জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : প্রথম পর্ব

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২৫ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৭
আখ চাষ পদ্ধতি

আখ অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম। আখ থেকে চিনি, গুড় এবং রস পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মোট আবাদকৃত জমির ২.০৫% আখের আবাদ হয় যার পরিমাণ ১.৭০ লাখ হেক্টর। মিলজোনে ০.৮৬ লাখ হেক্টর এবং ননমিলজোনে ০.৮৪ লাখ হেক্টর। আসুন আখ চাষের পদ্ধতি জেনে নেই- 

আখ চাষের সবচেয়ে উন্নত পদ্ধতি কোনটি?

আখ চাষের সবচেয়ে উন্নত পদ্ধতি হচ্ছে রোপা পদ্ধতি এবং আখ চাষের জন্যে শরৎকালে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টবর এবং বসন্তে ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাসে। 

আখের জাত

গুড় উপযোগী, আগাম পরিপক্ক, মধ্যম পরিপক্ক, বন্যা খরা লবণ সহিষ্ণু, মুড়ি আখের জন্য উপযুক্ত এবং চিবিয়ে খাওয়া জাতসহ বেশকিছু জাত রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- ঈ-১৬, ঈ-১৮, ঈ-১৯, ঈ-২০, ঈ-২১, ঈ-২২, ঈ-২৪, ঈ-২৫, ঈ-২৬, ঈ-২৭, ঈ-২৮, ঈ-২৯, ঈ-৩০, ঈ-৩১, ঈ-৩২, ঈ-৩৩, ঈ-৩৪, ঈ-৩৫, ঈ-৩৬, ঈ-৩৭, ঈ-৩৮    ঈ-২/৫৪, সিও-২০৮, অমৃত, বারঙ, গ্লোরী, কাজলা, মিশ্রিমালা, তুরাগ ও লতারিজবা ‘সি’। 

বীজ নির্বাচন

রোপণের জন্য বীজ আখগুলো রোগমুক্ত, পরিপুষ্ট  এবং প্রত্যায়িত হতে হবে। ভাল অঙ্কুরোদগম, গাছের বৃদ্ধি এবং উচ্চ ফলন পাওয়ার জন্য অবশ্যই সুস্থ-সবল, রোগ ও পোকামাকড়মুক্ত আট-দশ মাস বয়সী সতেজ আখ বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। বীজ আখ শিকড়মুক্ত হতে হবে। প্রয়োজনে আখের গোড়ার এক-তৃতীয়াংশ বাদ দিয়ে উপরের দুই-তৃতীয়াংশ বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। বীজ আখ সংগ্রহের ৪-৫ সপ্তাহ আগে হেক্টরপ্রতি ১শ’ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করে বীজ আখের গুণগত মান বৃদ্ধি করা যায়। পটাশ ঘাটতি এলাকায় ইউরিয়ার সাথে একরপ্রতি ১৫-২০ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে।

বীজখণ্ড তৈরি 

বীজ আখ কাটার পর পাতাসহ পরিবহন করতে হবে। ধারালো এবং জীবাণুমুক্ত দা, হাসুয়া, বিএসআরআই উদ্ভাবিত বীজ কাটা যন্ত্র বা বাডচিপস কাটার দিয়ে প্রয়োজনমতো এক, দুই বা তিন চোখবিশিষ্ট বীজখণ্ড বা বাডচিপস তৈরি করতে হবে। 

বীজ শোধন

একবিঘা বা ৩৩ শতাংশ জমির জন্য বীজখণ্ডকে ২৫ গ্রাম ছত্রাকনাশক ওষুধ ২৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে তৈরি দ্রবণে ৩০ মিনিট ডুবিয়ে শোধন করতে হবে।

akh

জমি নির্বাচন

উঁচু কিংবা মাঝারি উঁচু, সমান এবং একদিকে সামান্য ঢালু হলে ভালো হয়। নির্বাচিত জমি অবশ্যই জলাবদ্ধতা মুক্ত হতে হবে। মাটি এঁটেল দো-আঁশ কিংবা বেলে দো-আঁশ প্রকৃতির হলে ভালো হয়।

