রমজানের শুরুতে বাড়বে নিত্যপণ্যের দাম
পবিত্র রমজান আসতে বাকি আর কয়েকদিন। ইতোমধ্যেই কয়েক দফা বেড়েছে পেঁয়াজ, ছোলা, বুট ও ডালের দাম। এছাড়াও আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য নিত্যপণ্য। দাম কমার কোনো লক্ষণ তো নেই-ই, রমজানের শুরুতে দাম আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
সরেজমিনে রাজধানীর কাপ্তান বাজার ও ঠাঁটারী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজান মাসে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেসব পণ্যের দাম বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে ছোলা, মসুর ডাল, ডাবলি বুট, বেসন, খেসারির ডাল, বেগুন, পেঁয়াজের বাজার বেশ ঊর্ধ্বমুখি।
চাহিদার তুলনায় বাজারে পণ্য সরবারহ পর্যাপ্ত থাকার পরও অগ্রিম মজুদ প্রবণতার জেরে দর বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ক্রেতাদের অভিযোগ সরবরাহ বেশি থাকা সত্বেও বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
কাপ্তান বাজার ও ঠাঁটারী বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৬ টাকা দরে। তিন-চারদিন আগে এর দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪২ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজের দামও বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৭ থেকে ৪০ টাকা।
এদিকে রমজানের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপকরণ ছোলা আগের সপ্তাহের চেয়ে তিন থেকে ছয় টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। প্রতি কেজি ছোলার দাম প্রকারভেদে ৫৮ থেকে ৭০ টাকা, এরমধ্যে আকারে বড় দেশি ছোলা ৬৬ থেকে ৭০ টাকা, আর চায়না ছোলা ৫৮ থেকে ৬২ টাকা। ডাবলি বুট ৪০ থেকে ৪২ টাকা, খেসারির ডাল প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫২ টাকা, মুগ ডাল ৭০ টাকা, দেশি মুগ ডাল ১১০ টাকা, চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩৭ থেকে ৪০ টাকা দরে।
নিত্যপণ্যের দাম সম্পর্কে কথা হয় কাপ্তান বাজারের মেসার্স এমএ গফফার অ্যান্ড সন্স-এর মালিক এম এ গফফারের সঙ্গে। রমজানে ছোলা, ডাল, ডাবলি, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে কি-না জানতে চাইলে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, রোজায় যেসব পণ্য বেশি লাগে তার দাম তো আগেই কয়েক দফা বেড়ে গেছে। এক মাসে আগে পেঁয়াজ ছিল ৩২ থেকে ৩৬ টাকা এখন তা ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। ছোলা ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা এখন তা ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এভাবে বেশিরভাগ রোজার পণ্যের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, এ সপ্তাহে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। পাইকারি বাজারে পণ্যও যথেষ্ট রয়েছে বলে আমরা শুনছি। তারপরও যদি পাইকারি বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয় তাহলে আমাদের খুচরা বাজারেও দাম বাড়বে। এজন্য রোজার আগের দিন থেকে ১০ রমজান পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে। আর তা নিয়ন্ত্রণে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে, বাজার মনিটরিং বাড়াতে হবে।
বাজারগুলোতে প্রতি কেজি সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা। গত সপ্তাহের বেগুন যেখানে বিক্রি হয়েছে ৩৬-৪০ টাকা, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। করলা ৩২-৪০ টাকা, পটল ৩৬-৪০ টাকা, ঝিঙে ৩৬ টাকা, চিচিঙা ২৫ টাকা, টমেটো ৪০-৫০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, মুলা ২৪-৩০ টাকা, শশা ৩৬-৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, লাউ ৩০ টাকা, বরবটি ৪০-৪৬ টাকা, ঢেঁড়স ৩৬-৪০ টাকা, কচুরলতি ৩৬-৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতি হালি ২৪-৩২ টাকা, লেবু প্রতি হালি প্রকারভেদে ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি করছে।
ঠাঁটারী বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. লিটন জানান, রোজায় যেসব সবজি বেশি লাগে তার দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। যেমন বেগুন, শশা, টমেটো, লেবু, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা এসব সবজির দাম বাড়ছে। আরো বাড়বে।
এদিকে কাপ্তান বাজারে প্রকারভেদে কেজি প্রতি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়, মোটা রসুন ৯০-১০০ টাকায় ও এক দানা রসুন ২৪০ টাকায়, আদা ১২০-১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাপ্তান বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছে ৩৮০- ৪০০ টাকা, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৬০-৬০০ টাকায়, বকরির মাংস ৪৬০-৫০০ টাকায়।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি রুই আকারভেদে ২৫০-৪০০ টাকা, কাতলা ৩২০-৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০-২৫০, সিলভার কার্প ১৮০-২০০ টাকা, গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৭০০-১৫০০ টাকা, পুঁটি ২২০-২৫০ টাকা, পোয়া ৪০০-৫০০ টাকা, মলা ৪০০ টাকা, পাবদা ৫৫০-৭০০ টাকা, বোয়াল ৪০০-৬০০ টাকা, শিং আকারভেদে ৫০০-৮০০, দেশি মাগুর ৬৫০-৭০০ টাকা, শোল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, পাঙাস ১২০-২০০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০-২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৬০০ গ্রামের ইলিশ মাছ বিক্রি করছে ৭৫০ টাকায়।
রাজধানীর খোলাবাজারে লিটার প্রতি বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৬-১০০ টাকায়। এছাড়াও এলাচ ১২০০-১৫০০ টাকা, দারুচিনি ২৭০-৩০০ টাকা, লং ১৫০০ টাকা, জিরা ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঠাঁটারী বাজারের ক্রেতা আখতারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যে সরবরাহ পর্যাপ্ত দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সব জিনিসপত্রে দাম চড়া। সামনে রমজান, তাই সব পণ্যের দাম আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পেঁয়াজ, ছোলা, বেগুন, ডাল সব পণ্যেরই দাম বাড়ছে। ৩৫ টাকার বেগুন ৬০ টাকা হয়ে গেছে, ৫০ টাকার ছোলা ৬৫ টাকা। সরকার এগুলো দেখে না। কোনো বাজারেই সরকারের নজরদারি নেই। যে যার ইচ্ছা মতো দাম বাড়াচ্ছে, কিন্তু দেখার কেউ নেই।
এসআই/বিএ/এসআরজে