সাতক্ষীরায় বাগদা চিংড়িতে মড়ক, চাষিরা হতাশ

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে মাছের ঘেরগুলোতে হঠাৎ করে বাগদা চিংড়িতে মড়ক দেখা দিয়েছে। ঘেরের মধ্যে মাছ মরে পচে যাচ্ছে। পানিতে দুর্গন্ধ হচ্ছে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘেরে বাগদা চিংড়ি মারা যাচ্ছে। মাছচাষিরা বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। কালীগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ বাগদা ঘেরে এরকম দুরবস্থা। এতে মৌসুমের শুরুতে বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়েছেন বাগদা চাষিরা।
কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৬০০ হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার ঘের রয়েছে। যেখানে এ বছর ৬ হাজার মেট্রিক টন বাগদা চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সেই হিসেব অনুযায়ী, হেক্টরপ্রতি ৪০০ কেজি বাগদা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা চাষিদের। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে মাছে মড়ক লাগায় বড় ধরনের ধাক্কা খেলেন চাষিরা। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের বেড়াখালী গ্রামের বাগদা চিংড়ি চাষি শাহাদাৎ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে ঘেরে বাগদা পোনা ছেড়েছিলাম। কেজিতে ৬০টি বাগদা হয়েছে। এরমধ্যে হঠাৎ মাছ মরা শুরু হয়েছে। আমি চরম ক্ষতিগ্রস্ত। সমিতির লোন নিয়ে চাষ করেছি। এখন মাথায় হাত উঠে গেছে। চোখে শর্ষে ফুল দেখছি।’
শ্রীকলা গ্রামের চিংড়ি চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছি। মৌসুমের শুরুতে প্রতি গোনে গোনে পোনা মাছ ছেড়েছি। আমার ঘেরে পর পর দুইবারের সব মাছ মারা গেছে। মরা মাছ ঘেরের নিচে পানির মধ্যে পচে গেছে।’
একই গ্রামের চাষি রাজিউন আহম্মেদ বলেন, ‘আমার তিনটি ঘের মিলে ১৪ বিঘা জমিতে বাগদা চাষ করেছি। কিছুদিন আগে ১ লাখ ২০ হাজার বাগদা রেণু ছেড়েছি। কিন্তু অধিকাংশ মাছই মারা গেছে। আশপাশের ছোট-বড় সব ঘেরের একই অবস্থা। এতে বাগদা চাষিরা বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।’
বাগদা চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো ওষুধে কাজ না হওয়ায় কেউ কেউ ঘের একেবারে শুকিয়ে আবার নতুন করে চাষের উপযোগী করার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে বাগদা চাষিদের জমির হারি, পোনা ও খাবারের টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। এই পুঁজি ফেরার কোনো উপায় নেই। তারপরও দায় শোধ করতে হবে।’
কালীগঞ্জের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌকির আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘চাষিদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে কিছু ঘের পরিদর্শন করেছি। তারা লোকাল মার্কেট থেকে বাগদা পোনা কিনেছিলেন। সম্প্রতি তারা ঘেরের পানি পরিবর্তন করেছেন। একজনের ঘেরের ভাইরাস লাগা পানি খালে ছেড়ে দেন। অন্য ঘের সেই ভাইরাসযুক্ত পানি নিজের ঘেরে ঢোকান। এ কারণে বেশি ভাইরাস লাগে। তারা ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করেননি। পানি শোধন প্রক্রিয়া নেননি। এ কারণে মাছ মারা যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ঘেরে একবার ভাইরাস ঢুকে গেলে তার বিপরীতে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নেই। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় ব্যাকটেরিয়া নিধনের জন্য। এ কারণে ভাইরাস ঢুকলে ওষুধ কোনো কাজ করে না। অন্য এলাকার চাষিরা মাছ ছাড়ার আগে যদি পানি ও মাটি নিয়ে মৎস্য অফিসে আসেন, তাহলে পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।’
আহসানুর রহমান রাজীব/এসইউ/এএসএম