জমি তৈরি

লাঙল দিয়ে ৬-৮ ইঞ্চি গভীর আড়াআড়ি ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে জমি উত্তমরূপে তৈরি করতে হবে। আখ রোপণের জন্য ১.৫ থেকে ৩.৫ ফুট দূরত্বে ৯-১০ ইঞ্চি গভীর নালা তৈরি করতে হবে। নালার ভেতর বেসালডোজ সার ছিটিয়ে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

আখ রোপণ 

সনাতন পদ্ধতিতে আখ রোপণ: এ পদ্ধতিতে আখের বীজখণ্ডগুলো সরাসরি মূল জমিতে রোপণ করা হয়। ভালোভাবে জমি তৈরির পর কোদাল বা লাঙল দিয়ে নালা করে নালার ভেতর বেসালডোজ সার ছিটিয়ে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দুই বা তিন চোখবিশিষ্ট বীজখণ্ড সরাসরি মাথায় মাথায় স্থাপন করে তার উপর প্রায় ২ ইঞ্চি মাটির আবরণে ঢেকে দিতে হবে। বীজ খণ্ডগুলোকে নালায় এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে চোখগুলো দুই পাশে থাকে। মাটিতে জো বেশি থাকলে বা আগাম রোপণে বীজখণ্ডের ওপর মাটি কম এবং জো কম থাকলে বা শীতের সময় বীজখণ্ডের ওপর মাটি বেশি দিতে হবে।

akh

রোপা পদ্ধতিতে আখ রোপণ: এ পদ্ধতিতে আখের চারা তৈরি করে চারাগুলো মূল জমিতে নালার ভেতর রোপণ করা হয়। আখের চারা তৈরির জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এরমধ্যে পলিব্যাগে চারা তৈরি, বীজতলায় চারা তৈরি এবং গাছচারা তৈরি পদ্ধতি প্রধান। চারা তৈরির জন্য বীজখণ্ডগুলো বিশেষ যত্নের সাথে তৈরি করা হয়। উৎপাদিত চারা স্টকলেস চারা করে সহজেই কম খরচে ধানের চারার মত দূর-দূরান্তে পরিবহন করা যায়।

রোপা আখ চাষের সুবিধা 

প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে প্রায় ৬০% কম বীজ প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চারা রোপণের ফলে জমিতে ফাঁকা জায়গা থাকে না। গোছাপ্রতি বেশি কুশি উৎপাদিত হওয়ায় মাড়াইযোগ্য আখের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। প্রায় ১:৩০ হারে দ্রুত বীজ বর্ধন করা যায়। কম সময়ে ও দ্রুত উচ্চ চিনিযুক্ত নতুন জাত বিস্তার করা যায়। বীজতলায় রোগাক্রান্ত চারা বাছাই করে শুধু সুস্থ চারা রোপণ করা যায়। আগাম আখ রোপণ নিশ্চিত করা যায়। জোড়া সারি পদ্ধতিতে রোপা আখের সাথে দুটি সাথীফসল চাষ করা যায়। প্রথম ফসল আলু চাষ করার পরও দ্বিতীয় সাথীফসল হিসেবে গ্রীষ্মকালীন মুগডাল, ডাঁটা, কলমি শাক, পুঁইশাক ও সবুজ সার আবাদ করা সম্ভব।

