রমজানের আগেই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম


প্রকাশিত: ০৮:২০ এএম, ১২ জুন ২০১৫

পবিত্র রমজান আসতে সপ্তাহ বাকি। আর এ রমজানকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে রাজধানীর নিত্যপণ্যের দর। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ছোলা, বুট, মাংস, সবজি আর আদা রসুনের দাম। এছাড়াও আগের বারতি দামেই বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য পণ্য। বাণিজ্যমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারিতেও থেমে নেই নিত্যপণ্যের দাম। ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।  

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজান মাসের যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেই পণ্যের দাম বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে ছোলা, মসুর ডাল, বুট, বেগুন, পিয়াজের দাম বাজার বেশ ঊর্ধ্বমুখি।

চাহিদার তুলনায় বাজারে পণ্য সরবারহ পর্যাপ্ত থাকার পরও অগ্রিম মজুদ প্রবণতার জেরে দর বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ক্রেতাদের অভিযোগ সরবারহ বেশি থাকা সত্ত্বেও বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। মাছ, মাংস, সবজি, পেঁয়াজ সব ধরনের পণ্যই গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। এছাড়াও মাসখানেক আগে থেকেই একের পর এক পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে বলছেন ক্রেতারা। এভাবে বাড়তে থাকলে আগামীতে সাধারণ্যের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে আশঙ্কা তাদের।

তবে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারসাজির চেষ্টা করলে মঙ্গল হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে। কারণ বাজারে চাহিদার তুলনায় দেড়গুণ পণ্য বেশি মজুদ রয়েছে।

শুক্রবার রাজধানীর মুগদা, হাতিরপুল, খিলগাঁও, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচাবাজারে মাছ, মাংস, পেঁয়াজ ও সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। তারপরও ক্রেতাদের আগের বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে বেশিরভাগ খাদ্যপণ্য।

বাজারে দেশি পেঁয়াজ গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩৮-৪২ টাকা দরে। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৫ টাকা দরে। ভারতীয় পেঁয়াজও কেজি প্রতি ২-৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়। এদিকে রমজানের অন্যতম উপকরণ ছোলা আগের সপ্তাহের চেয়ে ২ থেকে ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। প্রতি কেজি ছোলা ৬২ থেকে ৬৫, বুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, খেসারির ডাল প্রতি কেজি ৫০ টাকা, চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে।

বাজারগুলোতে প্রতি কেজি সাদা আলু ২০-২২ ও লাল আলু ২২ টাকা, গত সপ্তাহের বেগুন যেখানে বিক্রি হয়েছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৩২-৪০ টাকা, পটল ৩৬-৪০ টাকা, ঝিঙ্গে ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৩৬-৪০ টাকা, টমেটো ৪০-৪৫ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, মূলা ২৪-৩০ টাকা, শশা ৩৬-৪০ টাকা, পেঁপে ২৪-৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার পিচ ১৫-২০ টাকা, লাউ ৪০ টাকা, বরবটি ৫০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৩৬-৪০ টাকা, কচুরলতি ৩৬-৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০-৫০ টাকা, কাঁচকলা প্রতি হালি ২৪-৩২ টাকা, লেবু প্রতি হালি প্রকার বেধে ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি করছে।

প্রতি আঁটি লাউ শাক ১৫-২০ টাকা, লাল শাক ও সবুজ শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ১৫ টাকা ও ডাটা শাক ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্যাপসিকাম আকারভেদে প্রতিটি ২০-৩৫ টাকা ও ব্রোকলি প্রতিটি ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রকার বেধে কেজি প্রতি দেশি রসুন কেজি প্রতি ৯৬-১০০ টাকা, মোটা রসুন ৯০-৯৫ টাকা ও এক দানা রসুন ১৬০ টাকা, আদা ১২০-১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাংসর বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছে ৩৮০- ৪০০ টাকা, খাসির মাংস বিক্রি করছে ৫৮০-৬০০ টাকায়। সপ্তাহে কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এ সপ্তাহে কেজি প্রতি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছে ১৬০ টাকায় ও লেয়ার ১৭০ টাকা, কক মুরগি ২২০-২৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৩৩০-৩৫০ টাকায় বিক্রি করছে।

ডিমের দামও গত সপ্তাহের দামে অপরিবর্তিত রয়েছে। ফার্মের লাল ডিম প্রতি হালি ২৮-৩০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম ৪২-৪৪ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪২-৪৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর খুচরা মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে বেশিরভাগ মাছের দম।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি রুই দেশি ৩০০-৩৫০ টাকা, কাতলা ৩২০-৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০-২৫০, সিলভার কার্প ১৮০-২০০ টাকা, আইড় ৪৫০-৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি আকার বেধে ৬০০-১২০০ টাকা, পুঁটি ২২০-২৫০ টাকা, পোয়া ৪০০-৫০০ টাকা, মলা ৪০০ টাকা, পাবদা ৫৫০-৭০০ টাকা, বোয়াল ৪৫০-৫৫০ টাকা, শিং আকার বেধে ৫০০-৮০০, দেশি মাগুর ৬৫০-৭০০ টাকা, শোল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, পাঙ্গাস ১২০-২০০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০-২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৬০০ গ্রামের ইলিশ মাছ বিক্রি করছে ৭৫০-৯০০ টাকায়।

রাজধানীর খোলাবাজারে লিটার প্রতি বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকায়।

রাজধানীর খুচরা চালের বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি করছে ৩৫-৩৭ টাকা দরে। নতুন মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৫ টাকায় এবং পুরাতন চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়। প্রতি কেজি নতুন লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৩৮ টাকায় এবং পুরাতন লতা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। প্রতি কেজি মোটা চাল ৩২-৩৩ টাকা, বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২ টাকা কমে নতুন ৪০ টাকা ও পুরাতন ৪২ টাকা। নাজিরশাইল প্রতি কেজি ৫০-৫২ টাকা, সুগন্ধ চাল প্রতি কেজি ৭৫-৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আঁতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৮ টাকার মধ্যে। সুগন্ধি চালের মধ্যে কাটারিভোগ ৭৫ টাকা, কালিজিরা প্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে।

খিলগাঁও বাজারের এক ক্রেতা শামীম আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বাজারে কোনো পণ্যের সরবারহ কম নেই তারপরও প্রতিদিনই পণ্যের দাম বাড়ছে। সব ধরনের জিনিসপত্রে দাম চড়া। সামনে রমজান মাস তাই সব পণ্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মাসের বেতন দিয়ে খরচ চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে মাছ ও গরুর মাংস এখন আকাশ ছোয়া। তা আমাদের পক্ষে কেনা অসম্ভব। ব্রয়লার মুরগি কিছুটা কম ছিল তাও এ সপ্তাহে কেজি প্রতি বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

আর মন্ত্রীদের বাজার নিয়ন্ত্রণের কড়া সমালোচনা করে এ নাগরিক বলেন, তারা মিডিয়ার সামনে অনেক কথা বলেন কিন্তু বাজারে আসেন না। বড় বড় হুঁশিয়ারি দেন ঠিক আছে কিন্তু বাজারের সব পণ্যের দাম বাড়ছে কোনো সময় খোঁজ নিছে কেউ। কথা না বলে বাজার সিন্ডিকেটদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেন।

এসআই/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।