জাতীয় যক্ষ্মা প্রকোপ জরিপ চলছে


প্রকাশিত: ০২:১৫ পিএম, ০৩ জুলাই ২০১৫

দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে যক্ষ্মা প্রকোপের সঠিক হার নিরুপণে বর্তমানে দেশব্যাপি ‘জাতীয় যক্ষ্মা প্রকোপ জরিপ’ চলছে। এ জরিপের আওতায় ১৫ বছরের বেশি বয়সী এক লাখ নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, নমুনা কফ ও ডিজিটাল মেশিনে এক্সরে করা হচ্ছে।

রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বিপুল সংখ্যক নমুনা নিয়ে বাংলাদেশে ইতিপূর্বে কোনো রোগের জরিপ করা হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ জরিপ কার্যক্রমে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ৩ মার্চ থেকে এ জরিপ কাজ চলছে।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্ভুলভাবে যক্ষ্মা শনাক্তকরণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ট্যাব ও ল্যাপটপে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে নমুনা হিসেবে প্রচলিত পদ্ধতিতে কফ (মাইক্রোস্কপি ও কালচার), জিন পদ্ধতিতে পরীক্ষা ও প্রত্যেকের ডিজিটাল এক্সরে করা হচ্ছে।

রাজধানীসহ সারাদেশের মোট জনসংখ্যাকে ১২৫ গুচ্ছে (শহরে মহল্লা ও গ্রামে মৌজা) ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি মহল্লা ও মৌজায় গড়ে ৭২০ থেকে ৮৮০ নারী ও পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, রেডিওলজিস্ট ও ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ানদের সমন্বয়ে গঠিত ১১ সদস্যের একটি দল প্রতিটি খানা এলাকায় পোর্টেবল এক্সরে মেশিন নিয়ে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন।

ইতিমধ্যেই ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৭টি খানার প্রায় ২২ হাজার মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এক লাখ নমুনা নিয়ে জাতীয় যক্ষ্মা প্রকোপ জরিপ শুরু হয়েছে। খানা নির্বাচন থেকে শুরু করে নমুনা প্রদানকারীর সকল প্রকার তথ্য-উপাত্ত, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুসরণ করে নির্ভুলভাবে করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসি আটলান্টা বিশেষজ্ঞরা এ জরিপ কাজ তত্ত্বাবধান ও মনিটরিং করছেন বলে মাহমুদুর রহমান জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সারাদেশের ৫০ খানা এলাকায় ৫২ হাজার লোকের ওপর জাতীয় যক্ষ্মা জরিপ করা হয়েছিল। ওই জরিপে নতুন যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতি লাখে ৬৩.৩ জন বলা হয়েছিল। কিন্তু ওই জরিপ ফলাফল মেনে নেয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, যে খানা এলাকায় নমুনা জরিপ চলছে সেখানে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে আগাম তথ্য-উপাত্ত নেয়া হচ্ছে। যেসব বাড়িতে নমুনা সংগ্রহ করা হবে তাদের তথ্য-উপাত্ত বার কোড দিয়ে ট্যাবে রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে।

নমুনা সংগ্রহের আগের দিন তাদের চিঠি পাঠিয়ে নমুনা দিতে নির্দিষ্ট স্থানে আসতে বলা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে নমুনা প্রদানে রাজি আছে এই মর্মে সম্মতিপত্র নেয়া হচ্ছে। প্রথমদিন কফ সংগ্রহ ও মোবাইল এক্সরে মেশিনে এক্সরে করা হচ্ছে। পরদিন আবার কফ সংগ্রহ করা হচ্ছে। আসা-যাওয়ার খরচ হিসেবে তাদের ১০০ টাকা করে দেয়া হচ্ছে।

মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন এমন একজন চিকিৎসক জানান, সকল প্রকার তথ্য-উপাত্ত ও এক্সরে রিপোর্ট সিডিতে করে আইইডিসিআরে পাঠানো হচ্ছে। আইইডিসিআরে বিশেষজ্ঞ রেডিওলজিস্টরা এক্সরে ঠিক মতো করা হয়েছে কি-না তা দেখছেন।

আইইডিসিআরের পরিচালক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, যক্ষ্মা রোগের প্রকোপের সঠিক হার নির্ধারণ বাংলাদেশের জন্য খুবই জরুরি। সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ নানা ক্ষেত্রের সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে এ জরিপ ফলাফল ভূমিকা রাখবে।

একটি ইভিডেন্স বেইজড (তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষ) নির্ভুল জরিপ ফলাফল পেতে সতর্কতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জরিপ কার্যক্রম শেষ হতে আরো বছর খানেক সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান।

এমইউ/বিএ/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।