অস্বস্তিতে মায়া-কামরুল-শাহরিয়ার
বেশ কিছু রদবদল আসছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফকে মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দেয়ার গুঞ্জন ওঠায় বিষয়টি স্পষ্ট হলো।
এদিকে রদবদলের খবরে মন্ত্রিসভার বিতর্কিত সদস্যরা অস্বস্তি ও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। যেকোনো সময় মন্ত্রিসভা থেকে ছিটকে পড়তে পারেন তারা।
সূত্রগুলো বলছে, গত দেড় বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় কারো কারো কপালও পুড়তে পারে। বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর। বিগত দেড় বছরে যেসব মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর কারণে সরকার এবং দলকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে, লাগামহীন কথাবার্তায় বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়েছে বারবার এবং দক্ষতা ও যোগ্যতা বিবেচনায় যারা সফলতা দেখাতে পারেননি, তাদেরও কপাল পুড়তে পারে এবার।
একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ১২ জানুয়ারি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৯ মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দুইজন উপমন্ত্রী শপথগ্রহণ করেন। পরে আরেক দফা ২৫ ফেব্রুয়ারি এএইচ মাহমুদ আলী ও নজরুল ইসলাম যথাক্রমে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন। তারপর মন্ত্রিসভায় আর কোনো পরিবর্তন বা অন্তর্ভুক্তির ঘটনা ঘটেনি।
হজ, ধর্ম ও সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। দুর্নীতির একটি মামলায় সাজা থাকায় ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মন্ত্রিত্ব নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। আর গম আমদানি নিয়ে বেকায়দায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল। আর সম্প্রতি ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
১৪ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মায়াকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে ঢাকার বিশেষ আদালতের দেয়া ১৩ বছরের সাজা বহাল রয়েছে। এ সাজা বহাল থাকায় সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়ে গেছে বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন।
তাছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মন্ত্রী মায়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থীর সরাসরি বিরোধিতা করেন। সে কারণেও তার ওপর অসন্তুষ্ট খোদ প্রধানমন্ত্রী ও দল। এছাড়া গত বছর নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় তার জামাতা র্যাব কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদের জড়িত থাকার ঘটনায় মায়া প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েন। ওই সময় ঘাতক জামাতাকে রক্ষায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার দেন-দরবার সরকারের উচ্চ মহলকে ক্ষুব্ধ করে।
ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম কেলেংকারিতে বেকায়দায় পড়েছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। শুধু ব্রাজিল নয়, ফ্রান্স থেকে কেনা গমও পচা বলে জানা গেছে। এসব গম ক্রয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ গম কেলেংকারির পক্ষে সাফাই গাইতে গিয় বেকায়দায় পড়েছেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি এক এক সময় এক এক কথা বলছেন। পচা গমকে খাওয়ার উপযোগী বানানোর চেষ্টায় তিনি মহাব্যস্ত।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এমপি প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন এবং নির্বাচিত হয়েই প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দ্বিতীয় মেয়াদে পদোন্নতি পেয়ে তিনি পূর্ণ মন্ত্রী হন। কিন্তু সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কামরুলের ভূমিকা ছিল দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
দলের মধ্যে আলোচনা রয়েছে, মায়া-কামরুলের বিরোধিতার কারণেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগকে মরিয়া হতে হয়েছে। এসব কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। দলীয় পদের পাশাপাশি কামরুলের মন্ত্রিত্ব হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। ভারত সম্পর্কে একটি মন্তব্য করে তিনি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিরাগভাজন হন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে আলোচ্য বিষয় গণমাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপনের জন্যও সমালোচিত হন এ প্রতিমন্ত্রী।
এ ছাড়াও তার এপিএসের আর্থিক দুর্নীতির বিষয় প্রকাশিত হওয়ায় প্রতিমন্ত্রীর ওপর সরকারের প্রভাবশালীরা ক্ষুব্ধ। তার বিরুদ্ধে নিজ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা নির্যাতন এবং হয়রানির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করেছেন। এলাকার ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও হয়রানির বিষয়টিতে শাহরিয়ার আলমের ওপর ক্ষুব্ধ দলের হাইকমান্ড।
এসএ/বিএ/আরআই