ঘাটতি ও বিনিয়োগ চ্যালেঞ্জের বড় বাজেট
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট পেশ হচ্ছে কাল বৃহস্পতিবার। টানা দুই মেয়াদে ১০ বছরে এটি হবে সপ্তম বাজেট। আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এটি নবম বাজেট। আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট হতে পারে দুই লাখ ৯৫ হাজার ২শ কোটি টাকার। তবে অর্থমন্ত্রী এটি ৩ লাখ ১০০ কোটি টাকা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রস্তাব তৈরি করতেই অর্থ সংকটে পিছু হঠতে হয়েছে তাকে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার। সে হিসাবে আগামী বাজেটের আকার প্রায় ১৮ শতাংশ বা ৪৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। তবে এবারে বাজেটে ঘাটতি থাকছে ৮৫ হাজার ৮শ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আদায় লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি থেকে কমিয়ে শেষ পর্যন্ত এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। আগামী অর্থবছরের জন্য এনবিআরের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা করা হতে পারে এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। তার মানে ভবিষ্যতে এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪১ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায় করতে হতে পারে। আর মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে দুই লাখ ৭ হাজার ৭শ কোটি টাকা। তবে এনবিআর বলছে, তাদের পক্ষে এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আদায় করা সম্ভব নয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে আগামী বাজেটে তা দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হতে পারে। আর ন্যূনতম আয়কর তিন হাজার থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে চার হাজার টাকা।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ঠিক করা হয়েছে এক লাখ ৯৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের প্রকল্প রয়েছে তিন হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। সেটি বাদ দিলে এডিপি হচ্ছে ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে গোটা বাজেটের আকারই ছিল ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। হিসাব মতে, এডিপি হিসাবায়নে সংস্থার নিজস্ব তহবিল ধরা হয় না।
এডিপি বাদে বাজেটের আকারের বাকি অংশ হচ্ছে এনবিআরের মাধ্যমে সরকার কত টাকা সংগ্রহ করবে, বৈদেশিক অনুদান আসবে কত, ব্যাংক ঋণ কত, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের সুদ কত পরিশোধ করতে হবে। সবকিছুর পর ঘাটতি থাকবে কত টাকা।
ঘাটতি :
ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে সরকারকে। আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে করতে হবে প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে আসবে ৩৮ হাজার ৩০৩ কোটি ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
প্রাপ্তি :
নতুন অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হচ্ছে। এর মধ্যে এনবিআর-নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য থাকবে এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। যদিও এনবিআর জানিয়েছে, এটা সম্ভব নয়। তবে আয়কর থেকেই সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করতে চায় এনবিআর। আদায়ের লক্ষ্য ৬৫ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা।
জিডিপি :
নতুন অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী ৭ অথবা ৭ দশমিক ১ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলবেন। বারবার লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েও ৬-এর ঘর পার হতে না পারার ব্যর্থতায় এবার লক্ষ্যমাত্রা টেনে ধরবেন তিনি। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সাময়িক হিসাব দিয়ে জানিয়েছে, প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।
শিশু বাজেট :
দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু। সে হিসেবে দেশে ছয় কোটি ৪০ লাখ শিশু রয়েছে। তাদের নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা থাকছে আগামী বাজেটে। তবে এটি পরীক্ষামূলক হবে। এর আগে জেলা বাজেট উদ্ভাবন করে তা নিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন মুহিত।
বিনিয়োগ :
বেসরকারি বিনিয়োগে দীর্ঘস্থায়ী মন্দা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হিসেব মতে, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ৯ শতাংশের কাছাকাছি। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩ টায় জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় কি থাকছেন বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে। ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সবাই তাকিয়ে আছেন তার দিকে। কী সুখবর দেবেন মুহিত তার বাজেটে?
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ গত সোমবার তাদের পর্যালোচনায় বলেছেন, বিনিয়োগ বাড়ানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ। প্রবৃদ্ধির উচ্চতর সোপানে যেতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ১৩ হাজার কোটি টাকা লাগবে। বাড়তি সম্পদ জোগান দিতে চাপে আছেন মুহিত। এ লক্ষ্য অর্জনে আয়কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়িয়ে অধিক সম্পদ আহরণে পদক্ষেপ থাকছে বাজেটে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ ত্বরান্বিত করতে সাত হাজার ২০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
এসএ/এএইচ/এমএস