মাত্র এক সপ্তাহ আগেই বৈঠকে বসেছিলেন ৫০ ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ
নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের মাত্র এক সপ্তাহ আগেই সম্ভাব্য এই দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করতে দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুতে জড়ো হয়েছিলেন বিশ্বের প্রায় ৫০ জন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানী। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৩৪ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নেপালের কাঠমান্ডু প্রায় মিশে গিয়েছিল। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় তারই প্রস্তুতি কীভাবে নেওয়া যায় সে জন্যই বিশেষজ্ঞরা সেখানে মিলিত হন।
এই দরিদ্র, ঘনবসতিপূর্ণ, অপরিকল্পিত উন্নয়নের শহরটিকে কীভাবে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ সামাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা যায় তারই উপায় নির্ধারণ করতে এসেছিলেন তারা। বিশেষজ্ঞরা জানতেন, তারা ঘড়ির কাটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছেন, তবে তারা জানতেন না কখন কীভাবে এই ভয়ানক আঘাত আসবে।
যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান জেমস জ্যাকসন বলেন, এই দুঃস্বপ্নের আশঙ্কা করছিলাম। কাঠামোগত ও ভূতাত্ত্বিকভাবে যা ঘটেছে প্রকৃত অর্থে তা আমাদের আশঙ্কায় ছিল। কিন্তু শনিবারই এতো দ্রুত এই ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানবে সেটা আমরা ধারণা করিনি।
নেপালে শনিবার ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নেপালে এর আগে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ১৯৩৪ সালের ভূমিকম্পে, ওই দুর্যোগে সাড়ে ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
এখনো বিভিন্ন বিধ্বস্ত ভবন ও স্থাপনার নিচে আটকা পড়ে আছেন অনেকে। কাঠমান্ডুতে ভূমিকম্পের আতঙ্ক দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। শুধু ভূকম্পনজনিত ত্রুটির কারণেই নয়, ঘনবসতির কারণে পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
একই মাত্রার ভূমিকম্পে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)। ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ভবন নির্মাণ না করা এবং বাড়তি জনসংখ্যার কারণে তা হতে পারে বলে তাদের পর্যবেক্ষণ।
এই মাত্রার ভূমিকম্পে ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রতি ১০ লাখে ১০ থেকে ৩০ জন মানুষের মৃত্যু হবে। আর নেপালে সম্ভবত ১ হাজারেরও বেশি, পাকিস্তান, ভারত, ইরান ও চীনে পৃথকভাবে প্রায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হবে বলে মনে করছেন ইউএসজিএসের ভূকম্পনবিদ ডেভিড ওয়াল্ড।
জেমস জ্যাকসন বলেন, যদিও ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিন্তু তার ফলাফল বেশিরভাগই মানবসৃষ্ট। যদি আপনি সমতল মরুভূমিতে পানিহীন অবস্থায় বাস করেন তাহলে ভূমিকম্প আপনার ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু সেখানে খুব কম মানুষই বাস করতে চাইবেন। এশিয়ার আসল সমস্যা হচ্ছে, বিপজ্জনক এলাকাগুলোতে মানুষ কীভাবে জড়ো হচ্ছে।
কাঠমান্ডু বারবারই সতর্কতা পেয়েছিল। পৃথিবী নিজেই প্রথমবার সেই সতর্কতা জানিয়েছিল। ২০৫ বছরের মধ্যে এটি দেশটিতে পঞ্চমবারের মতো শক্তিশালী ভূমিকম্প হলো। এগুলোর মধ্যে ১৯৩৪ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পও রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ভূমিকম্প ঝুঁকি নিয়ে কর্মরত একটি সংস্থা জিওহ্যাজার্ডস ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সমন্বয়ক হ্যারি জাই বলেন, তারা তাদের সমস্যা জানে কিন্তু তা এতোই বিশাল যে কোথা থেকে শুরু করবে তা বুঝে উঠতে পারেনি।
জ্যাকসন, হ্যারি ও ওয়াল্ডের মতে, নেপাল ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাসে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে কিছুটা অগ্রসর হয়েছে, কিন্তু তা খুব দ্রুততার সঙ্গে তো নয়ই এমন কি বড় কিছুও নয়।
হ্যারি বলেন, অনেক বছর ধরেই নেপালে ভবন নির্মাণে কোনো নিয়ম অনুসরণ করা হয় না। এ কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনা না করেই সেখানে ভবন বা ঘরবাড়ি নির্মিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি সেখানে ভবন নির্মাণে নিয়ম মানা হচ্ছে। কিন্তু তাতে পুরনো ভবনগুলো তো আর নিরাপদ হচ্ছে না।
বিএ/আরআই