, যা আখের চিনির পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

ankh

আখ বাঁধা

সাধারণত আখের কাণ্ড গঠন হওয়ার পর অতিবৃষ্টি কিংবা ঝড়ো হাওয়ায় গাছ হেলে পড়তে পারে। ভাদ্র-কার্তিক মাসের দিকে যখন আখ হেলে পড়ার সম্ভবনা দেখা দেয়; তখন প্রথমে আখের শুকনো ও অর্ধ শুকনো পাতা দিয়ে প্রতিটি ঝাড় আলাদাভাবে বেঁধে দিতে হবে। পরবর্তীতে পাশাপাশি দুই সারির ৩-৪টি ঝাড় একত্রে আড়াআড়িভাবে বাঁধতে হবে। বাঁধার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন আখের ডগাগুলো পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে না যায়।

ক্ষতিকর পোকামাকড়

আখের ক্ষতিকর পোকামাকড়ের কারণে ২০% ভাগ ফলন এবং ১৫% চিনি বা গুড় আহরণ কম হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি ক্ষতিকর পোকামাকড় শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ১০টি মারাত্মক।

১. মাজরা পোকা

ক. আগাম মাজরা ও পিঙ্গল মাজরা: জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এর আক্রমণ দেখা যায়। বাদামি রঙের মথ। পাখার শেষ প্রান্তে গোলাকার কালো ফোটা। স্ত্রীমথ ৪-১৪ গাদায় মোট প্রায় ৬০০টি ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো ঘোলা সাদা এবং পিঠে ৫টি হালকা বাদামি রঙের ডোরা থাকে।

লক্ষণ: মরাডিগ দেখা যায় যা টান দিলে সহজে বের হয়ে আসে। মরা ডগার গোড়ায় দুর্গন্ধযুক্ত পঁচা অংশ থাকে। চারার গোড়ায় পোকা ঢোকার কালো ছিদ্র থাকে, ছিদ্রের মুখে করাতের গুড়ার মত পোকার বিষ্ঠা দেখা যায়।

দমন: ছিদ্রের ২-২১/২ ইঞ্চি নিচ থেকে আক্রান্ত গাছ পাতাসহ কেটে আগুনে পোড়াতে হবে। পিঙ্গল মাজরার বেলায় আখ ক্ষেতের সাথে বা কাছের জমিতে গমের চাষ এড়িয়ে চলতে হবে। পাশে গমের ক্ষেত থাকলে জমির সে দিকের আইল পরিষ্কার রাখতে হবে। জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত এলাকার সব চাষি মিলে পোকার দমন কাজ চালাতে হবে। সঠিক কীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ও সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হবে।

ankh

খ. ডগার মাজরা: সাদা ধবধবে মথ সকাল বেলায় আখের পাতার উপর রোদ পোহাতে দেখা যায়। স্ত্রীমথ আখের পাতার নিচে ৩-১৩ গাদায় প্রায় ২০০টি ডিম পাড়ে। ডিমের গাদাগুলো বাদামি রঙের লোমে ঢাকা থাকে। মথ ও ডিমের গাদা সহজেই চেনা যায় এবং তা ধরে পোকা দমন করা যায়।

লক্ষণ: পাতার মধ্যশিরা বরাবর প্রথমে সাদা পরে বাদামি দাগ দেখা যায়। ২-৩ নং পাতায় আড়াআড়ি অনেকগুলো বন্দুকের গুলির মতো ছিদ্র দেখা যায়। মাঝপাতা খর্বাকৃতি, কাচির ন্যায় বাঁকা, কালো, পোড়া বা ছেঁড়া অবস্থায় দেখা যায়।

