মক্কায় হজের স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ (পর্ব-১)


প্রকাশিত: ১২:০০ পিএম, ১১ আগস্ট ২০১৫

মুমিন বান্দা বিশ্ব মুসলিমের আধ্যাত্মিক সম্মেলনে হাজির হবেন। সেখানের প্রতিটি স্থানে প্রান্তরে-প্রান্তরে মানুষের আবেগ-অনুভূতিগুলো কাজ করে মাওলার প্রেমে পাগল হয়ে। মানুষ যাতে অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আল্লাহর দরবারে প্রাণ খুলে চাইতে পারে। নিজের গুনাহসমূহ মাপ করিয়ে নিতে পারেন। মনের সব চাওয়া-পাওয়া পূরণে অতিদ্রুত এগিয়ে যেতে পারেন। সে লক্ষ্যেই মক্কায় যে স্থানে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি এবং যে স্থানগুলো হজ ও ওমরার রুকনের সঙ্গে জড়িত। স্মৃতি বিজড়িত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের শুরু হতে ওফাত পর্যন্ত। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য আজকে তার প্রথম পর্ব তুলে ধরা হলো-

১. কা’বা ঘরের ভেতর-
মুসলমানদের সর্বপ্রথম ইবাদতস্থল পবিত্র কাবা। রহমত ও বরকতপূর্ণ স্থানের নাম কাবা। এর ভেতরের দেয়ালগুলো সবুজ পর্দায় আবৃত। এই পর্দাগুলো প্রতি তিন বছর পর পর পরিবর্তন করা হয়। এর ছাদে ১২৭ সে. মি লম্বা ও ১০৪ সে.মি. প্রস্থের একটি ভেন্টিলেটর রয়েছে যা দিয়ে সূর্যের আলো ভেতরে প্রবেশ করে। ভেন্টিলেটরটি একটি কাচ দিয়ে ঢাকা থাকে। যখন কাবা ঘরের ভেতর ধোয়া হয় তখন এ কাচটি খোলা হয়। কাবা ঘরের ভেতর প্রতি বছর দুবার ধোয়া হয়, শাবান মাসের ১৫ তারিখ এবং মহররম মাসের মাঝামঝি সময়। মেঝে ও দেয়াল গোলাপ আতর মিশ্রিত জমজমের পানি দিয়ে ধোয়া হয়। ধোয়ার পরে মেঝে এবং দেয়াল সাদা কাপড় ও টিস্যু দিয়ে মোছা হয়।

২.হাতিমে কা’বা
hajj

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মি`রাজে গমণের সময় যে স্থান থেকে বোরাকে উঠে ছিলেন।

৩. মসজিদুল হারাম-
hajj

কাবা শরীফ ও তার চার পাশের মাতাফ, মাতাফের ওপারে বিল্ডিং, বিল্ডিংয়ের ওপারে মারবেল পাথর বিছানো উন্মুক্ত চত্বর এ সবগুলো মিলে বর্তমান মসজিদুল হারাম গঠিত। আর তৎকালে কাবা শরীফের চারপাশে সামান্য এলাকা জুড়ে ছিল মসজিদুল হারাম, উম্মে হানীর ঘর মসজিদুল হারাম থেকে ছিল দূরে। তা সত্ত্বেও ওই জায়গাকে মসজিদুল হারাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

৪. মুলতাযাম-
মুলতাযাম মানে হলো এঁটে থাকার জায়গা অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদ থেকে কাবা শরীফের দরজা পর্যন্ত জায়গাটুকুকে মুলতাযাম বলে। সাহাবায়ে কেরাম মক্কায় এসে মুলতাযামে যেতেন ও দু’হাতের তালু বা দু’হাত, চেহারা ও বক্ষ রেখে দোয়া করতেন। বিদায়ি তাওয়াফের পূর্বে বা পরে অথবা অন্য যে কোনো সময় মুলতাযামে গিয়ে দোয়া করা যায়। বর্তমানে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে মুলতাযামে ফিরে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

৫. মিযাবে রহমত-
বায়তুল্লাহর উত্তর দিকের ছাদে (হাতিমের মাঝ বরাবর) যে নালা বসানো আছে, তাকে ‘মিযাবে রহমত’ বলা হয়। এই নালা দিয়ে ছাদের বৃষ্টির পানি পড়ে।

৬. মাতাফ বা তাওয়াফের স্থান-
কাবা শরীফের চারপাশে উন্মুক্ত জায়গাকে মাতাফ বলে। অর্থাৎ তাওয়াফ করার জায়গা। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের প্রথমে কাবার চারপাশে প্রায় ৫ মিটার প্রশস্ত করেন, যা পর্যায়ক্রমে সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে শীতল মারবেল পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে মাতাফ, যা প্রচণ্ড রোদের তাপেও শীতলতা হারায় না। ফলে হজকারীগণ আরামের সাথে পা রেখে তাওয়াফ সম্পন্ন করতে পারেন।

