ভুট্টার বীজে হতাশা
ফলন না পেয়ে চুয়াডাঙ্গার অর্ধশত চাষির স্বপ্নভঙ্গ

চুয়াডাঙ্গায় লাভের আশায় ভুট্টার বীজ চড়া দামে কিনেও হচ্ছে না ভালো ফলন। একই জাতের বীজ লাগিয়ে প্রায় অর্ধশত কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ। সদ্য চালু হওয়া রিহান ফিড কোম্পানির সেনা জিরো পঞ্চান্ন জাতের ভুট্টা বীজ ৮৫০ টাকা কেজি দরে কেনেন চাষিরা। ফলে বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
বেশি ক্ষতি হয়েছে জমি লিজ নেওয়া চাষিদের। কারণ তারা জমি লিজ নিয়ে ভুট্টার আবাদ করেছিলেন। এসব কৃষক বলছেন, বীজ, সেচ ও সারের খরচই উঠছে না। এদিকে লিজের টাকা পরিশোধ করাও অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এসব চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের পক্ষে আবার আবাদ করা সম্ভব নয়।
কৃষকেরা জমি থেকে কাঁচা ভুট্টা কেটে গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করছেন। বিশেষ করে আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদা উপজেলার চাষিরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত। এ অবস্থায় আশঙ্কা করছেন, এ বছর কাঙ্ক্ষিত ফলন হবে না। কৃষি বিভাগ বলছে, ঘন করে রোপণ করায় ফলন কমতে পারে। তবে যদি কোনো বীজে কৃষক প্রতারিত হন। এটি প্রমাণিত হলে বীজ সংশ্লিষ্টদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার গোকুলখালী ইউনিয়নের চিৎলা গ্রামের হুদাপাড়ার ভুট্টা চাষি জাসিদুল ইসলাম বলেন, ‘উন্নত জাতের বীজ শুনে এ বছর চড়া দাম দিয়ে ‘সেনা জিরো পঞ্চান্ন’ জাতের বীজ কিনি। পরে ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বুনেছি। কিন্তু গাছ বড় হয়ে চিকন এবং লম্বা হয়ে মাথা কুঁকড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে মোচা ধরলেও তা অপুষ্ট। গাছে যা আছে, সেগুলোর মোচাও মোটা হয়নি। কোনো কোনো গাছে ফুল এলেও মোচা আসেনি। এক বীজেই বিভিন্ন রকম গাছ জন্মেছে। মনে হচ্ছে নতুন-পুরোনো বীজ মেশানো।’
তিনি বলেন, ‘ভুট্টার জমি থেকে কাঁচা ভুট্টার গাছ কেটে গরুর খাদ্য করা হচ্ছে। এতে প্রত্যেক কৃষককে বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে কৃষকেরা বীজ ডিলারের কাছে গেলে ডিলার বীজ কোম্পানির ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন।’
একই এলাকার চাষি আতিয়ার ব্যাপারি বলেন, ‘জাসিদুলের জমিতে ভুট্টার একেবারেই ফলন নেই। মোচা তেমন একটা আসেনি। কিছু মোচা এলেও সেগুলোতে জোর নেই। আমাদের সহজ-সরল পেয়ে এই বীজ কোম্পানি প্রতারণা করেছে।’
মুস্তাফিজুর রহমান নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘ভালাইপুরের এক বীজের ডিলারের কাছ থেকে জাসিদুল চাচা বীজ কিনে ভুট্টা লাগিয়েছেন। একদমই ফলন নেই। মাঠের সব ভুট্টা কাটছে। এদিকে এই ভুট্টা আগে লাগিয়েও এখনো অপরিপক্ব।’
একই বীজে দামুড়হুদা উপজেলার জুরানপুর ইউনিয়নের কলাবাড়ী গ্রামের কৃষক আশরাফুল ১ বিঘা ৫ কাঠা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেন। তিনি বলেন, ‘গত বছর বিঘাপ্রতি ভুট্টা পেয়েছিলাম ৪৮ মণ। এবার ‘সেনা জিরো পঞ্চান্ন’ বীজ লাগিয়ে মাত্র ১০-১৫ মণের মতো ভুট্টা পাবো। এই জাতের বীজ আমাদের পুরো নিঃস্ব করে দিলো।’
সেনা জিরো পঞ্চান্ন ভুট্টার বীজ সরবরাহকারী রিহান ফিডের মার্কেটিং অফিসার বাবু আক্তার বাবুল বলেন, ‘এ রকম অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। এটি নিয়ে আমরা কৃষকদের সাথে বসে আলোচনা করেছি। দ্রুতই একটা সমাধান করবো।’
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি। বেশ কিছু কৃষক এই জাতের বীজে ফলন নিয়ে শঙ্কায় আছেন। আমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে জানিয়েছি। বিষয়টি সশরীরে তদন্ত করা হবে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভুট্টা উৎপাদনে দেশের শীর্ষ তিন জেলার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা একটি। এ বছর জেলায় ৪৭ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। গত বছরের থেকে এ বছর ৫০০ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। যা থেকে ৫ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেলার মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৯৪ হাজার ২২২ হেক্টর।
এসইউ/জেআইএম