উপকূলজুড়ে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত


প্রকাশিত: ০৬:০৫ পিএম, ২৯ জুলাই ২০১৫

উত্তর বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’-এ পরিণত হয়ে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও চাঁদপুরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বুধবার বিকেল থেকে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।

‘কোমেন’ ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে ৪/৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের মাঝ বরাবর
উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে জেলা আবহাওয়া অফিস। আর জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উপকূলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত মৌসুমী নিম্নচাপটি ঘণীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি বর্তমানে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছে। কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৬ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ূতাড়িত জলোচ্ছ্বসে প্লাবিত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ বর্তমানে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটে সাগর মাঝারি ধরনের উত্তাল রয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়ে গতকাল রাত ৮টার দিকে তাৎক্ষণিক এক জরুরি সভা করেন জেলা প্রশাসক। সভায় কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারি আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, গভীর নিম্নচাপটি কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে। এটি ১০/১২ কিলোমিটার বেগে কক্সবাজারের দিকে আসছে। গভীর নিম্নচাপটি বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। ৬০/৭০ কিলোমিটার বেগে ওই নিম্নচাপটি আঘাত হানতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।


আবহাওয়াবিদ আরো জানান, এ কারণে কক্সবাজারকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে এবং সমুদ্র থেকে সকল ধরনের ফিশিং ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নিম্নাঞ্চলের মানুষদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে জেলা প্রশাসনকে।

জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জরুরি সভা থেকে জানানো হয় একদিকে অতিবৃষ্টি ও অন্যদিকে গভীর নিম্নচাপের কারণে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা আরো বেড়েছে। পাশাপাশি রয়েছে ৪/৬ ফুট জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা। ত্রিমুখি সমস্যায় কক্সবাজার। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানো না গেলেও ক্ষয়ক্ষতি কমানো যেতে পারে। আর এ ক্ষয়-ক্ষতি এড়াতে নেয়া হয়েছে নানা সিদ্ধান্ত। তন্মধ্যে বৃহস্পতিবার জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। আর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবহৃত হবে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিম্নাঞ্চল ও উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সকল লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে।

জরুরি সভা শেষে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানান, ত্রিমুখি সমস্যায় জর্জরিত কক্সবাজারবাসীকে বাঁচাতে জেলা প্রশাসন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উপকূল ও ঝূঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসতদের নিরাপদ স্থানে সরে আসতে বুধবার রাত থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে গঠন করা হয়েছে উদ্ধারকারী দল। পাশাপাশি জেলার সকল আশ্রয় কেন্দ্র বুধবার রাত থেকেই খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া রেড ক্রিসেন্ট ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, ১০টি স্পিড বোট, সাতটি বাস ও কয়েকটি ট্রাক ঠিক করে রাখা হয়েছে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে ব্যবহারের জন্য। মজুদ করা হয়েছে শুকনো খাবার। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আগতদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সিভিল সার্জনের মাধ্যমে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সায়ীদ আলমগীর/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।