৭. জমজম কূপ-
hajj

দুনিয়াতে আল্লাহ রাববুল আলামিনের যত অনুপম নিদর্শন আছে, তার মধ্যে মক্কা শরিফে অবস্থিত ‘জমজম কূপ’ অন্যতম। জমজম কুপ এখন বেজমেন্টের নিচে, চাইলেও তা দেখা সম্ভব নয়। এ কূপের পানি সর্বাধিক স্বচছ, উৎকৃষ্ট, পবিত্র ও বরকতময়। এ পানি শুধু পিপাসাই মেটায় না; এতে ক্ষুধাও নিবৃত্ত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এ পানি শুধু পানীয় নয়; বরং খাদ্যের অংশ এবং এতে পুষ্টি রয়েছে।

৮. মাকামে ইবরাহিম-
hajj

মক্কার আরেকটি নিদর্শনের নাম মাকামে ইবরাহিম। যা কাবা নির্মাণের সময় ইসমাইল আলাইহিস সালাম নিয়ে এসেছিলেন। পাথরটির ওপর দাঁড়িয়েই হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম কা’বা ঘর নির্মাণ করেন। কা’বা নির্মাণে ওপরে উঠার প্রয়োজন হলে পাথরটি আল্লাহর কুদরতে ওপরের দিকে ওঠে যেত। পাথরটিতে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পদচিহৃ রয়েছে। তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমের পেছনে দু’রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়।

৯. সাফা ও মারওয়া পাহাড় ও মাস’আ-
সাফা : কাবা শরীফ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ১৩০ মিটার দূরে সাফা পাহাড় অবস্থিত। সাফা একটি ছোট পাহাড় যার উপর বর্তমানে গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে এবং এ পাহাড়ের একাংশ এখনও উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। সমতল থেকে উঁচুতে এই পাকা অংশের ওপরে এলে সাফায় উঠেছেন বলে ধরে নেয়া হবে। সেখান থেকে এখনও পবিত্র কাবা দেখা যায়।

মারওয়া : পবিত্র কাবা থেকে ৩০০ মিটার দূরে পূর্ব- উত্তর দিকে অবস্থিত শক্ত সাদা পাথরের ছোট্ট একটি পাহাড়। সেখান থেকে বর্তমানে পবিত্র কাবা দেখা যায় না।

মাস’আ : সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থানকে মাস’আ বলা হয়। চিহ্নিত যে স্থানটিতে দৌঁড়াতে হয়। মাসআ’র গ্রাউন্ড ফ্লোর ও প্রথম তলা সুন্দরভাবে সাজানো। গ্রাউন্ড ফ্লোরে ভিড় হলে প্রথম তলায় গিয়েও সাঈ করতে পারেন। প্রয়োজন হলে ছাদে গিয়েও সাঈ করা যাবে তবে খেয়াল রাখতে হবে আপনার সাঈ যেন মাসআ’র মধ্যেই হয়। মাসআ থেকে বাইরে দূরে কোথাও সাঈ করলে সাঈ হয় না।

১০. রূকনে ইয়ামানি-
কাবা শরীফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ। তাওয়াফের সময় এ কোণকে সুযোগ পেলে স্পর্শ করতে হয়। হজর ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুই রুকনে ইয়ামানি ব্যতীত অন্য কোনো জায়গায় স্পর্শ করতে দেখিনি। (বুখারি)

১১. হাজরে আসওয়াদ-
পবিত্র কাবার দক্ষিণ কোণে যার দৈর্ঘ্যে ২৫ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ১৭ সেন্টিমিটার। জমিন থেকে ১ দশমিক ১০ মিটার উচ্চতায় হাজরে আসওয়াদ স্থাপিত। হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে নেমে-আসা একটি পাথর। যার রং শুরুতে দুধের বা বরফের চেয়েও সাদা ছিল। পরে আদম-সন্তানের পাপ তাকে কালো করে দেয়। হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করলে গুনাহ মাফ হয়। হাজরে আসওয়াদের একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট রয়েছে, যে ব্যক্তি তাকে চুম্বন-স্পর্শ করল, তার পক্ষে সে কিয়ামতের দিন সাক্ষী দেবে।

জাগোনিউজ২৪ডটকমের সঙ্গে থাকুন। হজের স্থানগুলোর পরিচিতি ও তাৎপর্যসহ ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

এমএমএস/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।