রমজানে অসহনীয় যানজট-জলাবদ্ধতায় সীমাহীন দুর্ভোগ
কথা দিয়ে কথা রক্ষা করতে পারছে না পুলিশ, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কিংবা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। রমজানে রাজধানীতে যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখার ঘোষণা দেয়া হলেও যানজটেই নাকাল রাজধানীবাসী। সেই সঙ্গে রয়েছে জলাবদ্ধতা। সীমাহীন দুর্ভোগে ভোগান্তির কোন শেষ নেই তাদের।
রোববার খুব একটা বৃষ্টি না হলেও গত ২/৩ দিনের বৃষ্টিতে রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। রাজধানীর প্রধান সড়ক ও এর আশেপাশের সড়কগুলোর পানি এখনো নিষ্কাশিত না হওয়ায় তা যানজটের একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিন উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। আর দক্ষিণে সকাল থেকেই যানজট ছিল অসহনীয় পর্যায়ে।
তবে ডিএমপি’র ট্রাফিক কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি- উত্তরে কর্মব্যস্ত মানুষ ঈদ উপলক্ষে টুকটাক কেনাকাটা শুরু করেছেন। সে কারণে রাস্তায় গাড়ি ও মানুষ বাড়ছে।
বিগত কয়েক দিনের তুলনায় রাস্তায় যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে দাবি করে তারা আরো বলছেন, রাজধানীর পয়প্রণালী ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি দেখার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের নয় তা দেখার দায়িত্ব সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার।
এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, রমজান ও ঈদে রাজধানী এবং রাস্তায় যানজট থাকবে না। এক সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, রমজানে রাজধানীর যানজট নিরসনে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে দুই সিটি করপোরেশন এর মেয়রদ্বয় রাজধানীর জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনে কাজ চলছে বলেও দাবি করেন। তবে অবস্থাদৃষ্টে তা ভিন্ন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার রামপুরা মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, মৌচাক, বনশ্রী, মহাখালী, বাড্ডা, বনানী ও বনানী ফ্লাইওভার এলাকায় যানজট লেগে আছে রোববার সকাল সাড়ে ৮টার থেকে।
সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন রুটে যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটে রীতিমতো অতিষ্ঠ যাত্রী ও চালকেরা। সময় যতো বাড়তে থাকে যানজট পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়।
টঙ্গি এলাকা থেকে আসা জাহাঙ্গীর নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী জানান, বনানী ফ্লাইওভার নিচে ও এর আশপাশের এলাকায় পানি জমায় রাস্তার মাঝ বরাবর সব গাড়ি চলাচল করছে। সে কারণে মূল রাস্তা সরু হয়ে গেছে। সকাল থেকেই যানজট লক্ষ্য করা গেছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। টঙ্গি থেকে কারওয়ান বাজারে আসতে যেখানে সময় লাগে ১ ঘণ্টা সেখানে আজ (রোববার) ২ ঘণ্টায় আসতে হয়েছে।
ডালিম নামে প্রভাতী পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, প্রতিদিন উত্তরা ১১ সেক্টর থেকে রামপুরায় আসি। সকালেই রওয়ানা দিলে একটু আগে আসতে পারি। কিন্তু সাড়ে ৮টার পর রওয়ানা হলেই রাস্তায় অসহনীয় যানজটে পড়তে হয়। সময় মতো অফিসে যেতে উত্তর বাড্ডা থেকে রামপুরার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করেছেন তিনি।
রায়হান নামে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, শাহজাদপুরের বাসা থেকে প্রতিদিন হেঁটে গুলশান-১ এর অফিসে যান। কিন্তু রাস্তায় পানি জমে যাওয়া হেঁটে যাওয়ার পরিস্থিতি নেই। তবুও বাধ্য হয়ে স্থবির রাস্তা হেঁটেই পার হতে হচ্ছে।
টয়েনবি সার্কুলার রোড থেকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড, জহির রায়হান সরণি থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, গুলিস্তান মাজাররোড, সূত্রাপুর, বঙ্গবাজার এলাকার সব রুটেই চরম যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট লক্ষ্য করা গেছে মতিঝিল ও পল্টনেও। এসব রাস্তার যানজটের প্রভাব অন্য সড়কেও দেখা দেয় যানজট। এ কারণে সকাল থেকেই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
ট্রাফিকের উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার প্রবীর কুমার রায় বলেন, যানবাহন আর মানুষের চাপ এতো বেশি যে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণ কর্মব্যস্ত মানুষ টুকটাক ঈদের কেনাকাটা শুরু করেছেন। সে কারণে রাস্তায় মানুষ বেশি। তবে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে যানজট বেশি হচ্ছে। জলাবদ্ধ অবস্থার উন্নতি হলে যানজট কমবে বলে দাবি করেন তিনি।
ট্রাফিকের দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান রোববার দুপুর ২টার দিকে জানান, দক্ষিণে যানজট পরিস্থিতি সকালে একটু নাজুক ছিল। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
জেইউ/এসএইচএস/পিআর