পানির নিচে মহেশখালী দ্বীপ : শিশুসহ নিহত ৪

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:১৮ পিএম, ২৯ জুলাই ২০১৫

পূর্ণিমার জোয়ার ও গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারের উপকূলীয় মহেশখালী দ্বীপের বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। মঙ্গলবার এখানে নিহত হয়েছেন শিশুসহ চার জন। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। বন্যায় তলিয়ে গেছে অসংখ্য কাঁচা বাড়ি। গোটা উপজেলা বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দুর্গতদের নিরাপদে নিয়ে আসতে সন্ধ্যার পর থেকে প্রশাসনের নানামুখি তৎপরতা শুরু হয়।  

জেলা আবহাওয়া অফিস, উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে মহেশখালীতে ধারাবাহিকভাবে বৃষ্টি ও ঝড়ো বৃৃষ্টি হচ্ছিল। সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ক্রমশ ঘণীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়।

বুধবার সন্ধ্যায় নিম্নচাপটি মহেশখালী তথা কক্সবাজার থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের আশপাশে মহেশখালী উপকূলের কাছাকাছি উত্তর বঙ্গোপসাগরে সাগর উত্তাল রয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে মহেশখালীতে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বইছে। এদিকে সমুদ্র এমন উত্তাল থাকায় বুধবার বিকেল ৩টা নাগাদ সোনাদিয়া থেকে কাঁকড়া আহরণ করে ফেরার পথে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ২ জেলে নিহত হয়েছেন। এসময় পানিতে ডুবে আহত হয়েছেন আরো ৭ জন। পরে স্থানীয়রা প্যারাবনে আটকে যাওয়া নিহত দুই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেন।

নিহতরা হলেন, গিয়াস উদ্দিন কালু (৩৫) ও মহেশখালীর মগরিয়াকাটা এলাকার ইয়ার মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ একরাম (২৬)। দুজনই কাঁকড়া আহরণের কাজ করতেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে, ব্যাপক বৃষ্টির কারণে বড় মহেশখালীর পাহাড়তলী এলাকায় জনৈক দিনমজুর সৈয়দ নুরের কাঁচাবাড়ি ধসে পড়েছে। এসময় দেয়াল চাপা পড়ে ৫ বছরের এক মেয়ে শিশু নিহত হয়।

নিহত শিশুর নাম হুমায়রা বেগম। হুমায়রা ছৈয়দ নুরের মেয়ে। অপরদিকে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে বাঁকখালী মোহনায় ট্রলার থেকে পড়ে গিয়ে নিহত হন উপজেলার কালামার ছড়ার এক জেলে। নিহত জেলের নাম আব্দুল করিম (৩০), তিনি স্থানীয় মোহাম্মদ শাহ ঘোনার আব্দুল করিমের ছেলে। তাছাড়া বিছিন্নভাবে আরো কিছু হতাহতের খবর পাওয়া গেলেও নির্ভযোগ্য সূত্র থেকে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সূত্র জানিয়েছে, পূর্ণিমার জোয়ার ও গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে মহেশখালী দ্বীপের নিন্মাঞ্চল প্রায় ৪ থেকে ৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এসময় অসংখ্য কাঁচা বাড়িঘর ধসে পড়ে। আহত হন অন্তত শতাধিক লোক। পাহাড়ে ঢল ও ধসের কারণে অসংখ্য পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পানিতে একাকার হয়ে পড়েছে বহু চিংড়ি প্রকল্প। ধারাবাহিক বৃষ্টির ফলে গত ৪ দিন ধরে মহেশখালীর সঙ্গে দূরপাল্লার যান যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সমগ্র মহেশখালী বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।  

এদিকে সন্ধ্যার পর মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন জরুরি কন্ট্রোল রুম খুলেছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৮৩৪৩৭৯২৭৭।

মহেশখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) দিদারুল ফেরদৌস জাগো নিউজের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল নাসের জাগো নিউজকে জানান, মহেশখালীর নিম্নাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকা থেকে অন্তত ৩শ’ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। রাতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট অতিরিক্ত জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সংবাদে প্রশাসন ও রেডক্রিসেন্ট নানা প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে। লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসার জন্য মসজিদে মসজিদে মাইকিং করা আহ্বান জানানো হচ্ছে।

কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শফিউল আলম সাকিব জানান, দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রশাসন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।