কে এই ফারাবী
সোশ্যাল মিডিয়াতে অতি পরিচিত একটি নাম ফারাবী। লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর সোশ্যাল মিডিয়াতে এ নামটি আরো ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হতে থাকে।
অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর ফারাবী ও অন্য এক যুবকের চ্যাটিংয়ের স্ক্রিন শট সোশাল মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে শেয়ার হতে থাকে। স্ক্রিন শটটিতে লেখা ছিল : ফারাবী অভিজিৎকে হত্যা করতে চান। এর উত্তরে বলা হয়, ‘অভিজিৎ রায় আমেরিকায় থাকে। তাই তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে তখন তাকে হত্যা করা হবে।’
ফলে সবার মনে এখন একই প্রশ্ন কে এই ফারাবী? ফারাবীর পুরো নাম শফিউর রহমান ফারাবী। পড়ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতেই তিনি হিজবুত তাহিরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সেই সঙ্গে শুরু করেন ব্লগে লেখালেখি। শুরু থেকেই ইসলাম ধর্মের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে লেখালেখি করে প্রচুর জনপ্রিয়তা পান।
তিনি নিজেই স্বীকার করেন হিজবুত তাহরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু একবার জেলে যাওয়ার পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে নিজের জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য ব্লগে ধারাবাহিকভাবে লিখতে শুরু করেন তার জেল জীবনের বিভীষিকাময় দিনলিপি। পাশাপাশি সরকারকে তুলোধুনো আর এই সরকারকে জালেম সরকার উল্লেখ করে লেখালেখি করে তরুণ প্রজন্মের নিকট জনপ্রিয়তা পান তিনি।
ফারাবী অত্যন্ত সচ্চরিত্রের অধিকারী হিসেবে নিজেকে সবসময়ই পরিচয় দেন। নিজেকে সবসময় ধার্মিক হিসেবে ব্লগে-ফেসবুকে উপস্থাপন করতেন।
মেয়েদের সাথে চ্যাটিং ছিল তার অনলাইন জগতের অন্যতম একটি কাজ। একজন নারী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট কয়েকদিন আগে লিখেছেন ফারাবী তার সাথে বেশ কিছুদিন থেকে দেখা করতে চায়। সেই নারী কৌতহলবশত তার তিন বন্ধুসহ দেখা করেন। এরপর থেকেই সেই মেয়েকে উত্যক্ত করতো ফারাবী।
তার বিরুদ্ধে মেয়েদেরকে উত্যক্ত করার অনেক অভিযোগ রয়েছে। ধর্মীয় মনোভাবাপন্ন মেয়েদের তিনি প্রথমে তার অস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করতো এরপর সেই সব মেয়েদের নিকট আর্থিক সুবিধা নিতো। মেয়েদের নিকট সহানুভূতি নেয়া তার একটি অন্যতম বৈশিষ্ঠ ছিল।
শফিউর রহমান ফারাবী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিদ্যায় চতুর্থ বর্ষে পড়লেও তার বর্ষের শিক্ষার্থীরা বহু আগেই পড়াশুনা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে গেছেন।
কিন্তু রাজনীতির সাথে জড়িয়ে ফারাবী এখনো তার পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি মেসে থেকে তিনি অনলাইনে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতেন। বিভিন্ন সময়ে ব্লগে আর ফেসবুকে তিনি ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে পোস্ট দেয়ার পাশপাশি জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পোস্ট দিতেন।
ফারাবী নিজেকে শিবির বিরোধী হিসেবে দাবি করলেও তিনি সব সময় শিবিরের কর্মকান্ডে মানুষকে প্রভাবিত করতেন। শিবিরের পক্ষে সাফাই গেয়ে ব্লগ ও ফেসবুকে বিভিন্ন নোট লিখতেন। যার কারনে ইসলামিক মনোভাবী লেখকদের নিকট তিনি বিতর্কিত হয়ে ওঠেন।
শাহবাগ আন্দোলনে তার উস্কানীমূলক লেখার কারনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে গ্রেফতারের দাবী বিভিন্ন সময় আসলেও তাকে গ্রেফতার করা হয় নি। সর্বশেষ ব্লগার রাজীব হত্যার ঘটনায়ও ফারাবীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।
এআরএস/এমএস