দমন: আলোর ফাঁদে বা হাত-জালে ধরে মথ সংগ্রহ ও ধ্বংস করা।
আক্রান্ত গাছ কুচকী এলাকার ৮-১২ ইঞ্চি নিচ থেকে পোকাসহ আখের ডগা কেটে ধ্বংস করা।
সম্মিলিতভাবে মাঠের সকল ক্ষেতের পোকা একত্রে দমন করা।
পোকা মুক্ত বীজখণ্ড রোপণ, আগাম আখ রোপণ ও সুপারিশকৃত সারের মাত্রা অনুসরণ করা।
শতকরা ৫ ভাগের বেশি আক্রমণ হলে কার্বোফুরান ৫জি জাতীয় দানাদার কীটনাশক হেক্টর প্রতি ৪০ কেজি বা হেক্টর প্রতি ৩৩.৩৩ কেজি মার্শাল ৬জি নালার দু’পাশে ১০ সে.মি গভীর নালায় ২ বার (চৈত্র ও বৈশাখ, মাসে ১ বার) প্রয়োগ করা।

গ. কাণ্ডের মাজরা: স্ত্রীমথ ৪-৫টি গাদায় সারি করে পাতার নিচে মোট ৫০০-৮০০ ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ঢাকা থাকে না। কীড়াগুলো বেগুনি রঙের এবং পিঠে ৪টি পিঙ্গল বর্ণের ডোরা থাকে।

ankh

লক্ষণ: আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে মরাডিগ দেখা যায়। আক্রান্ত কাণ্ডের আগা থেকে প্রায় ১ ফুট নিচে অনেকগুলো ছিদ্র দেখা যায়। করাতের গুড়ার মতো কীড়ার মল কাণ্ডের গায়ে লেগে থাকতে দেখা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে একই স্থানে অনেক কীড়া একত্রে থাকে। পরবর্তীতে প্রতিকাণ্ডে ২-৬টি কীড়া একত্রে দেখা যায়, দ্বিতীয় পর্যায়ে কোন মরাডিগ লক্ষণ হয় না।

দমন: প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত গাছ পোকাসহ কেটে পোকা মারতে হবে। এজন্য এপ্রিল-আগস্ট পর্যন্ত প্রতিসপ্তাহে কমপক্ষে ২ বার আখ ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে। পোকামুক্ত বীজখণ্ড রোপণ, পোকা প্রতিরোধী জাতের চাষ এবং পুরনো শুকনো পাতা আখ থেকে ছড়িয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ২য় পর্যায় আক্রমণ ১০% ভাগের বেশি দেখা গেলে দানাদার কীটনাশক যেমন- পাদান ৪জি হেক্টর প্রতি ৭৫ কেজি আখের সারির পাশে একমাস অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। জুন-আগস্ট পর্যন্ত অবস্থাভেদে ২-৩ বার প্রয়োগ করতে হবে।

ঘ. গোড়ার মাজরা: ২-৩ নম্বর পাতা শুকিয়ে যায়। মরাডিগ টান দিলে ওঠে না। আখের শেকড় এলাকার কাণ্ডের ভেতর কীড়া পাওয়া যায়। অনেক সময় বড় আখে মাটির ৬-৮ ইঞ্চি উপর পর্যন্ত কীড়া পাওয়া যায়।

দমন: মার্চ মাস পর্যন্ত আক্রান্ত চারা কীড়াসহ উঠিয়ে আগুনে পোড়াতে হবে। সেচের ব্যবস্থা থাকলে ৪৮ ঘণ্টা সেচের পানিতে জমি ডুবিয়ে রাখতে পারলে পোকা দমন হয়। আক্রান্ত জমিতে কমপক্ষে পরপর দুই মৌসুম আখের চাষ বন্ধ রাখতে হবে। পোকায় আক্রান্ত জমির আখ কাটার পর মোথাগুলো কোদাল দিয়ে তুলে জমা করে আগুনে পোড়াতে হবে। এলাকার সব চাষি একসঙ্গে এ কাজ করতে হবে।

২. শোষক পোকা
যে সব পোকা পাতা অথবা গাছের কোন অংশ থেকে রস শোষণ করে খায়। যেমন- ব্লাক লিফ হপার, পাইরিলা, থ্রিপস, স্কেল ইনসেক্ট, মিলি বাগ, পশমী জাবপোকা এবং সাদামাছি ইত্যাদি।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।