শিশু রাজনের খুনিদের ফাঁসির দাবি খেলাঘরের
সিলেট নগরীর কুমারগাঁওয়ে ১৩ বছরের শিশু সামিউল আলম রাজনকে পৈশাচিক নির্যাতন ও হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। রাজনের খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার এবং সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানান, খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ পলাশ।
বিবৃতিতে খেলাঘর সংগঠকরা বলেন, মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও সবজি বিক্রেতা রাজনকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে যেভাবে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। মধ্যযুগীয়, নৃশংসতম, বর্বর ও রোহমর্ষক এ নির্যাতন এবং নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নরপশুদের প্রতি ঘৃণা জানিয়ে কেবল দাবি জানাচ্ছি, এই খুনিদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তাদের সহায়তাকারী, পলায়নে সাহায্যকারী এবং আশ্রয়দাতাদেরও সমান অপরাধী গণ্য করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
শিশু রাজন হত্যাকারীদের শাস্তির জন্য দেশব্যাপী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, নিহত রাজনের কাছে, তার বাবা-মায়ের কাছে আমরা ক্ষমা চাইছি। ক্ষমা চাইতে হবে দেশের প্রত্যেক বিবেকবান মানুষকে, সরকার ও রাষ্ট্রকে। দেশের প্রত্যেক শিশুর জন্য নিরাপদ, সুখী-সুন্দর ও আনন্দময় শৈশব গড়ে তুলতে পারলেই কেবল রাজনের আত্মার শান্তি হবে। শোক সন্তপ্ত পরিবারটির ক্ষতের কিছুটা হলেও উপশমের জন্য প্রয়োজন, রাজন হত্যার সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার, এ ধরণের আর একটি ঘটনাও ঘটতে না দেওয়া এবং নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইনের কঠোর প্রয়োগসহ যেকোনো ধরনের শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ও চিরতরে নির্মূল করা।
বিবৃতিতে অপরাধীদের সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে শিশু রাজনের পরিবারকে প্রদান, রাজনের পরিবারের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রাজন হত্যা মামলা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিয়োগেরও দাবি জানানো হয়।
গত ৮ জুলাই সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের রাজনকে সিলেট নগরীর কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের পাশে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে মুহিত আলম ও তার ভাই সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম, আলী হায়দার ওরফে আলী ও তাদের সহযোগী চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়নাসহ নরপিশাচরা।
আসামি সৌদি প্রবাাসী কামরুল ইসলাম ঘটনার পরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে, এ ধরণের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে খেলাঘরের বিবৃতিতে সে ধরণের ঘটনা ঘটলে দ্রুত ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়। আর দেশেই থাকলে সে যেন পালাতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান খেলাঘর সংগঠকরা।
নিহত সামিউল আলম রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান মাইক্রোচালক। দুই ভাইয়ের মধ্যে রাজন বড়। অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা রাজন সবজি বিক্রি করতো।
এইচএস/এসএইচএস/এমআরআই