চারা উৎপাদনের সময়

শ্রাবণ- আশ্বিন মাস চারা উৎপাদনের উপযুক্ত সময়। এসময় তাপমাত্রা বেশি থাকায় চারা বেশি গজায়। আশ্বিনের পরে অঙ্কুরোদগম কমে এবং চারা উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। আশ্বিন মাসে চারা উৎপাদন করে শীতের পরেও জমিতে রোপণ করা যায়।

akh

আখের চারা তৈরি

পলিব্যাগে চারা তৈরি: এক একর জমির জন্য ৪-৫ ইঞ্চি আকারের ০.০২ মিলিমিটার পুরু ১২ হাজার ব্যাগ (ওজনে প্রায় ৮ কেজি) প্রয়োজন হয়। ৫০ ভাগ বেলে দো-আঁশ ও ৫০ ভাগ গোবর বা কম্পোস্ট সার মিশ্রিত করতে হবে। উঁইপোকা ও মাজরা পোকা দমনের জন্য ২৫০ গ্রাম লরসবান বা ডারসবান এবং ১ কেজি ফুরাডান ৫জি মাটির মিশ্রণের সাথে মেশাতে হবে। মিশ্রিত ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে ব্যাগের ৩-৪ ভাগ ভরতে হবে। চোখের ওপর ১ ইঞ্চি এবং চোখের নিচে ২ ইঞ্চি আখ রেখে তৈরি বীজখণ্ডগুলো একটি করে পলিব্যাগে চোখ উপর দিকে রেখে খাড়াভাবে স্থাপন করতে হবে। যাতে বীজখণ্ডটি ব্যাগের উপর থেকে আধা ইঞ্চি নিচে থাকে। ব্যাগের বাকি অংশ মাটি দিয়ে ভরে চাপ দিয়ে ব্যাগের মাটি এঁটে দিতে হবে। ব্যাগের মধ্যে যাতে অতিরিক্ত পানি জমে চারা পঁচে না যায়, সে জন্য ব্যাগের তলায় ২-৩টি ছিদ্র করতে হবে। এ জন্য ব্যাগে মাটি ভরার আগেই কাগজ ছিদ্র করার পাঞ্চিং মেশিন ব্যবহার করা যেতে পারে।

বীজখণ্ড: ‘বাডচিপস’ হলে পলিব্যাগটি আধা ইঞ্চি বাকি রেখে মাটির মিশ্রণ দিয়ে পূরণ করে তার উপর ‘বাডচিপস’র চোখ উপর দিকে রেখে হালকা চাপ দিয়ে বসিয়ে দিতে হবে এবং বাকি অংশ মাটি দিয়ে ভরে দিতে হবে। এবার ব্যাগগুলো আলো বাতাস পায় এমন সুবিধাজনক জায়গায় সারি করে রাখতে হবে। পাতা বা খড় দিয়ে ব্যাগগুলো ঢেকে দিতে হবে। এক একর ব্যাগ রাখার জন্য ৩৬ বর্গমিটার জায়গার প্রয়োজন হয়। ব্যাগের মাটিতে মাঝে মাঝে পানি দিতে হবে। রোগাক্রান্ত চারা দেখলে তুলে ফেলতে হবে। পোকার আক্রমণ দেখলে দমন করতে হবে। চারা দুর্বল বা ফ্যাকাশে দেখালে ১০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে স্প্রে করে দিলে চারা সবুজ ও সতেজ থাকে। ভালোভাবে সূর্যালোক পাওয়ার জন্য চারাগুলো ৩-৪ পাতাবিশিষ্ট হলে পাতা ছেঁটে দিতে হবে। চার পাতাবিশিষ্ট হলেই চারা জমিতে রোপণ উপযোগী হবে। তবে ১-২ মাস বয়সের চারা রোপণ করা ভালো। প্রয়োজনে ৮/৯ মাস বয়সের চারাও রোপণ করা যায়। রোপণের আগে চারার পাতা ছেঁটে দিতে হবে। পানিতে ভিজিয়ে চারার গোড়ার মাটি চারার সাথে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে এবং পলিব্যাগ থেকে চারা আলাদা করতে হবে। রোপণের পর অবশ্যই জীবনী সেচ দিতে হবে।
চলবে-

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।