যেন বাঁকা হাসির জয়
উপরের পাটির বাম পাশের একটি দাঁত বাঁকা। হাসি দেয়ার বেলায় বাঁকা দাঁতটি ঢাকতে চলে ঠোঁটের কারসাজি। আর তাতেই যেন মেলে যায় হৃদয় কাড়া হাসি। সাংসদ, আইনজীবী, অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক। বহু পরিচয়ের মানুষ তিনি। সর্বশেষ পরিচয় মিলতে পারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পদে। তিনি হলেন- তারানা হালিম। আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় প্রতিমন্ত্রী পদে শপথ নিতে যাচ্ছেন তিনি।
বহুগুণের অধিকারী থাকলেও মনকাড়া হাসি’ই তাকে অনন্যা করেছে। পাতলা গড়নের এই অভিনয় শিল্পি হাসি দিয়েই যেন সব জয় করতে অভ্যস্ত। পরিবার, রাজনৈতিক অঙ্গন, অভিনয় জগৎ এমনকি সংসদেও তার মিষ্টি হাসির জুড়ি নেই।
তবে অমন হাসির ছলে কড়া কথায় যে ঝড় তোলা যায়, তার প্রমাণ সর্বশেষ সংসদে দেয়া তারানা হালিমের বক্তব্য। ওইদিন ইতিহাস ও তথ্য নির্ভর বক্তব্যে সংসদের সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। দীর্ঘ ১৩ মিনিটের বক্তব্যে মহাজোট সরকারের সফলতার নানা দিক তুলে ধরে বিরোধীজোটের গঠনমূলক সমালোচনা করেন তারানা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং তার পুত্র তারেক রহমানের তীব্র সমালোচনা করে নিজ শিবিরের ব্যাপক বাহবা পান তরুণ এই রাজনীতিক। কাদা ছোড়াছুড়ির রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও প্রখর ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পান তিনি।
ধারণা করা হচ্ছে, ওইদিনের বক্তব্যেই তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। কড়া অথচ অমন শালীন বক্তব্যে তারানা হালিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নজর কাড়েন বলে দলের মধ্যে প্রচার রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুগ্রহেই মন্ত্রীসভায় যুক্ত হচ্ছেন তারানা।
১৯৬৬ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্ম নেন তিনি। তার পিতা এম এ হালিম প্রথমে আয়কর কমিশনার ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ছিলেন। মা আখতার হালিম ছিলেন স্কুল শিক্ষক। তিন সন্তানের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠ। তারানার পৈত্রিক বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবরিয়া গ্রামে।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর ১৯৮২ সালে আজিমপুর অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক এবং ১৯৮৪ সালে হলিক্রস কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক দুইটি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে তার অবস্থান ছিল নবম। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে এলএলবি ও এলএলএম সম্পন্ন করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নকালে যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং বর্তমানে একই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
২০০৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রথম নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে।
পাঁচ বছর বয়সে ঘুঘু ও শিকারি শিরোনামের একটি নাটকে ‘পিঁপড়া’ চরিত্রের মধ্য দিয়ে অভিনয় জগতে পা রাখা। চলচ্চিত্র অভিনেতা ফারুকের সঙ্গে তার ছোট বোনের চরিত্রে `সাহেব` শিরোনামের বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর অলোচনায় আসেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে টেলিভিশন নাটকে ‘মদিনা’ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শক প্রিয়তা অর্জন করেন। আমজাদ হোসেন পরিচালিত গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮) চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। শত ব্যস্ততা থাকলেও অভিনয় ভুবনে বিচরণ করছেন এখনও।
এএসএস/আরএস/আরআই