ময়মনসিংহে পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় মালিকসহ আটক ৭


প্রকাশিত: ০৫:৫৩ এএম, ১০ জুলাই ২০১৫

ময়মনসিংহে যাকাতের কাপড় নিতে এসে পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় মালিকসহ সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে পদদলিত হয়ে মৃতের সংখ্যা ২৩ জনে দাঁড়িয়েছ। আহত হয়েছেন আরো অর্ধ শতাধিক। তাদের মধ্যে ৪ জনকে গুরুতর অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ সুপার মঈনুল হক মৃতের সংখ্যা ২৩ জন বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। শুক্রবার ভোরে ময়মনসিংহ পৌরসভার কাছে নুরানী জর্দ্দা ফ্যাক্টরিতে যাকাতের কাপড় নিতে এসে এ ঘটনা ঘটে।

অপরদিকে, ঘটনা তদন্তে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান করে তিন সদস্যের এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মল্লিকা খাতুনকে প্রধান করে পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উভয় কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

নিহতরা হলেন, শহরের পাটগুদাম বিহারী ক্যাম্পের সিরাজুলের ছেলে সিদ্দিক (১২), নুরু ইসলামের স্ত্রী সখিনা (৪০) ও তার মেয়ে লামিয়া (০৫), মৃত বারেকের স্ত্রী সামু বেগম (৬০), মৃত জুম রাতির স্ত্রী হাজেরা খাতুন (৭০), শহরের ধোপাখলা এলাকার গোবিন্দ বসাকের স্ত্রী মেঘলা বসাক (৫৫), নারায়ণ চন্দ্র সরকারের স্ত্রী সুধা রানী সরকার (৫৫), মৃত বজেন্দ্রর স্ত্রী রিনা (৬০), মৃত সুলতান মিয়ার স্ত্রী জামেনা বেওয়া (৬৫), চরপাড়া এলাকার হায়দার আলীর স্ত্রী হাসিদা বেগম (৫৫), আকুয়া দক্ষিণ পাড়ার জালালের স্ত্রী নাজমা বেগম (৫০), সালামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫৫), রবি হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার (৫২), কাঠগোলা বাজারের আব্দুল মজিদের স্ত্রী রেজিয়া আক্তার (৫৫), কাঁচারীঘাট এলাকার মাহাতাব উদ্দিনের স্ত্রী ফজিলা বেগম (৭৫), থানাঘাট এলাকার আব্দুস সালেকের স্ত্রী খোদেজা বেগম (৫০), চর ঈশ্বরদিয়ার লাল মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৬০), তারাকান্দা থানার বালিডাঙ্গা গ্রামের মোসলেম মিয়ার স্ত্রী মরিয়ম (৫০) ও অজ্ঞাত আরো দুজন।  

police

প্রতি বছরের মতো এবারো ময়মনসিংহ শহরের অমৃত বাবু রোড এলাকার বাসিন্দা নুরানী জর্দ্দা ফ্যাক্টরির স্বত্ত্বাধিকারী শামীম তালুকদার যাকাত বিতরণের সিদ্ধান্ত নেন। শহরের বিহারী ক্যাম্প, দুলদুল ক্যাম্প ও থানাঘাট বস্তিসহ শহরের বস্তি এলাকায় হতদরিদ্রদের মাঝে ৬শ কার্ড বিতরণের মাধ্যমে শুক্রবার সকাল থেকে যাকাতের ওই শাড়ি-লুঙ্গি প্রদানের দিন ধার্য্য করেন। সেই লক্ষ্যে সেহরির পর থেকে আনুমানিক দুই থেকে তিন হাজার লোক অপেক্ষা করতে থাকনে ওই বাড়ির সামনেসহ আশপাশের অলিগলিতে। ভোর পৌনে ৫টার দিকে যাকাতের জন্য গেটের ভেতর প্রবেশ করতে চাইলে ফ্যাক্টরির কর্মচারীরা বাঁধা দেন এবং ভেতর থেকে লাঠিপেটা করেন।

এসময় হুড়োহুড়ি করে পদদলিত হয়ে ঘটনাস্থলেই ৮ থেকে ১০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধ শতাধিক। পরে স্থানীয়রা তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যান আরো ১০/১২ জন।

ঘটনার পরপর পুলিশ সুপার খন্দকার মঈনুল হক ২০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। নিহতদের মধ্যে সকাল ১০টায় হাসপাতাল মর্গ থেকে পুলিশ ১২ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছেন। নিহতদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি।  

এদিকে যাকাত নিতে আসা হতদরিদ্র জয়নাল, খসরু ও রেবেকা বেগমসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, ভিড় এড়াতে তাদের লাঠিপেটা করা হয়েছে। ফলে দ্বিগবিদিক ছুটোছুটি করে এতগুলো মানুষ মারা গেছেন। তারা জানান, মৃতের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ জন হবে। আশপাশের অলিগলি থেকেও কয়েকটি মরদেহ রাস্তার উপর পড়ে থাকতে দেখেছেন তারা। এদিকে নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

# ময়মনসিংহে পদদলিত হয়ে ২০ জনের মৃত্যু

আতাউল করিম খোকন/এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।