সুদহার হ্রাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে


প্রকাশিত: ১২:১৯ পিএম, ২৮ জুন ২০১৫

সুদহার কমানোর ফলে কমেছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ। এক মাসের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে ৫২৩ কোটি টাকা। বাজেটে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেশি হওয়ায় ঋণের বোঝা কমাতে মে মাসে সব ধরণের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রায় ২ শতাংশ করে কমায় সরকার।

সঞ্চয়পত্র পরিদফতর সূত্র জানিয়েছে, মে মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি দাড়িয়েছে ২ হাজার ৪৩৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকার। যা আগের মাস এপ্রিলের তুলনায় ৫২৩ কোটি টাকা কম। এপ্রিলে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকার।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে অন্যান্য খাতে তুলনায় বেশি মুনাফার হওয়ায় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন বিনিয়োগকারীরা। যার কারণে গত এক বছর ধারাবাহিক ভাবে বেড়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। একের পর এক নতুন রেকর্ড হয়েছে।  
তবে সঞ্চয়পত্রের এ ঋণের টাকা সরকারকে সঠিক জায়গায় বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তা না হলে এই ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।কারণ সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করতে হবে।

পরিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই ’১৪-এপ্রিল ’১৫) সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ২৬ হাজার ৫৬২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। যা সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার ৫০৬ কোটি  টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২১ হাজার কোটি টাকা। এবার প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৫ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরি জাতীয় সংসদে সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানোয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সমালোচনা করেন। তিনি সুদ হার আবার বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

সঞ্চয়পত্র পরিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের পঞ্চম মাস মে তে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে ২ হাজার ৪৩৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ৭৯৪  কোটি ২৫ লাখ টাকা, সঞ্চয় ব্যুরোর বিক্রি করেছে ৪৩৪ কোটি ৬ লাখ টাকা এবং সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ডাকঘরে এক হাজার ২০৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের চতুর্থ মাস এপ্রিলে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে ২ হাজার ৯৫৭ কোটি ১ লাখ টাকা তৃতীয় মাস মার্চে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে  ২ হাজার ৯০০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে বিনিয়োগ এসেছে ২ হাজার ৫৪৪ কোটি ২০ লাখ টাকা, প্রথম মাস জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে এক হাজার ১২৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আগের মাস ২০১৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসেছে এক হাজার ৮৯৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। নভেম্বরে এক হাজার ৪৬৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অক্টোবর মাসে বিনিয়োগ এসেছে ২ হাজার ২৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আগের মাসগুলোতে এর অঙ্ক ছিল যথাক্রমে সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৪৯২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগস্টে ২ হাজার ৪৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং জুলাইয়ে ছিল এক হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে ছয় মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১৩৫ কোটি টাকায়।

প্রসঙ্গত, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়েছে সরকার। চলতি ২০১৫ সালের ২৩ মে থেকে এটি কার্যকর হয়েছে। নতুন সুদহারে পরিবার সঞ্চয়পত্রের (পাঁচ বছর মেয়াদি) সুদহার বিদ্যমান ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্র (পাঁচ বছর মেয়াদি) ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, ডাকঘর সঞ্চয়পত্র (তিন বছর মেয়াদি) ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র (তিন বছর মেয়াদি) ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক  শূন্য ৪ শতাংশ পুননির্ধারণ করা হয়েছে।

এসআই/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।