আইসিডিডিআরবির মুখ্য পরিচালন কর্মকর্তা সাধারণ গ্র্যাজুয়েট!
আইসিডিডিআরবির যে মুখ্য পরিচালন কর্মকর্তার (সিওও) অপসারণের দাবিতে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে নেমেছেন সেই শীর্ষ কর্মকর্তা একজন সাধারণ গ্রাজুয়েট বলে অভিযোগ উঠেছে! নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বব্যাপি সুপরিচিত এ প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে যে সকল বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকরা কর্মরত রয়েছেন তাদের শতকরা ৮০ ভাগের শিক্ষাগত যোগ্যতা বর্তমান সিওও’র চাইতে অনেক বেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মী মঙ্গল সংঘের একাধিক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, আইসিডিডিআরবি মূলত গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান। গবেষণা ছাড়াও এ প্রতিষ্ঠানটি হসপিটাল ও ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস ও দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানী, ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
তারা বলেন, এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যে ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পূর্ব অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয় তা বর্তমান সিওও ইনগ্রিড রিনাউডের নেই।মার্কিন এক নারীর তদবিরের জোরে তিনি এ চাকরি পেয়েছেন।
সূত্র জানায়, আইসিডিডিআরবি পরিচালনার সর্বোচ্চ ক্ষমতা ১৬ সদস্যের ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের। এখানে মাত্র তিনজন ছাড়া বাকি সবগুলো পদই দখল করে আছেন বিদেশি নাগরিকরা। তাদের সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটেই শীর্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকলেও তাদের মাধ্যমেই ইনগ্রিড রিনাউড সিওও পদে নিয়োগ পেয়েছেন। বর্তমান সিওও লং আইল্যান্ডর সাউথহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন আর্টস অ্যান্ড সাইকোলজি বিষয়ে ব্যাচেলর (১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ মেয়াদে) ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীকালে জনহপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারি বিজনেস স্কুল থেকে মাস্টার অ্যাপ্লায়েড বিহেভিয়ারেল সায়েন্স, অর্গানাইজেশনাল ডেভেলপমেন্ট (১৯৯৭-২০০০) বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি বিজনেস অফিসারস-এর হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড অ্যাডমিনেস্ট্রেশন বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে চাকরি করেন। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ওয়াশিংটনে গ্লোবাল সার্ভিসে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ২০০৫ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দি ডেমোক্রেসি অ্যালায়েন্সে ডিরেক্টর অব ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাডমিনেস্ট্রেশনে চাকরি করেন। এরপর ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ওয়াশিংটনে গ্লেবাল রাইটসের সিওও হিসেবে চাকরি করেন। ২০১৩ সালের আগস্ট মাস থেকে তিনি আইসিডিডিআরবিতে চাকরি করছেন।
আন্দোলনকারীরা জানান, আইসিডিডিআরবির মতো একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যে ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন তা ইনগ্রিডের নেই। ফলে তিনি ফান্ড সংকটের দোহাই দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেটে লাথি মেরেছেন। উৎসব ভাতার টাকা পর্যন্ত দিচ্ছেন না।
তারা আরো জানান, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা স্বত্ত্বেও বেতনভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ তিনি প্রতিমাসে ২০ লাখ টাকা নিচ্ছেন তিনি। এছাড়া গুলশানে প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা বাড়ি ভাড়া, সার্বক্ষণিক গাড়ি ও ড্রাইভার এবং প্রতি বছর চার বার বিমানের বিজনেস ক্লাসে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া-আসার জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন। অথচ আইসিডিডিআরবির অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী এ পদটির কোনো অস্তিত্ব নেই। আইসিডিডিআরবির বোর্ড ম্যানেজমেন্ট অর্ডিন্যান্সকে পাশ কাটিয়ে মনগড়া বাইলজ বানিয়ে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে কর্মী মঙ্গল সংঘের নেতারা অভিযোগ করেন।
কর্মী মঙ্গল সংঘের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ভুল বুঝানো হচ্ছে। বর্ণবাদের কারণে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার ধোঁয়া তুলে দুর্নীতির বিষয়কে ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে।
তারা জানান, তারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় নিয়েছেন। সেখানে সিওওর বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরা হবে বলে জাগো নিউজকে জানান।
এমইউ/বিএ/এমএস