একজন অমিত চাকমা
অধ্যাপক ড. অমিত চাকমা। কানাডার বিখ্যাত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিও’র প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অমিত চাকমা একজন বিশিষ্ট রাসায়নিক প্রকৌশলী। তার জন্ম ১৯৫৯ সালে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের এক চাকমা পরিবারে।
একজন খাটি বাঙালি হয়েও বিশ্বব্যাপী খ্যাতির শীর্ষে রয়েছেন। উজ্জ্বল করছেন বাংলাদেশের নাম। স্বীকৃতি পেয়েছেন একজন প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকৌশল এবং পেট্রলিয়াম বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক গবেষণার জন্য।
ড. অমিত চাকমা বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়েছেন রাসায়নিক প্রকৌশলী হয়ে। শনিবার তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সমাবর্তনে ড. অমিত চাকমাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রফেসর ড. অমিত চাকমার জন্ম ১৯৫৯ সালের ২৫ এপ্রিল এক চাকমা পরিবারে। জন্মস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলা শহরের পশ্চিম ট্রাইবেল আদমে।
১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে উদ্বাস্তুদের মধ্যে ছিল তাদের পরিবারও। তার বাবা প্রভাত কুমার চাকমা মৃত্যুবরণ করেন কয়েক বছর আগে। মাতা আলোরাণী চাকমা এখনও বেঁচে আছেন। তার নিকটাত্মীয় ও বনরূপা আদর্শ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্চনা তালুকদার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ব্যক্তিগত প্রোফাইল ও পারিবারিকসহ একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশি রাসায়নিক প্রকৌশলী ড. অমিত চাকমা কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিও’এর প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চ্যান্সেলর (উপাচার্য) নিযুক্ত হয়েছেন ২০০৯ সালে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ১০ম প্রেসিডেন্ট।
অমিত চাকমা ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করে আলজেরিয়া সরকারের বৃত্তি নিয়ে সেদেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় আলজেরিয়ান পেট্রলিয়াম ইনস্টিটিউটে পড়তে যান। সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন ‘রাসায়নিক প্রকৌশল’ বিভাগে। ১৯৭৭ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর কানাডায় চলে যান মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে এমএএস এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ।
এরপর ১৯৮৮-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগারির রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপনা করার পর ১৯৯৬ সালেই চলে যান ইউনিভার্সিটি অব রেগিনাতে। সেখানে নিযুক্ত হন রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে। ১৯৯৯-২০০১ সাল পর্যন্ত রেগিনার ভাইস প্রেসিডেন্ট রিসার্চ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে থাকার সময়ই অমিত চাকমা কানাডার ‘টপ ৪০ আন্ডার ৪০’ এ স্থান করে নেন।
এরপর ২০০১ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু’র অ্যাকাডেমিক ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং প্রভোস্টের দায়িত্ব নেন। অমিত চাকমার মূল গবেষণার বিষয় প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকৌশল এবং পেট্রলিয়াম বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
২০০৯ সালের ১ জুলাই প্রফেসর ড. অমিত চাকমা ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিও’র প্রেসিডেন্ট ও উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন। তার আগে এই দায়িত্বে ছিলেন পল ড্যাবেনপোর্ট। প্রেসিডেন্ট হিসেবে অমিতের লক্ষ্য ওয়েস্টার্ন অন্টারিওকে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের সারিতে নিয়ে আসা।
সুশীল প্রসাদ চাকমা/আরএআর/জেআইএম